এবার আসা যাক অর্থোপেডিক সার্জারির কথায়। এই ক্ষেত্রে আবার রোবোটিক যন্ত্রপাতি যেন বিপ্লব ঘটিয়ে দিয়েছে। বিশেষ করে হাঁটু প্রতিস্থাপন বা নি-রিপ্লেসমেন্ট অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে। টোটাল নি-রিপ্লেসমেন্ট বা টিকেআর হল একটি সার্জিক্যাল পদ্ধতি। যেখানে ক্ষয়ে যাওয়া হাঁটুর জয়েন্টের জায়গায় কৃত্রিম জয়েন্ট প্রতিস্থাপন করা হয়। আর এই কৃত্রিম জয়েন্ট আবার ধাতু এবং আল্ট্রা-হাই মলিকিউলার ওয়েট পলিথিন দিয়ে তৈরি করা হয়ে থাকে।
advertisement
আরও পড়ুন: রান্না-ফুল-ভালবাসা-বিয়ে এমনকী কম্পিউটার দেখেও ভয় পান অনেকে, রীতিমতো ‘ফোবিয়া’! বিশ্বাস করা কঠিন
যেসব রোগীরা অস্টিওআর্থ্রাইটিসে ভোগেন, তাঁদের ক্ষেত্রে হাঁটু প্রতিস্থাপন খুবই সাধারণ ঘটনা। আর ভারতে এই রোগের হার সবথেকে বেশি। দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২২-৩৯ শতাংশ মানুষ এই সমস্যায় জেরবার। তবে শুধু কলকাতাতেই অস্টিওআর্থ্রাইটিসের সমস্যায় জেরবার রোগীর হার প্রায় ৩২.৭ শতাংশ।
বেল ভিউ ক্লিনিকের কনসালট্যান্ট অর্থোপেডিক্স এবং জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট সার্জন ডা. সন্তোষ কুমার বলেন, এই চিকিৎসার প্রথাগত কৌশল বেশ কার্যকরী। কিন্তু এই সার্জারির ক্ষেত্রে রোবট আনার ফলে তা ধারাবাহিক ভাবে আরও ভাল ফলাফল প্রদান করছে। মেডিকেল প্রযুক্তির উন্নতির ফলে রোবোটিক্স এবং নির্ভুল সরঞ্জামেরও উন্নতি হয়েছে। তার ফলে গতানুগতিক সার্জারির ফলাফলেরও অনেক বিকাশ ঘটেছে।
ক্ষয় হয়ে যাওয়া জয়েন্টের হাই-রেজোলিউশন ম্যাগনেটিক রেজোনেন্স ইমেজিং (এমআরআই) এবং কম্পিউটেড টোমোগ্রাফি স্ক্যান (সিটি স্ক্যান) করা হয়। যার ফলে অস্ত্রোপচারের আগে থেকেই রোগীর জন্য উপযুক্ত পরিকল্পনা ছকে নিতে পারেন চিকিৎসকেরা। এর ফলে প্রতিস্থাপনের অস্ত্রোপচারের সময় বেশি কাটাছেঁড়াও করতে হয় না।
আরও পড়ুন: ছায়া দেখলে ভয় পান? মনে হয় মরে যাবেন? অনেকেই এই মারাত্মক রোগে ভুগছেন! জানুন
রোবোটিক অ্যাসিস্টেড নি সার্জারি (আরএকেএস)-র ফলে সঠিক ভাবে জয়েন্ট প্রতিস্থাপন সম্ভব। কলাকোষের ক্ষতির আশঙ্কাও হ্রাস করা যায়। সেই সঙ্গে রক্তপাতও বিশেষ হয় না। আর সবথেকে বড় কথা হল, এর ফলে রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন। এমনকী কমে অস্ত্রোপচার-পরবর্তী জটিলতার আশঙ্কাও। রোবোটিক-অ্যাসিস্টেড অর্থোপেডিক সার্জারির ফলে সাফল্যের হার এখন বেড়ে প্রায় ৯৮ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে।
প্রতি বছর আমাদের দেশে প্রায় আড়াই লক্ষেরও বেশি মানুষ টোটাল নি-রিপ্লেসমেন্ট সার্জারি করায়। পাঁচ বছর আগে পর্যন্তও পরিসংখ্যানটা এমন ছিল না। বর্তমানে তা প্রায় আড়াই গুণ বেড়ে গিয়েছে। রবীন্দ্রনাথ টেগোর ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ কার্ডিয়াক সায়েন্সের এইচওডি, সিনিয়র কনসালট্য়ান্ট ডা. সূর্য উদয় সিং জানান, প্রযুক্তির উন্নতি এবং রোবোটিক্স টোটাল নি-রিপ্লেসমেন্ট সার্জারির ক্ষেত্রে রীতিমতো বিপ্লব ঘটিয়ে দিয়েছে। সকল রোগীর শারীরিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে পার্সোনালাইজড প্ল্যানিং করা হয়। সেখানে রোবোটিক্স অ্যাসিস্ট্যান্স সার্জনদের অনেক সাহায্য করেছে। আর টিকেআর-এর চূড়ান্ত সাফল্য অর্থোপেডিক সার্জনের দক্ষতার উপর নির্ভর করে। অভিজ্ঞতার সঙ্গে প্রযুক্তির সংমিশ্রণ করে আমরা দেখেছি যে, অস্ত্রোপচার-পরবর্তী জটিলতা অনেকটাই কম। রোগীও দ্রুত সুস্থ হয়েছেন। জয়েন্টের স্থিতিশীলতাতেও উন্নতি দেখা গিয়েছে। আর হাঁটুর কার্যকারিতাও অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে।