সেকেন্ড হ্যান্ড স্মোক আবার এনভায়রনমেন্টাল টোবাকো স্মোক বা ইটিএস নামেও পরিচিত। ধূমপায়ীরা ধূমপানের সময় যে ধোঁয়া ছাড়েন, সেটা এই তালিকায় পড়ে। এছাড়াও তামাকজাত দ্রব্য পোড়ানোর ফলেও তৈরি হয় ইটিএস। আবার সিগারেট বা অন্য তামাকজাত দ্রব্য থেকে নির্গত উপাদান যখন চুল, আসবাবপত্র, কার্পেট, জামাকাপড় এবং পাঁচিলে শোষিত হয়, তখন সেটা থার্ড হ্যান্ড স্মোক নামে পরিচিত হয়। সেকেন্ড এবং থার্ড হ্যান্ড স্মোকে প্রায় সাত হাজারেরও বেশি রাসায়নিক থাকে। যার মধ্যে অন্তত ৭০টি রাসায়নিক ক্যানসারের জন্য দায়ী। যাঁরা ধূমপান করেন না, তাঁরা যদি ধূমপায়ীদের সঙ্গে বসবাস করেন, তাহলে তাঁদের এই ধরনের রোগের ঝুঁকি কয়েক গুণ বেড়ে যায়। এমনকী করোনারি হার্টের রোগের ঝুঁকি ২৫-৩০% এবং ফুসফুসের ক্যানসারের ঝুঁকি ২০-৩০% বৃদ্ধি পায়।
advertisement
শিশুদের উপর সেকেন্ড ও থার্ড হ্যান্ড স্মোকের প্রভাব:
এই ধরনের ধোঁয়ার প্রভাবে শিশুদের শ্বাসজনিত সমস্যা বৃদ্ধি পায়। আসলে এই ধরনের ধোঁয়ার কারণে জেনেটিক মিউটেশন এবং অস্বাভাবিক ভাবে কোষ বৃদ্ধি পায়। যার ফলে লিম্ফোমা হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
লিউকেমিয়া হওয়ারও আশঙ্কা থাকে। যা রক্ত এবং বোন ম্যারোর উপর প্রভাব ফেলে। এই ধোঁয়ার রাসায়নিক কোষের কার্যকারিতা নষ্ট করে দেয়। এমনকী রক্তকোষের ডিএনএ নষ্ট করে দিতে পারে। কোষ অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পেলে লিউকেমিয়া হতে পারে।
সদ্যোজাতরা এই বিষাক্ত ধোঁয়ার সংস্পর্শে এলে সাডেন ইনফ্যান্ট ডেথ সিন্ড্রোম পর্যন্ত হতে পারে। কারণ শ্বাসপ্রশ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করা রাসায়নিক নিয়মিত শ্বাসপ্রশ্বাস এবং হৃদস্পন্দনে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
সেকেন্ড ও থার্ড হ্যান্ড স্মোকে উপস্থিত অগণিত কার্সিনোজেন শিশুদের ইমিউন সিস্টেমের উপর প্রভাব বিস্তার করে। এর থেকে ব্রেন টিউমার পর্যন্ত হতে পারে।
প্রাপ্তবয়স্কদের উপর সেকেন্ড ও থার্ড হ্যান্ড স্মোকের প্রভাব:
এর জেরে প্রাপ্তবয়স্কদের রক্তপ্রবাহে বিষাক্ত রাসায়নিক মেশে। যা কার্ডিওভাস্কুলার রোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
লিভারের কার্যকারিতাও নষ্ট করে দেয় এই ধরনের ধোঁয়া। সেকেন্ড ও থার্ড হ্যান্ড স্মোকের ক্ষতিকর রাসায়নিক লিভার ড্যামেজ, ইনফ্লেমেশন এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেস বৃদ্ধি করে।
এই ধরনের ধোঁয়া থাকা কার্সিনোজেন অ-ধূমপায়ীদের বিভিন্ন ধরনের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে। এর মধ্যে অন্যতম হল ফুসফুস, গলা, স্তনের ক্যানসার।
সেকেন্ড এবং থার্ড স্মোকের প্রভাবে অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়াও দেখা দেয় কখনও কখনও। এর জেরে জ্বালা-চুলকানি, হাঁচি, স্কিন র্যাশ এবং চোখ দিয়ে জল পড়ার মতো সমস্যা হতে পারে।
যাঁরা ধূমপান করেন না, তাঁদের সুরক্ষার্থে কী করণীয়?
কাজের জায়গা, বাড়ি ও জনবহুল স্থানে অ-ধূমপায়ীদের সুরক্ষার্থে কঠোর আইন প্রণয়ন করতে হবে।
সেকেন্ড আর থার্ড হ্যান্ড স্মোকের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে হবে।
বিভিন্ন জায়গায় যেমন – রেস্তোরাঁ, হোটেল, পার্ক, বার সর্বত্র স্মোক-ফ্রি পলিসি আনতে হবে। যাতে ধূমপান কমানো যায়।
ধূমপান পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা যাবে না হয়তো। বড়সড় খোলামেলা স্থানে ধূমপান করার নির্দেশ রাখতে হবে। যাতে সমস্যা থেকে মুক্তি মেলে।