শোনার পাশাপাশি হাতির কানের মূল কাজ হল দেহের তাপীয় ভারসাম্য রক্ষা করা। ইংরেজিতে যাকে বলে ‘থার্মোরেগুলেশন’। অর্থাৎ শরীর যে তাপমাত্রায় সবচেয়ে ভালভাবে কাজ করে, সেই তাপমাত্রাটা ধরে রাখা। হাতির কান এই কাজটিই করে। পাশাপাশি, এই কান অনেকটা ফ্যানের মতও কাজ করে।
হাতির বড় বড় কান শরীরকে ঠান্ডা রাখে। হাতির কানে রয়েছে হাজার হাজার রক্তনালী বা ব্লাড ভেসেল। এই রক্তনালীগুলি খুব সরু আর ত্বকের একদম কাছে থাকে। এই রক্তনালী হাতির শরীরের বাড়তি তাপ বার করে দিতে সাহায্য করে এবং শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখে। হাতি কান নাড়ালে রক্তসঞ্চালন বাড়ে ও শরীর শীতল হয়।
advertisement
হাতি এত বড় কান দিয়ে ১০ কিমি দূরের আওয়াজ-ও স্পষ্ট শুনতে পায়। হাতি অন্য হাতির সঙ্গে যোগাযোগ করে এক অদ্ভুত শব্দ করে। এই শব্দ মানুষের কানে ধরা পড়ে না। মজার বিষয় হল, হাতিরাও কিন্তু গরু বা ছাগলের মত সারাদিন ধরে ‘হাকডাক’ করতে থাকে! কিন্তু আমরা তা শুনতে পাই না। মানুষের কানে ২০ Hz থেকে ২০ kHz পর্যন্ত ফ্রিকুয়েন্সির শব্দ ধরা পড়ে। হাতির উৎপাদন করা আল্ট্রাসোনিক আওয়াজ আমরা শুনতে পাই না।
ইনফ্রাসোনিক সাউন্ড ওয়েভ-এর লম্বা ওয়েভলেনথ এবং প্রায় ৫ কিমি পর্যন্ত পৌঁছতে পারে। হাতির কানের ভিতরের অংশ খুব বড়, তাই ইনফ্রাসোনিক সাউন্ডওয়েভ ধরা পড়ে। মাঝেমধ্যেই দেখবেন, কান তুলে হাতি চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। এর মানে হল, হাতি অন্যান্য জন্তু ও প্রকৃতির আওয়াজ শুনছে। প্রায় ৩০০ কিমি দূরের ঝড়ের আওয়াজ-ও শুনতে পায় হাতি। বৃষ্টির সময় অল্প ফ্রিকোয়েন্সিতে যে শব্দ হয় তারা সেটা শুনতে পায় যা মানুষ টের পায় না।
অন্য স্তন্যপায়ীদের মতো হাতি কখনও ঘামে না। শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে হাতি ব্যবহার করে তার লোম এবং বিশাল কান দুটো। শরীরের লোম অন্য প্রাণীদের শরীরকে গরম রাখলেও হাতির ক্ষেত্রে কাজ করে উল্টো। এই লোমগুলো শরীরের ভেতরের গরমকে বাইরে বার করে দেয়।