ওই পোস্টে দাবি করা হয়, চা বানানোর ১৫–২০ মিনিটের মধ্যেই তা খেয়ে নেওয়া উচিত। তার পরে চা ফেলে দেওয়া ভালো, কারণ পুরনো চা ব্যাকটেরিয়ার আঁতুড়ঘরে পরিণত হয়। পোস্টে আরও বলা হয়, এই পুরনো চা মূলত হজমতন্ত্রে আঘাত হানে, বিশেষ করে লিভারে। এমনকি জাপানে ২৪ ঘণ্টা রেখে দেওয়া চা-কে ‘সাপের কামড়ের থেকেও বেশি বিপজ্জনক’ বলা হয়, আর চিনে একে ‘বিষ’-এর সঙ্গে তুলনা করা হয়—এমন দাবিও করা হয়েছে।
advertisement
এই কড়া ভাষার দাবি ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়ায়। অনেকেই নিজেদের দৈনন্দিন অভ্যাস নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেন। একজন ব্যবহারকারী জানতে চান, বাড়িতে বানানো আদা চা যদি কয়েকদিন ধরে গরম করে খাওয়া হয়, তা কতটা নিরাপদ?
এই ধরনের ভাইরাল দাবির প্রেক্ষিতে, বিষয়টি সহজ করে ব্যাখ্যা করা হল। বিশেষজ্ঞদের মতে, দুধ-চা সঙ্গে সঙ্গে বিষাক্ত হয়ে যায় না। তবে ৪০ থেকে ১৪০ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৪–৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) তাপমাত্রার মধ্যে চা দীর্ঘ সময় থাকলে তা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। এই তাপমাত্রাকে ‘ডেঞ্জার জোন’ বলা হয়, যেখানে ব্যাকটেরিয়া দ্রুত বংশবিস্তার করে। দুধ দ্রুত নষ্ট হয়, তাই ঘরের তাপমাত্রায় রাখা দুধ-চা দু’ঘণ্টার বেশি রাখা উচিত নয়। ধীরে ধীরে খেলে সর্বোচ্চ চার ঘণ্টা পর্যন্ত রাখা যেতে পারে। তবে বায়ুরোধী পাত্রে ফ্রিজে ৪০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের নীচে রাখলে দুধ-চা এক থেকে তিন দিন পর্যন্ত নিরাপদ থাকতে পারে।
বারবার দুধ-চা গরম করলে সব ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাক নষ্ট হয় না। অতিরিক্ত ফুটালে ‘অ্যাডভান্সড গ্লাইকেশন এন্ড প্রোডাক্টস’ বা প্রদাহজনক যৌগ তৈরি হতে পারে। নিয়মিত গরম করা দুধ-চা খেলে অ্যাসিডিটি, ক্যাফেইনের কারণে শরীরের জলশূন্যতা, আয়রন শোষণে বাধা এবং ওজন বাড়ার ঝুঁকিও থাকে।
দুধ ছাড়া আদা চা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি নিরাপদ। দ্রুত ফ্রিজে রাখলে আদা চা তিন থেকে পাঁচ দিন পর্যন্ত ভালো থাকে, কখনও কখনও এক সপ্তাহও চলতে পারে, যদিও স্বাদ ও কার্যকারিতা ধীরে ধীরে কমে। প্রতিবার ভালো করে ফুটিয়ে নিলে কয়েকদিন ধরে আদা চা গরম করে খাওয়া সাধারণত নিরাপদ। তবে চা ঘোলা হয়ে গেলে, দুর্গন্ধ বেরোলে বা ছত্রাক দেখা গেলে তা ফেলে দেওয়া উচিত। দৈনিক চার থেকে পাঁচ গ্রামের বেশি আদা খেলে বুকজ্বালার সমস্যা হতে পারে।
ঘরে বানানো আদা চা প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে, হজমে সহায়ক এবং বমিভাব কমায়। তবে ফ্রিজে রাখার ৭২ ঘণ্টা পর থেকে এর কার্যকারিতা কমতে শুরু করে। দুই বছরের কম বয়সি শিশুদের ক্ষেত্রে আদা চা দেওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
চা নিরাপদে রাখতে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ—প্রতিদিন নতুন করে চা বানানোই সবচেয়ে ভালো। ফ্রিজে রাখলেও দুধ-চা তিন দিনের মধ্যে এবং আদা চা পাঁচ দিনের মধ্যে খেয়ে নেওয়া উচিত। খাওয়ার আগে টক গন্ধ বা ঘোলাভাব আছে কি না খেয়াল করতে হবে এবং অবশ্যই ভালো করে ফুটিয়ে নিতে হবে। দুধ-চায়ের তুলনায় ব্ল্যাক টি সাধারণত বেশি নিরাপদ।
আয়ুর্বেদের মতে, রেখে দেওয়া বা বারবার গরম করা দুধ-চা শরীরে ‘আম’ বা বিষাক্ত উপাদান তৈরি করে, যা হজমের অগ্নিকে দুর্বল করে। বারবার ফুটালে ট্যানিনের ঘনত্ব বাড়ে, প্রোটিনের গুণ নষ্ট হয় এবং চা শরীরের জন্য ক্ষতিকর হয়ে ওঠে। এতে পিত্ত বৃদ্ধি পায়, অ্যাসিডিটি ও প্রদাহ বাড়তে পারে। আয়ুর্বেদ অনুযায়ী, তাজা আদা চা কফ ও বাতের ভারসাম্য রক্ষায় সহায়ক হলেও, ভেষজ চা-ও দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে খেয়ে নেওয়াই শ্রেয়।
আয়ুর্বেদের মূল পরামর্শ—প্রতিদিন তাজা চা তৈরি করুন, দুই থেকে পাঁচ মিনিটের বেশি চা ফুটাবেন না এবং বেঁচে যাওয়া চা ফেলে দিন। দুধের পরিবর্তে উদ্ভিজ্জ বিকল্প ব্যবহার করা যেতে পারে। তাজা চা হজমশক্তি ও কর্মক্ষমতা বাড়ায়, আর বাসি চা শরীরের সামগ্রিক সুস্থতায় ব্যাঘাত ঘটায়।
