কলকাতা: ক্যানসারের নাম শুনলে রীতিমতো বুক কেঁপে ওঠে। মনে হয়, ক্যানসার হওয়া মানেই জীবন শেষ! ক্যানসার কিন্তু প্রতিরোধ করা যায়। কী ভাবে? আসলে ভারতে ক্যানসারের কারণে মৃত্যুহার তো অনেকটাই বেশি!
ন্যাশনাল ক্যানসার রেজিস্ট্রি প্রোগ্রাম অনুযায়ী, ভারতে সমস্ত মৃত্যুর ৬৩ শতাংশের জন্য দায়ী এনসিডি। আর এর মূল কারণ হিসেবে দায়ী ক্যানসার। পরিসংখ্যান বলছে, আমাদের দেশে প্রতিদিন অন্তত ১৩০০ ভারতীয় এই রোগের বলি হন। যেটা খুবই উদ্বেগজনক। তবে আইসিএমআর-এর ভবিষ্যদ্বাণী, আগামী ৫ বছরে হস্তক্ষেপ না-করা হলে ভারতে আরও ১২ শতাংশ ক্যানসার রোগীর সংখ্যা বাড়বে। ফলে একটা সময়ে আমাদের দেশ ক্যানসারের রাজধানী হয়ে উঠবে। এই বিষয়টা মাথায় রেখেই ক্যানসার প্রতিরোধের দিকটার উপর আলোকপাত করা উচিত। এমনটাই মত কারকিনোস হেলথকেয়ারের ডিরেক্টর ইস্ট ডা. আখতার জাওয়াড়ের।
advertisement
আরও পড়ুন- অধিকাংশ ভারতীয়েরই ঘুম উড়িয়েছে ছোট্ট একটা প্রাণী! বিশ্ব ঘুম দিবসে এমনটাই বলছে এই সমীক্ষা
ভারতে ক্যানসার কেন বাড়ছে?
পুরুষদের ক্ষেত্রে ৫টি সাধারণ ক্যানসার হল ফুসফুস, মুখ, প্রস্টেট, জিহ্বা এবং পেটের ক্যানসার। আবার মহিলাদের ক্ষেত্রে সবথেকে সাধারণ ক্যানসার হল স্তন, জরায়ু, ডিম্বাশয়, ফুসফুসের ক্যানসার। ভারতে ক্যানসারের অন্যতম প্রধান কারণ হল তামাকজাত দ্রব্য, সুপারি, পান, ভাইরাসঘটিত সংক্রমণ, বায়ু দূষণ, ধুলো এবং অ্যালকোহল সেবন। এর অর্থ হল, লাইফস্টাইল এবং বাতাসের মানের জন্যই ভারতে ক্যানসার বাড়ছে। সব থেকে বড় বিষয় হল, আমাদের দেশে ৩০ শতাংশ ক্ষেত্রেই ক্যানসারের জন্য দায়ী তামাকজাত দ্রব্যের সেবন।
ক্যানসারের কারণে মৃত্যুর হার বাড়ছে কেন?
সাধারণত ক্যানসারের ৪টি পর্যায় রয়েছে – ইন সিটু, আর্লি স্টেজ, লোকোরিজিওনাল এবং ডিসট্যান্ট মেটাস্টেসিস। ভারতে আবার ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রেই ক্যানসার ধরা পড়ে একেবারে শেষের দুই পর্যায়ে গিয়ে। এর দুটি অর্থ রয়েছে: মৃত্যুর হার বেশি এবং শেষ পর্যায়ের ব্যয়বহুল চিকিৎসা। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ ধরা পড়লে মৃত্যুর হার অনেকটাই কমিয়ে ফেলা সম্ভব। দেরিতে রোগ ধরা পড়ার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম হল, ক্যানসার সংক্রান্ত কিছু ভুল ধারণার জন্য নিয়মিত স্ক্রিনিংয়ের অভাব (রোগ গোপন করার প্রবণতা), বিষয়গুলি অসহনীয় হয়ে ওঠার পরেই ডাক্তারের কাছে যাওয়ার অভ্যেস, উন্নত মানের চিকিৎসার জন্য তেমন ক্যানসার সেন্টার না-থাকা।
কীভাবে ক্যানসার প্রতিরোধ করা যাবে?
পরিসংখ্যান বলছে, ক্যানসারে মৃত্যুর ২৫-৩০% ক্ষেত্রে দায়ী তামাক, ৩০-৩৫% ক্ষেত্রে দায়ী ডায়েট এবং প্রায় ১৫-২০% ক্ষেত্রে দায়ী সংক্রমণ। এ-ছাড়াও রয়েছে রেডিয়েশন, স্ট্রেস, শারীরিক সক্রিয়তা, পরিবেশ দূষণ ইত্যাদি। ফলে খারাপ অভ্যেস ও জীবনযাত্রার ধরন বদলে ফেলতে হবে।
এই পরিস্থিতি সামলানোর উপায় কী?
ভারতে শুধু হাসপাতাল গড়লেই যে মৃত্যু হার কমানো সম্ভব, তেমনটা নয়। এর সঙ্গে জরুরি হল মানুষের মধ্যে ক্যানসার নিয়ে সচেতনতা গড়ে তোলা। এমনকী ভাঙতে হবে ক্যানসার নিয়ে থাকা মনের ভুল ধারণাও। এ-ছাড়া নিয়মিত হেলথ চেক-আপ করানোর বিষয়টাকেও স্বাভাবিক করে তুলতে হবে। যাতে রোগীরা সহজেই নিজেদের উপসর্গ, অবস্থা ইত্যাদি বিষয়ে ডাক্তারের সঙ্গে খোলাখুলি কথা বলতে পারেন।
আরও পড়ুন-একুশের কৌশল তেইশে, রাজ্যে বুথ-সংগঠন মজবুত করাই লক্ষ্য বিজেপির
এইচপিভি পরীক্ষা করানো হয়েছে?
এইচপিভি পরীক্ষা হল সার্ভিক্যাল ক্যানসারের স্ক্রিনিং টেস্ট। তবে ক্যানসার রয়েছে কি না, এই পরীক্ষায় সেটা জানা যায় না। বরং সার্ভিক্যাল ক্যানসারের জন্য দায়ী এইচপিভি ভাইরাসের উপস্থিতি জানা যায়। আসলে কয়েক ধরনের এইচপিভি সার্ভিক্যাল ক্যানসারের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। সেই ধরনটা জানতে পারলেই সঠিক চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব।