শিশুদের কি ডায়াবেটিস হতে পারে?
ডায়াবেটিসের ফলে অগ্ন্যাশয় থেকে ইনসুলিন উৎপাদন হ্রাস পায়। ইনসুলিনের অভাবে শর্করা বিপাক ঠিকমতো হয় না, যার কারণে তা রক্তে থেকে যায়, যাকে হাইপারগ্লাইসেমিয়া বলে। যে কোনও বয়সেই ডায়াবেটিস হতে পারে। ডায়াবেটিস দুই ধরনের, টাইপ ১ এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিস। টাইপ ১ ডায়াবেটিসই বেশিরভাগই শিশুদের মধ্যে ঘটে।
advertisement
আরও পড়ুন: এই লাড্ডুতেই দূর হবে PCOD-এর সমস্যা! কমবে ওজন, বাড়বে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
টাইপ-১ ডায়াবেটিস: এতে শরীরে ইনসুলিন উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। তাঁর মতে কিছুকাল আগে পর্যন্ত টাইপ ১ ডায়াবেটিস সাধারণত শুধুমাত্র শিশুদের মধ্যেই দেখা যেত। এতে শিশুদের নিয়মিত ইনসুলিন ইনজেকশন নিতে হয়।
টাইপ-২ ডায়াবেটিস: এটি বয়ঃসন্ধিকালে বা যুবাদের মধ্যে বেশি ঘটে। এতে ইনসুলিনের উৎপাদন কমে যায় বা ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের অবস্থা হয়। এ ক্ষেত্রে ওজন বৃদ্ধি পায় এবং খুব কম শারীরিক পরিশ্রম করেই পরিশ্রান্ত হয়ে পড়ে, তারা সহজেই রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে।
আরও পড়ুন: ডায়াবেটিসের যম এই ফল! নিয়ন্ত্রণে রাখে উচ্চ রক্তচাপ, কোষ্ঠকাঠিন্য থেকেও দেয় মুক্তি
শিশুদের ডায়াবেটিস হলে কী কী লক্ষণ দেখে বুঝবেন
১. খিদে কমে যাওয়া
২. ওজন কমে যাওয়া
৩. ঘন ঘন প্রস্রাব, বিশেষ করে রাতে, ঘন ঘন প্রস্রাব যাওয়া
৪. অতিরিক্ত জল তেষ্টা পাওয়া, গলা শুকিয়ে যাওয়া
৫. খিটখিটে ও ক্লান্তি বোধ হওয়া
৬. ঘন ঘন রোগাক্রান্ত হয়ে পড়া
৭. ক্ষত বা আঘাত দ্রুত নিরাময় না হওয়া।
ডায়াবেটিস থেকে কী কী সমস্যা আসতে পারে ?
১. স্নায়ুর ক্ষতি (ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি)
২. কিডনিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে (ডায়াবেটিক নেফ্রোপ্যাথি)
৩. চোখের উপর প্রভাব (রেটিনা) ফেলে এবং কখনও কখনও অন্ধত্ব চলে আসতে পারে।
৪. হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের মতো সমস্যা।
৫. ডায়াবেটিক কেটোসিডোসিস – এটি একটি বিপজ্জনক রোগ।যেখানে সময়মতো চিকিৎসা না করালে রোগী কোমায় চলে যেতে পারে বা মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
৬. ডায়াবেটিস শিশুদের বৃদ্ধি, ওজন এবং উচ্চতাকেও প্রভাবিত করতে পারে।
কী ভাবে টাইপ ২ ডায়াবেটিস এড়ানো যায় ?
পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। অত্যধিক চিনি এবং অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। শিশুদের শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকতে হবে। যেমন তাদের প্রতিদিন ১ ঘণ্টা খেলাধুলা, সাইকেল চালানো ইত্যাদি, যাতে তাদের মধ্যে স্থূলতা না বাড়ে। শিশুর দ্রুত ওজন বাড়তে থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং ডায়েটিশিয়ানেরও পরামর্শ নিন। এভাবে স্থূলতাজনিত টাইপ-২ ডায়াবেটিস এড়ানো যায়।
কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে ডায়াবেটিসের লক্ষণ
১. শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের ডায়াবেটিস সনাক্ত করতে, রক্তে ব্লাড সুগার টেস্ট করতে হবে।
২. হিমোগ্লোবিন AIC পরীক্ষার (HbAIC) মাধ্যমেও ডায়াবেটিস শনাক্ত করা যায় এবং শেষ কয়েক মাসে শরীরে সুগারের নিয়ন্ত্রণও জানা যায়।
৩. এ ছাড়া প্রস্রাব পরীক্ষা করতে হবে।
ডায়াবেটিসের চিকিৎসা কি?
ডায়াবেটিস হলে চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী নিয়মিত ওষুধ ইনজেকশন (ইনসুলিন) নিতে হবে। নিয়মিত ব্লাড সুগার লেভেল চেক করতে হবে। গ্লুকোমিটার নামক একটি মেশিন দিয়ে বাড়িতেও রক্তের শর্করা পরীক্ষা করতে পারেন। HbA1c লেভেল নিয়মিত পরীক্ষা করতে হবে, যাতে আপনি গত তিন মাসের শর্করা নিয়ন্ত্রণে কিনা জানতে পারেন। শিশুদের বেশিক্ষণ খালিপেটে থাকতে দেবেন না।
তবে কোনও কিছুই এত অতিরিক্ত ভাল নয়। এটাও খেয়াল রাখতে হবে যে শিশু যদি অতিরিক্ত খেলাধূলা করে এবং দীর্ঘক্ষণ খালি পেটে থাকে, তাহলে তার সুগার লেভেল কমে যেতে পারে (হাইপোগ্লাইসেমিয়া), যার ফলে কারণে শিশু দুর্বল বোধ করতে পারে, তাহলে তাঁকে অবিলম্বে চিনি দিতে হবে। অথবা গ্লুকোজের জল বা মিষ্টি বিস্কুটও খাওয়াতে পারেন যাতে তার রক্তে শর্করার ভারসাম্য বজায় থাকে। গুরুতর সমস্যার ক্ষেত্রে, অবিলম্বে এমন হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।