এই ঠান্ডার মরশুমে প্রাণঘাতী সমস্যার হাত থেকে বাঁচার জন্য বেশ কিছু উপায় ভাগ করে নিলেন বিএম বিড়লা হার্ট হাসপাতালের কনসালট্যান্ট ইন্টারভেনশন কার্ডিওলজিস্ট ডা. জয় শৈবাল সোম এবং ডিরেক্টর অফ কার্ডিওলজি ডা. অঞ্জন সায়োটিয়া।
ঠান্ডার দিনে রক্তনালী সঙ্কুচিত হয়ে যায়। যার ফলে হৃদযন্ত্রের উপর চাপ বাড়তে থাকে। এমনটাই জানাচ্ছেন ডা. জয় শৈবাল সোম। তাঁর কথায়, হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে একটা চ্যালেঞ্জ তৈরি করে শীতের মরশুম।
advertisement
ঠান্ডায় রক্তবাহী নালী সঙ্কুচিত হয়ে যায়। ফলে হার্টের উপর চাপও বেড়ে যায়। তাই শীতের সময় হার্টকে সুস্থ রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা আবশ্যক।
ডা. সোমের মতে, এই অবস্থার সঙ্গে লড়াই করার জন্য যতটা সম্ভব গরম জামাকাপড় পরে থাকতে হবে। সেই সঙ্গে মরশুমি শাকসবজি, হোল গ্রেন, হৃদযন্ত্র জন্য স্বাস্থ্যকর ফ্যাট বেশি পরিমাণে পাতে রাখার জন্য জোরও দিয়েছেন তিনি। এছাড়া প্রসেজ়ড এবং অতিরিক্ত ফ্যাটযুক্ত অল্প পরিমাণে খাওয়া উচিত।
কোলেস্টেরলের মাত্রার উপর ঠান্ডার প্রভাব
ডা. অঞ্জন সায়োটিয়া জানান যে, ঠান্ডার মরশুম উল্লেখযোগ্য ভাবে কোলেস্টেরলের মাত্রার উপর প্রভাব পড়ে। আসলে এই সময় লো-ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন বা এলডিএল বা ব্যাড কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।
এর কারণ হল, শীতে দেহের মেটাবলিজমের হার কমে যায়। আর রক্তবাহী নালী সঙ্কুচিত হয়ে যায়। রক্ত প্রবাহ কমে। ফলে কোলেস্টেরল কার্যকর ভাবে প্রসেস করতে পারে না আমাদের দেহ। শীতের ডায়েট ও অতিরিক্ত ফ্যাটযুক্ত খাবার খাওয়া এবং শারীরিক কসরত কম করার দরুন সমস্যা আরও বৃদ্ধি পায়৷
ডা. সায়োটিয়া আরও জানিয়েছেন যে, কোলেস্টেরলের মাত্রা কার্যকর ভাবে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য খাদ্যতালিকায় প্রচুর পরিমাণে মরশুমি শাকসবজি রাখতে হবে। সেই সঙ্গে হোল গ্রেন, লিন প্রোটিন এবং বাদাম ও বীজজাতীয় খাবারের মতো স্বাস্থ্যকর ফ্যাট অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
তবে ট্রান্স ফ্যাট, রিফাইন্ড সুগার এবং ভাজাভুজি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। নিয়মিত এক্সারসাইজ করতে হবে। যোগাসন বা লাইট এরোবিকসের মতো হালকা ইন্ডোর ওয়ার্কআউটও কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
এছাড়া হাইড্রেটেড থাকতে হবে এবং শীতের দিনে নিজের লিপিড প্রোফাইলের দিকে নজর রাখা আবশ্যক।
শীতের মরশুমে হৃদরোগের ঝুঁকি:
গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে যে, শীতের দিনে হৃদরোগের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পায়। ডা. সায়োটিয়ার বক্তব্য, বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, অন্যান্য মরশুমের তুলনায় ঠান্ডার মরশুমে হৃদরোগের ঝুঁকি ৫৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে।
আসলে সঙ্কুচিত রক্তবাহী নালী এবং রক্তচাপ বৃদ্ধির পাশাপাশি শরীরকে উষ্ণ রাখার যে শারীরিক চাপ, তার জেরে বাড়তে থাকে এই সমস্ত ঝুঁকি। শীতের দিনে কাজ কিংবা শারীরিক সক্রিয়তা কমে যাওয়ার মতো জীবনযাত্রার পরিবর্তনের জেরে হার্টে অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায়। সেই সঙ্গে ক্যালোরিযুক্ত খাবার সেবন করা হলে বিপদ আরও বেড়ে যায়।
যাঁরা উচ্চ ঝুঁকির মুখে রয়েছেন, তাঁদের জন্য প্রতিরোধমূলক সতর্কতা
ডা. সোম এবং ডা. সায়োটিয়া দুজনেই এক্ষেত্রে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার উপর জোর দিয়েছেন। সেই সঙ্গে তাঁদের পরামর্শ, চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেতে হবে এবং ঝুঁকির মুখে থাকা রোগীদের রক্তচাপের দিকে নজর দিতে হবে, বিশেষ করে যাঁদের ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন এবং হার্টের রোগ রয়েছে তাঁদের। শীতকালীন সংক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য ফ্লু এবং নিউমোকক্কাল ভ্যাকসিন নেওয়া যেতে পারে।
উপসর্গ শনাক্ত করা এবং পদক্ষেপ গ্রহণ
ঠান্ডার মরশুমে অ্যাঞ্জিনা অথবা হার্ট অ্যাটাকের মতো গুরুতর জটিলতা বৃদ্ধি পেতে পারে। ডা. সায়োটিয়ার ব্যাখ্যা, শীতের মরশুমে ঠান্ডার সংস্পর্শে আসার ফলে রক্তবাহী নালী সঙ্কুচিত হয়। ব্লাড প্রেশার বা রক্তচাপ বাড়ে। হৃদযন্ত্রের পেশিতে অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায়। এর জন্য হার্টকে অতিরিক্ত কাজ করতে হয়। হার্ট অ্যাটাক এমনকী কার্ডিওভাস্কুলার রোগের ঝুঁকি বাড়ে।
বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, অতিরিক্ত ঘাম হওয়া এবং অবসন্ন ভাব দেখা দেওয়া হল এর প্রাথমিক উপসর্গ। ডা. সোম বলেন যে, গরম জামাকাপড় পরা, আচমকা আবহাওয়া পরিবর্তন এড়িয়ে চলা, হালকা এক্সারসাইজ করার মতো সাধারণ অভ্যাস গড়ে তুললে হার্টের জটিলতার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্য ভাবে কমিয়ে দেয়।