সম্প্রতি, ন্যাশনাল ক্যানসার রেজিস্ট্রি প্রোগ্রামের (NCRP) রিপোর্টে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে। তথ্য বলছে, ক্রমে বাড়ছে ক্যানসার। ২০২০ সালে ক্যানসারের সংখ্যা ছিল দেশে ১৩.৯ লক্ষ । যা ২০২৫ সালের মধ্যে ১৫.৭ লক্ষে পৌঁছাবে। অর্থাৎ পাঁচ বছরের মধ্যে প্রায় ২০ শতাংশ বাড়বে ক্যান্সার। আর এক্ষেত্রে সব চেয়ে বেশি প্রভাব ফেলবে ব্রেস্ট ক্যানসার। উল্লেখযোগ্য বিষয়টি হল, দেশের মেট্রোপলিটন শহর অর্থাৎ দিল্লি, চেন্নাই, বেঙ্গালুরুর মতো বড় বড় শহরগুলির মহিলাদের শরীরেই বেশি পরিমাণে দেখা যাচ্ছে এই রোগ।
advertisement
এ বিষয়ে বেঙ্গালুরুর ফর্টিস হাসপাতালের মেডিকেল অঙ্কোলজি অ্যান্ড হেমাটোলজি বিভাগের ডিরেক্টর ড. নীতি রায়জাদা (Niti Raizada) জানিয়েছেন, সাধারণত হেরেডিটি বা জেনেটিক সূত্রে ১০ শতাংশ পর্যন্ত ব্রেস ক্যান্সার দেখা যায়। তবে ৯০ শতাংশ ব্রেস্ট ক্যান্সারই লাইফস্টাইলের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এক্ষেত্রে যাঁরা খুব মোটা অর্থাৎ অতিরিক্ত মেদ বা স্থূলতা থাকে, যাঁরা ধূমপান করেন, যাঁরা প্রচুর পরিমাণে মদ খান, তাঁদের ব্রেস্ট ক্যানসারের সম্ভাবনা বেশি। এছাড়াও অনিয়ন্ত্রিত ডায়েট, হরমোনজনিত সমস্যা, দেরিতে ঋতুস্রাব শুরু হওয়ার মতো একাধিক কারণ থাকতে পারে। তবে দুর্বল রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ও বয়সও একটি বড় বিষয়। একটি উদাহরণ দিয়ে নীতি রায়জাদা জানিয়েছেন, যে সকল মহিলাদের মধ্যে ব্রেস্ট ক্যানসারের BRCA 1 ও BRCA 2 জেনেস বা জেনেটিক উপাদান থাকে, তাঁদের ক্ষেত্রে ব্রেস্ট ক্যান্সার হওয়ার প্রবণতা সব চেয়ে বেশি। তাই বংশগত সংক্রমণের বিষয়টিকে ছোট করে দেখলে চলবে না।
এ ক্ষেত্রে ভারতের একটি সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরা যেতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে বেশি বয়সের (৫৫-৬০) থেকে তুলনামূলক কম বয়সের (৪০-৪২) মহিলাদের আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি। তবে ব্রেস্ট ক্যান্সার সম্পর্কে যথাযথ সচেতনতা ও এর উপসর্গ সম্পর্কে সতর্ক থাকতে পারলে, পরিস্থিতির মোকাবিলা করা যাবে।
এই রোগের উপসর্গ নিয়ে সব সময়ে সচেতন থাকতে হবে মহিলাদের। এমনই জানাচ্ছেন চিকিৎসক নীতি রায়জাদা। তাঁর কথায়, কোনও রকম অস্বস্তি বা উপসর্গ অনুভূত হলে, তা এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। যদি স্তনের মধ্যে কোনও মাংসের ডেলা বা অতিরিক্তি মাংসপিণ্ড অনুভূত হয়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এক্ষেত্রে কোনও অঙ্কোলজিস্টের কাছে যেতে হবে। এই লাম্প বা মাংসপিণ্ডের ধরণটা বুঝতে হবে। কারণ সমস্ত মাংসপিণ্ডই ম্যালিগন্যান্ট হয় না। তবে এড়িয়ে গেলে চলবে না।
তাঁর কথায়, যদি শুরুতেই কোনও ক্যান্সারকে চিহ্নিত করা যায়, তাহলে ভালো ভাবে চিকিৎসা করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে দ্রুত রোগ সেরেও যাবে। টেস্টে একটু খরচ পড়লেও শুরুতেই বোঝা যাবে রোগীর ঠিক কী হয়েছে! প্রধানত চার ধরনের অর্থাৎ কোলোরেক্টাল (Colorectal), ব্রেস্ট (Breast), কার্ভিকাল (Cervical) ও ওরাল (Oral) ক্যানসার রয়েছে। তাই আগেভাগে সচেতন হতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। মাথায় রাখতে হবে সচেতনতা ও যথাযথ পদক্ষেপই মানুষকে এই রোগ থেকে মুক্তি দিতে পারে!