মায়ের গর্ভে থাকা অবস্থায় রক্তের কারণে এক শিশুর প্রাণসংশয় দেখা দিয়েছিল। সেই শিশুটির হাত-পা পেট ফুলে যাচ্ছিল। তাই প্রসব করিয়েও সেই শিশুটিকে হয় তো বাঁচানো সম্ভব হত না। এর জন্য সেই শিশুটিকে বাঁচাতে হলে একমাত্র মায়ের গর্ভের ভেতরেই তার রক্ত বদলের প্রয়োজন ছিল। এর ফলে গর্ভস্থ সেই শিশুর রক্ত বদলের বেনজির চিকিৎসা শুরু হয়েছে কলকাতার অ্যাপোলো হাসপাতালে। এর পাশাপাশি গর্ভবতী মায়ের চিকিৎসাও চলছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন যে পূর্ব ভারতে এমন চিকিৎসার কোনও নজির নেই। সে কারণে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের অনুমতি নেওয়া হয়েছে। আগামী দুই থেকে আড়াই মাস ধরে ধীরে ধীরে চলবে গর্ভস্থ সেই শিশুর রক্ত বদলের প্রক্রিয়া(Healthy baby born after multiple blood transfusions inside womb)।
advertisement
আরও পড়ুন- ঠান্ডা না গরম, কোন জলে স্নান করা উচিৎ ? জেনে নিন এর ফলে কী কী উপকার পাবেন
জানা গিয়েছে যে, সেই মহিলা ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। তাঁর আগের একটি সন্তান রয়েছে, তার বয়স ৩ বছর। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন যে সেই মহিলার রক্তের গ্রুপ এ নেগেটিভ (A-) হলেও তাঁর স্বামীর রক্তের গ্রুপ বি পজিটিভ (B+)। এই ক্ষেত্রে সেই দম্পতির সন্তানদের রক্তের গ্রুপ নেগেটিভ বা পজিটিভ দু'টোর যে কোনও একটা হতে পারে। শিশু গর্ভে থাকাকালীন নাড়ির মাধ্যমে মায়ের শরীর থেকে শিশুর দেহে রক্ত সঞ্চারিত হয়। একই ভাবে মায়ের শরীরে কয়েক ফোঁটা রক্তও গর্ভস্থ শিশুর শরীরে থেকে যায়। চিকিৎসকদের মতে যে হেতু মায়ের রক্ত নেগেটিভ, তাই সন্তানের রক্ত যদি পজিটিভ হয় সে ক্ষেত্রে মায়ের শরীরে তা গেলে বহিরাগত হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। এর ফলে সেটা থেকে বাঁচতে তৈরি হয় অ্যান্টিবডি। এখন দ্বিতীয় সন্তানের সময়ে মহিলার শরীরের সেই অ্যান্টিবডিই গর্ভস্থ শিশুর জন্য মারাত্মক হয়ে উঠেছে। কারণ ঐ অ্যান্টিবডি গর্ভস্থ শিশুর রক্তকে শত্রু হিসাবে চিহ্নিত করেছে। ঠিক এই কারনেই প্রাণসংশয় দেখা দিয়েছে সেই সন্তানের। তাই চিকিৎসকদের মতে গর্ভস্থ সেই শিশুকে বাঁচানোর একমাত্র রাস্তা রক্ত বদলে দেওয়া।
আরও পড়ুন- সুস্থ হয়ে উঠছেন ব্রেস্ট ক্যানসারের অ্যাডভান্সড স্টেজের রোগীরা, পথ দেখাচ্ছে কলকাতা
অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশ্যালিটি হাসপাতালের (Apollo Multispeciality Hospital) এর চিকিৎসক ড. মল্লিনাথ মুখোপাধ্যায় (Dr Mallinath Mukherjee) জানিয়েছেন, "সেই মহিলার প্রথম সন্তান জন্মানোর সময় যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছিল, সেই অ্যান্টিবডিই দ্বিতীয় সন্তানের ক্ষেত্রে মারণ হয়ে উঠেছে। নষ্ট করে দিচ্ছে শিশুর রক্তের স্বাভাবিক কোষগুলোকে। মায়ের জন্য যা ভালো ছিল, সেটাই গর্ভস্থ শিশুর পক্ষে হয়ে উঠেছে ক্ষতিকর"।