সচেতনতা অভিযান, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা, নিয়মিত স্ক্রিনিং, সময়ে রোগ নির্ণয়, সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে প্রতি বছর বহু মহিলার জীবন রক্ষা করা সম্ভব। এই বিষয়ে কথা বলছেন বেঙ্গালুরুর অ্যাস্টার সিএমআই হাসপাতালের ডিপার্টমেন্ট অফ রেডিয়েশন অঙ্কোলজির চিকিৎসক ডা. পুষ্পা নাগা সি এইচ।
advertisement
প্রতিটি মানুষের মতো প্রতিটি ক্যানসারই আলাদা। ভারতীয় মহিলাদের মধ্যে সাধারণত যে ধরনের ক্যানসার দেখা যায়, তার মধ্যে অন্যতম হল - স্তন, সার্ভিক্স, ইউটেরাস, ওভারি, ওরাল ক্যাভিটি, ফুসফুস, কোলোরেক্টাল এবং ত্বকের ক্যানসার। আবার জিনগত, পারিপার্শ্বিক ও জীবনযাত্রাজনিত কারণে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে। এছাড়া ক্যানসারের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক ইতিহাস, বয়সবৃদ্ধি, ওবেসিটি, মদ্যপান ও ধূমপান, ডায়েট, প্রজননের ইতিহাস, হাইজিনের সমস্যা, কম বয়সে একাধিক সঙ্গীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন, ইমিউনিটি হ্রাস, রাসায়নিকের সংস্পর্শে আসা, এইচআইভি, এইচপিভি, হেপাটাইটিসের মতো ভাইরাসের কারণে হওয়া নির্দিষ্ট কিছু সংক্রমণও ক্যানসারের জন্য দায়ী হতে পারে।
আরও পড়ুন: গরমে বাইরে থেকে ফিরেই ঢক ঢক করে ঠান্ডা জল পান করছেন? মারাত্মক ক্ষতি করছেন নিজের
যৌনবাহিত ভাইরাসকে প্রতিরোধ করার জন্য প্রোফাইল্যাকটিক ভ্যাকসিনেশন ব্যবহার করে ক্যানসার রুখতে হবে। এর পাশাপাশি সুস্থ জীবনযাপন ও নিয়মিত শারীরিক এক্সারসাইজ করাও জরুরি। মদ্যপান ও ধূমপান এড়িয়ে চলতে হবে। সেই সঙ্গে সঠিক খাওয়াদাওয়া করতে হবে। ডায়েটে প্রচুর পরিমাণে ফল, শাকসবজি, হোল গ্রেন যোগ করতে হবে। তবে ভাজাভুজি, মশলাদার খাবার, রেড মিট, এড়িয়ে চলা উচিত।
আজকালকার দিনে কার্যকরী ভাবে প্রাথমিক পর্যায়েই ক্যানসার রোগ নির্ণয় করা সম্ভব। যা প্রায় ৮০ শতাংশ মৃত্যুর ঝুঁকি হ্রাস করে। চল্লিশের উর্ধ্বে যাঁদের বয়স, তাঁদের পারিবারিক ইতিহাস পর্যালোচনা করে বার্ষিক ম্যামোগ্রাফি, সার্ভিক্যাল প্যাপ-স্মিয়ার পরীক্ষা, জরায়ু ও ডিম্বাশয়ের পরীক্ষা, বার্ষিক কোলপোস্কোপি/সিগময়েডোস্কোপি প্রভৃতি করানো জরুরি।
ক্যানসারের প্রাথমিক পর্যায়ে যে উপসর্গগুলি দেখে সতর্ক হতে হবে, সেগুলি হল - যে কোনও রকম ফোলা, লাম্প অথবা স্তনে অস্বাভাবিক কোনও বদল, অস্বাভাবিক ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ অথবা স্পটিং/ব্লিডিং, ক্রনিক নন-হিলিং আলসার, ত্বকের পরিবর্তন, ক্রনিক কাশি, স্বর পরিবর্তন, গিলতে সমস্যা, পেট অথবা পেলভিক ব্যথা, বারবার পেট ফোলা, অস্বাভাবিক ওজন হ্রাস, খিদের অভাব এবং মলত্যাগের অভ্যেসে বদল ইত্যাদি।
তবে বিভিন্ন রকম ক্যানসারের চিকিৎসা আলাদা হয়ে থাকে। সার্জারি, রেডিয়েশন থেরাপি, কেমোথেরাপি, হরমোন থেরাপি অথবা ইমিউনোথেরাপির মাধ্যমে এর চিকিৎসা করা হয়। ক্যানসার প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে তা সারানো সম্ভব। এমনকী অ্যাডভান্সড স্টেজেও কিন্তু তা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। আসলে বর্তমানে কার্যকরী চিকিৎসা ব্যবস্থার কারণে ক্যানসার রোগীরা রোগ মুক্ত হয়ে জীবন কাটাতে পারছেন।