HMPV কী?
ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের ওয়েবসাইট থেকে জানা যাচ্ছে যে, একটি ভাইরাস – ছোট্ট একটি জীবাণু মানুষের দেহের কোষ ব্যবহার করে নিজের একাধিক প্রতিলিপি তৈরি করে। যার জেরে তৈরি হয় হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস (HMPV)।
এটা একটা ভাইরাস, যার উপসর্গ অনেকটা সাধারণ ঠান্ডা লাগা আর সর্দির মতো। কখনও কখনও এটি আপার রেসপিরেটরি ইনফেকশন সৃষ্টি করে। কিন্তু কিছু কিছু সময়ে তা আবার নিউমোনিয়া, অ্যাজমা অথবা ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি)-এর মতো লোয়ার রেসপিরেটরি ইনফেকশনও সৃষ্টি করে।
advertisement
এটা সেই একই শ্রেণীর ভাইরাস, যা রেসপিরেটরি সিনসাইটিয়াল ভাইরাস (আরএসভি), হাম এবং মাম্পসের জন্য দায়ী। ৬ থেকে ১২ মাস বয়সীদের মধ্যে গুরুতর অসুস্থতা ডেকে আনতে পারে HMPV। কিন্তু ৬ মাসের কম বয়সীদের মধ্যে আরএসভি-র আশঙ্কা অনেকটাই বেশি। শীতের মরশুম এবং বসন্তকালের গোড়ার দিকে HMPV সংক্রমণ সাধারণ। ৫ বছর বয়স হওয়ার আগেই বেশিরভাগ মানুষের HMPV হতে পারে। এমনকী HMPV বারবার শরীরে থাবা বসাতে পারে। কিন্তু প্রথম সংক্রমণের পরে উপসর্গ সাধারণত মৃদু হয়।
HMPV কীভাবে ছড়িয়ে পড়ে?
HMPV রয়েছে, এমন রোগীর সংস্পর্শে এলে এই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে। শুধু তা-ই নয়, রোগীর ব্যবহার করা বা সংক্রমিত জিনিসে স্পর্শ করলেও এই রোগ ছড়াতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় যে, রোগীর কাশি, হাঁচি, রোগীর সঙ্গে করমর্দন, কোলাকুলি অথবা চুমু খাওয়া ইত্যাদি থেকে রোগ ছড়াতে পারে। এছাড়া কোনও সারফেস, ফোন, দরজার হাতল, কি-বোর্ড অথবা খেলনার সংস্পর্শে এলেও সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে।
উপসর্গ:
কাশি
জ্বর
নাক থেকে জল পড়া
গলা ব্যথা
শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণের সময় সাঁ সাঁ করে আওয়াজ
শ্বাসকষ্ট (dyspnea)
র্যাশ
এটা কি শুধুই সাধারণ ঠান্ডা লাগা?
অনেক ক্ষেত্রেই এই রোগের উপসর্গ সাধারণ ঠান্ডা লাগার মতো। কিন্তু কিছু মানুষ অতিরিক্ত রুগ্ন হয়ে পড়তে পারেন। HMPV-র সংস্পর্শে প্রথমবার এলে রোগী গুরুতর ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। সেই কারণে শিশুদের গুরুতর রোগের ঝুঁকি প্রবল। আর প্রথম সংক্রমণের জেরে ইমিউনিটি বেড়ে যায়। ফলে পরবর্তীকালে সংক্রমণের ক্ষেত্রে মৃদু এবং সাধারণ ঠান্ডা লাগার মতো উপসর্গ দেখা দেয়। তবে যাঁদের বয়স ৬৫ বছরের উর্ধ্বে, তাঁদের শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা হতে পারে। অথবা ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হওয়ার ফলে উপসর্গ আরও জটিল হয়ে ওঠে।
এটা কতটা সাধারণ?
ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক ওয়েবসাইট থেকে জানা গিয়েছে যে, গবেষকরা পরিসংখ্যান দিয়ে জানিয়েছেন যে, শিশুদের প্রায় ১০% থেকে ১২% শ্বাসযন্ত্রের অসুস্থতা HMPV দ্বারা সৃষ্ট হয়। বেশিরভাগ রোগই মৃদু। কিন্তু ৫ থেকে ১৬ শতাংশ শিশুরই নিউমোনিয়ার মতো লোয়ার রেসপিরেটরি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন হতে পারে।
কাদের ঝুঁকি বেশি?
১. যাঁদের বয়স ৫ বছরের কম (বিশেষ করে প্রি-ম্যাচিওর শিশু) অথবা ৬৫ বছর বয়সের উর্ধ্বে।
২. এইচআইভি, ক্যানসার অথবা অটোইমিউন ডিজঅর্ডারের জন্য যাঁদের ইমিউনিটি দুর্বল।
৩. যাঁদের অ্যাজমা অথবা সিওপিডি রয়েছে।
কখন ডাক্তার দেখানো উচিত?
১. হাই-ফিভার (১০৩ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি অথবা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস)
২. শ্বাসপ্রশ্বাসে কষ্ট
৩. ত্বক, ঠোঁট অথবা নখ নীল হয়ে যাওয়া (সায়ানোসিস)
৪. অন্যান্য শারীরিক জটিলতা
৫. কারও বা তাঁর সন্তানের যদি শ্বাসজনিত সংক্রমণ হয় এবং ঝুঁকি বেশি
রোগনির্ণয় এবং জটিলতা:
রোগীর উপসর্গ এবং স্বাস্থ্যের ইতিহাসের উপর ভিত্তি করে HMPV রোগ নির্ণয় করেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। তাঁরা রোগীর নাক এবং কান থেকে নমুনা সংগ্রহ করার জন্য সোয়াব ব্যবহার করতে পারেন। ভাইরাস এবং অন্যান্য সংক্রমণ রয়েছে কি না, তা সংগ্রহ করা নমুনা পরীক্ষা করে জানা যায়। এছাড়া স্বাস্থ্যকর্মীরা ব্রঙ্কোস্কোপি অথবা বুকের এক্স-রে করানো হয়। কখনও কখনও ব্রঙ্কিওলাইটিস, ব্রঙ্কাইটিস, নিউমোনিয়া, অ্যাজমা অথবা সিওপিডি এবং কানের সংক্রমণ হতে পারে HMPV-র জন্য।
আরও পড়ুনঃ সিরিয়াল বন্ধ হতেই ঋণে জর্জরিত! পথেই কাটাতে হয় বহু রাত! রিকশাচালকের থেকে খাবারও নেন নায়িকা
চিকিৎসা:
এক্ষেত্রে কোনও অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ নেই। গুরুতর জটিলতা দেখা দিলে অক্সিজেন থেরাপি, আইভি ফ্লুইড এবং কর্টিকোস্টেরয়েড দেওয়া হয় রোগীদের। মৃদু HMPV কয়েক দিন থেকে এক সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হয়। যদি অসুস্থতা বেশি হয়, তাহলে সুস্থ হতে সময় বেশি লাগবে। আবার কাশির মতো উপসর্গ থাকলে সারতে সময় লাগে।
HMPV প্রতিরোধ করার উপায়:
১. সাবান এবং জল দিয়ে নিজের হাত পরিষ্কার করতে হবে। যদি তা ব্যবহার করা না যায়, তাহলে অ্যালকোহল-ভিত্তিক হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা উচিত।
২. হাঁচি আর কাশির সময় কনুই দিয়ে নাক এবং মুখ ঢেকে রাখতে হবে। হাতের তালু দিয়ে নাক-মুখ ঢাকা চলবে না।
৩. অসুস্থ কিংবা ছোঁয়াচে রোগ থাকলে অন্যান্যদের কাছে যাওয়া চলবে না।
৪. অসুস্থ হলে মাস্ক পরার কথা বিবেচনা করতে হবে।
৫. হাত দিয়ে মুখ, চোখ, নাক স্পর্শ করা চলবে না।
৬. নিজের ব্যবহার করা খাবার কিংবা খাওয়ার বাসন অন্যদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া উচিত নয়।