আমাদের সমাজে প্রায়শই ধৈর্য এবং ক্রমাগত কাজ করে চলার ক্ষমতাকে মহিমান্বিত করা হয়, ফলে লোকে চাপের প্রাথমিক লক্ষণগুলিকে উপেক্ষা করে, বিশ্রামকে প্রয়োজনের বদলে দুর্বলতার লক্ষণ হিসাবে দেখে। মানসিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত সামাজিক লজ্জার কারণে লোকেরা সঠিক সময়ে সাহায্য চায় না, যা বার্নআউটকে ক্রমাগত বাড়িয়ে তোলে।
এ হেন বার্নআউট প্রতিরোধের জন্য একটি সম্মিলিত এবং সক্রিয় পদ্ধতির প্রয়োজন। এখানে কিছু কৌশল রয়েছে যা প্রতিষ্ঠান এবং কর্মীকে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সহায়তা করতে পারে। বিষয়টি ব্যাখ্যা করছেন কলকাতার আনন্দপুর ফর্টিস হাসপাতালের কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট ডা. দেবশীলা বসু।
advertisement
আরও পড়ুনঃ ট্রাজিক মৃত্যু! তিনদিন বরফের মধ্যে… ফুলে উঠেছিল শরীর…. নববধূর মতো সাজিয়ে বিদায় দেওয়া হয় অভিনেত্রীকে
দৃঢ় যোগাযোগ দক্ষতা গড়ে তোলা: বর্তমান কাজের চাপ, ডেডলাইন বা কাজ শেষ করার সময়সীমা, বর্তমান পরিস্থিতিতে কাজের অগ্রগতি ইত্যাদি সহ কারও কাজের অবস্থা সম্পর্কে স্পষ্টভাবে জানানো গুরুত্বপূর্ণ। কর্মনিষ্ঠা ভাল কিন্তু নিজের সামর্থ্য এবং সীমাবদ্ধতা উল্লেখ করা কর্মক্ষেত্রে অতিরিক্ত প্রতিশ্রুতি এবং ওভারলোড আর তার থেকে জন্ম নেওয়া হতাশা প্রতিরোধে সহায়তা করে।
স্বাস্থ্যকর সীমানা স্থাপন: একজনের পেশাগত এবং ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে স্পষ্ট সীমানা স্থাপন মানসিক এবং শারীরিক ক্লান্তি রোধ করতে সাহায্য করে।
বিশ্রাম এবং ঘুমকে অগ্রাধিকার দেওয়া: পর্যাপ্ত ঘুম মনোযোগ দিতে এবং আরও শক্তি পেতে সাহায্য করে, যা উৎপাদনশীলতা এবং ভারসাম্য বৃদ্ধি করে। নিয়মিত ধ্যান, যোগব্যায়াম বা শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম মনকে শান্ত করতে এবং চাপের মাত্রা কমাতে সাহায্য করতে পারে।
সামাজিক বন্ধন বজায় রাখা: বন্ধুবান্ধব, পরিবার এবং সহকর্মীদের সঙ্গে স্বাস্থ্যকর মেলামেশা মানসিক সমর্থনের জায়গা প্রদান করে।
শারীরিক কার্যকলাপে অংশগ্রহণ: নিয়মিত ব্যায়াম মেজাজ ঠিক রাখে, শক্তির মাত্রা এবং চাপ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
প্রাথমিকভাবে বিশেষজ্ঞের সহায়তা খোঁজা: স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারের জন্য কাউন্সেলর, থেরাপিস্ট বা ডাক্তারদের কাছ থেকে থেরাপি নিতে উৎসাহিত করা উচিত।
উন্মুক্ত যোগাযোগ প্রচার: কর্মক্ষেত্র, স্কুল এবং সম্প্রদায়গুলিতে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনা করা উচিত এবং প্রয়োজনে সহায়ক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা উচিত।
চিকিৎসাগত দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে বার্নআউট প্রতিরোধের মধ্যে কেবল নিজের কাজের চাপ নিয়ন্ত্রণ করা নয়, বরং নিজের মানসিক সুস্থতা বৃদ্ধি করাও জড়িত। আরও সহানুভূতিশীল এবং সুস্থ সমাজ গঠনের জন্য আমাদের অতিরিক্ত পরিশ্রম থেকে দূরে সরে এসে ভারসাম্যের দিকে, নীরবতা থেকে সমস্যার কথা বলার দিকে এগিয়ে যেতে হবে।