তাঁর মতে, গন্ধক, লোহাচুর ও ক্যাডমিয়ামের মতো রাসায়নিক পদার্থ পুড়লে বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। এই ধূলিকণা এবং বিষাক্ত গ্যাস একত্রে শ্বাসযন্ত্রে প্রবেশ করলে হতে পারে মারাত্মক ফুসফুসের সমস্যা।
ড. দত্ত বলেন, “আতসবাজির ধোঁয়ায় প্রচুর সালফার ডাই-অক্সাইড ও নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড থাকে। এই গ্যাস ফুসফুসে গেলে শ্বাসনালিতে প্রদাহ তৈরি করে, দেখা দিতে পারে শুকনো কাশি, শ্বাসকষ্ট ও দীর্ঘস্থায়ী ব্রঙ্কাইটিস।”
advertisement
হাঁপানি রোগীদের জন্য এই দূষণ একেবারেই বিপজ্জনক। তাঁর সতর্কবার্তা—“যাঁরা হাঁপানি বা ফুসফুসজনিত রোগে ভুগছেন, তাঁদের অবস্থাই আতসবাজির ধোঁয়ায় প্রাণান্তকর হতে পারে।”
শুধু তাই নয়, হৃদরোগে আক্রান্তদের ক্ষেত্রেও আতসবাজির ধোঁয়া অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। বিষাক্ত গ্যাস রক্তে মিশে গেলে রক্তচাপ বেড়ে যায়, হৃদযন্ত্রের উপর বাড়ে চাপ।
উৎসবের রাত আতসবাজি, সেলফিতে মজে…ট্রেনের হর্ন শুনতে পেল না কেউ! পিষে গেল ৬১ প্রাণ!
কালীপুজোয় বিপদসীমা পেরোল কলকাতার দূষণ! সবচেয়ে সংকটে কোন এলাকা?…দেখে নিন AQI রিপোর্ট
শব্দবাজির প্রভাবও ভয়ঙ্কর
শব্দবাজির প্রভাব কেবল কানেই সীমাবদ্ধ নয়, পুরো স্নায়ুতন্ত্রের উপর তার প্রভাব পড়ে। ড. দত্তের কথায়, “উচ্চ ডেসিবেলের শব্দ কানের অভ্যন্তরীণ কোষে স্থায়ী ক্ষতি ঘটাতে পারে। সাময়িকভাবে শ্রবণশক্তি হারানো থেকে শুরু করে স্থায়ী বধিরতাও দেখা দিতে পারে।”
তিনি আরও জানান, শব্দবাজির অভিঘাতে মাথা ঘোরা, ঝিমঝিম ভাব বা ভারসাম্য হারানোর সমস্যা হতে পারে। যাঁদের আগে থেকেই কানে অসুবিধা আছে, হঠাৎ তীব্র শব্দে মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে।
প্রবীণদের ক্ষেত্রে শব্দবাজির প্রভাব আরও ভয়াবহ—রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া, ঘুম নষ্ট হওয়া এবং অকারণ উৎকণ্ঠা দেখা দেয়। গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রেও ঝুঁকি মারাত্মক, কারণ তীব্র শব্দ ও ধোঁয়া উভয়ই গর্ভস্থ শিশুর স্নায়ুতন্ত্রে স্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে। জন্মের পর সেই শিশুদের মধ্যে অপরিণত মস্তিষ্ক বা শ্রবণজনিত সমস্যার সম্ভাবনা থেকে যায়।
ড. দত্তের পরামর্শ
“বাজি পোড়ানোর সময় মানুষ ভাবে, কয়েক ঘণ্টার আনন্দে কিছু ক্ষতি হবে না। কিন্তু শরীরের ভিতরে তার প্রভাব বহুদিন থেকে যায়,” — বলেন ড. দত্ত।
তিনি পরামর্শ দিয়েছেন, দীপাবলি বা কালীপুজোর সময়ে দূষণ এড়াতে বাড়ির জানালা বন্ধ রাখা, মাস্ক ব্যবহার করা এবং শিশু-বয়স্কদের যতটা সম্ভব ঘরের ভিতরে রাখার।