ব্লাড প্রেশার মিলিমিটার মার্কারি (mmHg) ইউনিটে পরিমাপ করা হয় এবং দু’টি মানের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয় - সিস্টোলিক প্রেশার এবং ডায়াস্টোলিক প্রেশার। যার সংখ্যা বেশি, তাকে বলা হয় সিস্টোলিক চাপ এবং যার সংখ্যা কম, তাকে বলা হয় ডায়াস্টোলিক চাপ। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কোনও ব্যক্তির রক্তচাপ ১২০/৮০ mmHg হলে ১২০ হল সিস্টোলিক নম্বর এবং ৮০ হল ডায়াস্টোলিক নম্বর।
advertisement
আরও পড়ুন - বর্ষায় ফাটা গোড়ালির সমস্যা? দুধের ক্রিম লাগালে ফল মিলবে হাতে-নাতে
সাধারণত এক জন সুস্থ ব্যক্তির ক্ষেত্রে আদর্শ ব্লাড প্রেশার হল-- ১২০/৮০ মিলিমিটার মার্কারি। প্রধানত দুই ধরনের রক্তচাপ মানব দেহে শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি করে-- উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেশার এবং নিম্ন রক্তচাপ বা লো ব্লাড প্রেশার।
হাই ব্লাড প্রেশার: ব্লাড প্রেশার পরিমাপের সময় কোনও ব্যক্তির রক্তের উপর চাপ ১৪০/৯০ mmHg বা তার বেশি হওয়া মানে ওই ব্যক্তির উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে। ৮০ বছর বা তার বেশি বয়সিদের ক্ষেত্রে আবার ১৫০/৯০ মিলিমিটার মার্কারিকে উচ্চ রক্তচাপ বলা হয়।
লো ব্লাড প্রেশার: ধমনীতে রক্তচাপ ৯০/৬০ mmHg বা তার কম হলে বুঝতে হবে যে, নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে।
আরও পড়ুন - কীভাবে চিনবেন ভাল পেঁয়াজ, এইভাবে দীর্ঘদিন তাজা রাখবেন দেখে নিন
উল্লেখ্য, বয়সের উপর ভিত্তি করে উচ্চ রক্তচাপ এবং নিম্ন রক্তচাপের মাত্রা ভিন্ন হতে পারে।
বয়স অনুযায়ী স্বাভাবিক রক্তচাপ কত?
উপরেই বলা হয়েছে রক্তচাপ সাধারণত ২টি মানের মাধ্যেম পরিমাপ করা হয়। রক্ত ধমনীতে রক্ত প্রবাহিত হওয়ার জন্য হৃৎপিণ্ড যখন সংকুচিত হয়, তখন সর্বাধিক চাপ সৃষ্টি হয় এবং তাকে সিস্টোলিক প্রেশার বলে এবং হৃৎপিণ্ডের সংকোচন হওয়ার ঠিক আগের মুহূর্তে চাপ সব চেয়ে কম থাকে, তাকে ডায়াস্টোলিক প্রেশার বলে।
পুরুষ এবং মহিলা উভয়ের বয়স অনুযায়ী স্বাভাবিক রক্তচাপ কত হওয়া উচিত, তার একটি তালিকা নীচে দেওয়া হল। তালিকায় স্বাভাবিক সিস্টোলিক ব্লাড প্রেশার এবং ডায়াস্টোলিক ব্লাড প্রেশারও উল্লেখ করা হয়েছে।
পুরুষদের জন্য স্বাভাবিক রক্তচাপ | ||
বয়স | সিস্টোলিক ব্লাড প্রেশার (SBP) | ডায়াস্টোলিক ব্লাড প্রেশার (DBP) |
২১-২৫ | ১২০.৫ mmHg | ৭৮.৫ mmHg |
২৬-৩০ | ১১৯.৫ mmHg | ৭৬.৫ mmHg |
৩১-৩৫ | ১১৪.৫ mmHg | ৭৫.৫ mmHg |
৩৬-৪০ | ১২০.৫ mmHg | ৭৫.৫ mmHg |
৪১-৪৫ | ১১৫.৫ mmHg | ৭৮.৫ mmHg |
৪৬-৫০ | ১১৯.৫ mmHg | ৮০.৫ mmHg |
৫১-৫৫ | ১২৫.৫ mmHg | ৮০.৫ mmHg |
৫৬-৬০ | ১২৯.৫ mmHg | ৭৯.৫ mmHg |
৬১-৬৫ | ১৪৩.৫ mmHg | ৭৫.৫ mmHg |
মহিলাদের জন্য স্বাভাবিক রক্তচাপ | ||
বয়স | সিস্টোলিক ব্লাড প্রেশার (SBP) | ডায়াস্টোলিক ব্লাড প্রেশার (DBP) |
২১-২৫ | ১১৫.৫ mmHg | ৭০.৫ mmHg |
২৬-৩০ | ১১৩.৫ mmHg | ৭১.৫ mmHg |
৩১-৩৫ | ১১০.৫ mmHg | ৭২.৫ mmHg |
৩৬-৪০ | ১১২.৫ mmHg | ৭৪.৫ mmHg |
৪১-৪৫ | ১১৬.৫ mmHg | ৭৩.৫ mmHg |
৪৬-৫০ | ১২৪.০ mmHg | ৭৮.৫ mmHg |
৫১-৫৫ | ১২২.৫৫ mmHg | ৭৪.৫ mmHg |
৫৬-৬০ | ১৩২.৫ mmHg | ৭৮.৫ mmHg |
৬১-৬৫ | ১৩০.৫ mmHg | ৭৭.৫ mmHg |
রক্তচাপ ওঠা-নামার কারণে কী কী সমস্যা দেখা দিতে পারে?
ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে না-থাকলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে জটিলতা তৈরি হতে পারে। বিশেষ করে উচ্চ রক্তচাপ কখনও কখনও শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক প্রমাণিত হতে পারে।
- ব্লাড প্রেশার স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি থাকলে পেশি দুর্বল হয়ে যেতে পারে। দুর্বল হৃদযন্ত্র রক্ত পাম্প করতে বাধা পেলে মানুষের হৃদপিণ্ড কাজ করা বন্ধ করে দেবে, যার ফলে হার্ট অ্যাটাক (heart attack) পর্যন্ত হতে পারে। বেশি চাপের কারণে ধমনীর দেওয়াল সংকুচিত হয়, যা হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
- উচ্চ রক্তচাপের কারণে চোখের রেটিনায় রক্তক্ষরণ হতে পারে, যা মানুষের দৃষ্টিশক্তি পর্যন্ত কেড়ে (Vision Loss) নিতে পারে।
- হাই ব্লাড প্রেশার কিডনির চরম ক্ষতি করে।
- রক্তচাপ বাড়লে স্ট্রোক (Stroke) অবধি ঘটতে পারে।
- অন্য দিকে রক্ত চাপ কমে গেলেও তা শরীরের জন্য ক্ষতিকারক। নিম্ন রক্ত চাপের ফলে সব সময় বমি-বমি ভাব থাকে, শরীরে অস্থিরতা অনুভূত হয় এবং অনেকেই মাঝে মাঝে অজ্ঞান হয়ে যান।
- এ ছাড়া, লো ব্লাড প্রেশার নিয়মিত ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে, যার ফলে অন্যান্য শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।