ত্বক ফর্সাকারী ক্রিম সম্পর্কে জিরো মার্কারি ওয়ার্কিং গ্রুপের (ZMWG) একটি প্রতিবেদনে করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বিক্রি হওয়া অনেক ত্বক ফর্সাকারী ক্রিমে অবৈধ মাত্রায় ক্ষতিকারক পারদ রয়েছে। পরীক্ষিত ৩১ ক্রিমের মধ্যে ২৫টি ক্রিমে পারদের মাত্রা ১ পিপিএমের আইনি সীমার চেয়ে হাজার গুণ বেশি মিলেছে। ভারতীয় সংস্থা টক্সিক্স লিংক ভারত, পাকিস্তান এবং থাইল্যান্ডে তৈরি আটটি ক্রিম পরীক্ষা করেছে এবং তার মধ্যে সাতটিতে পারদের মাত্রা ৭,৩৩১ পিপিএম থেকে ২৭,৪৩১ পিপিএম পর্যন্ত দেখা গিয়েছে। অস্বাভাবিক ঘনত্বের এতে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।
advertisement
আরও পড়ুনঃ শীত এলেই শুকিয়ে যায় সাধের ফুলগাছ! খুব সহজ ৩ উপায় মানলে বছরভর ফুলের ভারে ভেঙে পড়বে ডাল, জানুন ট্রিক
প্রতিবেদন অনুসারে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় দেশগুলিতে এই ধরণের ক্রিম খুব কমই পাওয়া যায় কারণ সেখানে এই ক্রিমগুলির বিষয়ে কঠোর আইন রয়েছে। তবে, ভারতের মতো দেশে, এই বিপজ্জনক ক্রিমগুলি অনিয়ন্ত্রিত, অনলাইন বাজারে সহজেই বিক্রি হয়। ২০২৩ সাল থেকে, পারদযুক্ত ক্রিমের কারণে কিডনি ফেলিওরের বেশ কয়েকটি ঘটনা সামনে এসেছে। এই ক্রিমগুলি মহারাষ্ট্রের আকোলা জেলায় একই পরিবারের তিন মহিলার কিডনি ফেলিওরের কারণ হয়েছিল। এই ক্রিমগুলি কেবল কিডনির উপরই নয়, লিভার এবং স্নায়ুতন্ত্রের উপরও বিধ্বংসী প্রভাব ফেলতে পারে, যা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না।
নয়াদিল্লির ইন্দ্রপ্রস্থ অ্যাপোলো হাসপাতালের সিনিয়র চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ ডিএম মহাজন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, “মার্কারি ভারী ধাতু, যা ত্বক, লিভার এবং কিডনির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক। এটি ত্বকের ক্রিমগুলিতে ব্যবহৃত হয় কারণ এটি মেলানিনের উৎপাদনকে বাধা দেয়। মেলানিন হল সেই পদার্থ, যা ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মি থেকে রক্ষা করে এবং তার রঙ নির্ধারণ করে। প্রাথমিকভাবে, ফর্সা হওয়ার প্রভাব তাৎক্ষণিকভাবে দেখা যায়, তবে ধীরে ধীরে ক্ষতি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এটি ত্বকের প্রতিরক্ষামূলক স্তরকে দুর্বল করে দেয়, যার ফলে লালভাব, জ্বালা, চুলকানি, দাগ, চুল পড়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়।” যখন মানুষ এই ক্রিমগুলি ব্যবহার বন্ধ করে দেয়, তখন তাদের ত্বক আরও খারাপ দেখাতে শুরু করে।
আরও পড়ুনঃ হেয়ার ডাই, রাসায়নিক রঙ ছাড়ুন! ১ চামচ চিনিতেই কুচকুচে কালো সব চুল! শুধু জানুন ব্যবহার
মার্কারি কেবল ত্বকেরই নয়, পুরো শরীরেরই গুরুতর ক্ষতি করে। দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারের ফলে নেফ্রোটিক সিনড্রোম হতে পারে, যেখানে কিডনি প্রস্রাবের মাধ্যমে অতিরিক্ত প্রোটিন নির্গত করে। এটি ধীরে ধীরে কিডনি ফেলিওরের দিকে নিয়ে যেতে পারে। এটি মুখের আলসার, কাঁপুনি, মাথাব্যথা এবং ভ্যারিকোজ ভেনের মতো সমস্যাও সৃষ্টি করতে পারে। প্রয়োগ করা হলে, পারদ ত্বকের ছিদ্র ভেদ করে রক্তপ্রবাহের মাধ্যমে কিডনিতে পৌঁছয়। কিছু ক্ষেত্রে, এটি শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বা মুখে খাওয়ার মাধ্যমেও শরীরে প্রবেশ করতে পারে। মানুষের ত্বকের গড় আয়তন ১.৭৩ বর্গমিটার, যা এই বিষাক্ত পদার্থের একটি বিশাল পরিমাণ শরীরে প্রবেশ করতে দেয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) মতে, যদি কোনও ক্রিম বা ত্বকের যত্নের পণ্যে Calomel, Cinnabaris, Hydrargyri oxydum rubrum, Quicksilver, Mercury, অথবা Mercuric শব্দ থাকে, তাহলে এতে পারদ থাকে। এই ধরনের ক্রিমগুলির লেবেলে প্রায়শই সোনা, রূপা বা গয়না থেকে দূরে রাখার জন্য সতর্কতা থাকে, কারণ পারদ এগুলিকে ক্ষয় করতে পারে। এই ধরনের ক্রিম কেনা এড়িয়ে চলুন এবং ব্যবহারের আগে একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করুন। এছাড়াও, নামী ত্বকের যত্নের ক্রিম কিনুন এবং সেগুলি ব্যবহার করার সময় সতর্কতা অবলম্বন করুন।
