তীব্র বুকে ব্যথা হৃদরোগের সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ, এ কথা বলাই যায়। সাম্প্রতিক অতীতে বিএম বিড়লা হার্ট রিসার্চ সেন্টারে বহু তরুণ রোগীর দেখা মিলেছে, যাঁরা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন। হৃদরোগের লক্ষণ পুরুষ ও নারী ভেদে পৃথক হতেই পারে। দেখা গিয়েছে অনেক সময়ই পুরুষের মধ্যে বমি বমি ভাব বা মাথা ঘোরার সমস্যা তৈরি হতে পারে। মহিলাদের ক্ষেত্রে অবশ্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বুকে ব্যথাক মতো চিরাচরিত লক্ষণের সম্ভাবনা বেশি থাকে। আর এ সব লক্ষণকে উপেক্ষা করলেই সমস্যা বাড়তে পারে। হার্ট অ্যাটাকের পাশাপাশি কলকাতার মতো শহরেও সম্প্রতি বেড়েছে সাডেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের (এসসিএ) ঘটনা।
advertisement
আরও পড়ুন- বিশ্বকাপ জেতার আগেই হাতের মুঠোয় বিশ্বকাপ, ট্রফি নিয়েই ঘুরছেন নেইমার
সাম্প্রতিক এক আমেরিকান গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সী মানুষের মধ্যে এসসিএ-তে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেড়েছে প্রায় ১৩ শতাংশ। কিছু গবেষণায় এও দেখা গিয়েছে, যে পশ্চিমা দেশগুলির তুলনায় ভারতীয় নাগরিকেরা অন্তত ১০ বছর আগে থেকেই হৃদরোগে ভুগতে শুরু করেন। এর জন্য দায়ী হতে পারে পরিবারের ইতিহাস, কম শরীরচর্চা, ডায়াবেটিস, ধূমপান এবং উচ্চ রক্তচাপ। ফলে সাডেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে।
সাডেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট মানবদেহের সবচেয়ে মারাত্মক এবং ভীতিকর ব্যাধিগুলির মধ্যে একটি। অনেক সময় পরিস্থিতি এমন হতে পারে যেখানে এটি সামান্য লড়াই করার সুযোগও দেবে না। কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে হৃদস্পন্দন হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। প্রতি বছর হাসপাতালের বাইরে প্রায় ৩,৫০,০০০ ঘটনা ঘটে এমন। এ ক্ষেত্রে বেঁচে থাকার হার ১২ শতাংশেরও কম।
আরও পড়ুন- বছরের সঙ্গে বদলাবে ভাগ্যও, মঙ্গলের গোচর কোন সুফল আনছে জীবনে?
কিন্তু সেখানেই জীবনদায়ী হয়ে আসে সিপিআর। এটি রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা দ্বিগুণ বা তিনগুণ করে দিতে পারে। প্রায় সত্তর শতাংশ কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট বাড়িতে ঘটে। সঙ্গে সঙ্গে সঠিক পদ্ধতিতে সিপিআর দেওয়া হলে পরিস্থিতি অনেকটা আয়ত্তে আসতে পারে। এই সিপিআর দেওয়া এমন একটি পদ্ধতি যা শেখা প্রয়োজন। আর যত বেশি সংখ্যক মানুষ এটি শিখতে পারবেন ততই মানুষের ভাল হবে।
বি.এম. বিড়লা হাসপাতালের, কার্ডিওলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট, চিকিৎসক অশোক মালপানি বলেন, ‘,‘কে কখন হৃদরোগে আক্রান্ত হবেন তা আগে থেকে বলা সম্ভব নয়। কোনও মানুষই এই রোগ থেকে সম্পূর্ণরূপে ঝুঁকিমুক্ত নন। অনেকেই ওষুধ খান, কারও বাইপাস সার্জারি বা এনজিওপ্লাস্টি হয়েছে। কিন্তু তার পরেও যে কেউ যে কোনও সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হতে পারেন। সাম্প্রতিক সময়ে, আমরা এমন অনেক ঘটনা পাচ্ছি যেখানে যুবকরা হয় তো জিমে বা কোনও কাজ করার সময় বা ভ্রমণের সময় বা বিশ্রামের সময় হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে তাঁদের অনেকেই মারা যাচ্ছেন। ইদানীং এমন দুর্ভাগ্যের সাক্ষী হয়েছেন বেশ কয়েকজন সেলিব্রিটি। যাই হোক, এঁদের অনেকেরই জীবন বাঁচানো যেত যদি তাঁদের আশেপাশের মানুষেরা জানতেন কী ভাবে সিপিআর দিতে হয়।’
সিপিআর হল একটি প্রাথমিক চিকিৎসা প্রক্রিয়া যা একজন এসসিএ-তে আক্রান্ত ব্যক্তিকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য জরুরি। এই জীবনদায়ী কার্যকলাপটি সঠিক ভাবে জানলে হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া পর্যন্ত সময় হাতে পাওয়া যায়।
কিন্তু এ জন্য সঠিক প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। তাই, বিএম বিড়লা হার্ট রিসার্চ সেন্টার তার কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি কার্যক্রমের অধীনে রোটারি ক্লাব, কলকাতা প্রেসিডেন্সি ক্লাব এবং জেলার বেশ কিছু ক্লাবের সঙ্গে মিলে হাসপাতালে একটি প্রশিক্ষণ শিবির পরিচালনা করছে। বিশেষজ্ঞরা প্রশিক্ষণ দেবেন সিপিআর বিষয়ে। এর মূল উদ্দেশ্য হল সচেতনতা প্রচার। প্রশিক্ষিত ক্লাব সদস্যরা আবার তাঁদের সমবয়সীদের কাছে ওই জীবনদায়ী জ্ঞান পৌঁছে দিতে পারবেন।
তবে যে কোনও রোগের ক্ষেত্রেই 'প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ ভাল'। চিকিৎসক অশোক মালাপানি বলেন, বড় ধরনের অসুখে ভুগে ওঠা রোগীদের কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। যেমন, দুর্বল হৃদয়ের মানুষের শীতকালে বিশেষ ভাবে সতর্ক হওয়া উচিত। এই চরম আবহাওয়া এড়াতে নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গ্রহণ হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করতে পারে। এ ছাড়াও লবণ ও জল খাওয়া কমাতে হবে কারণ শীতে ঘাম কম হয়।’