TRENDING:

Covid Third Wave: করোনার নতুন প্রজাতি ওমিক্রন কি আসলে ছদ্মবেশি আশীর্বাদ?: ডঃ তমাল লাহা

Last Updated:

কোভিডের তৃতীয় ঢেউয়ে শিশুরা কতটা ঝুঁকিতে রয়েছে? বাচ্চাদের সুরক্ষিত রাখতে কী কী সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে? সদ্যোজাতর ক্ষেত্রেই বা কি করবেন ? জানাচ্ছেন অ্যাপোলো হাসপাতালের সিনিয়র শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ও নিওনেটোলজিস্ট ডঃ তমাল লাহা

impactshort
ইমপ্যাক্ট শর্টসলেটেস্ট খবরের জন্য
advertisement
#কলকাতা: নতুন বছরে নতুন ত্রাস করোনাভাইরাসের নতুন প্রজাতি ওমিক্রন! অতি সংক্রামক ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে প্রতিনিয়ত! কোভিডের তৃতীয় ঢেউয়ে শিশুরা কতটা ঝুঁকিতে রয়েছে? বাচ্চাদের সুরক্ষিত রাখতে কী কী সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে? সদ্যোজাতর ক্ষেত্রেই বা কী করবেন ? জানাচ্ছেন অ্যাপোলো হাসপাতালের সিনিয়র শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ও নিওনেটোলজিস্ট ডঃ তমাল লাহা
advertisement

কোভিডের প্রথম ও দ্বিতীয় তরঙ্গ যতটা ভয়াবহ ছিল, তৃতীয় তরঙ্গ ঠিক ততটাই ভয়ানক, সঙ্গে বাড়তি ভয়, থার্ড ওয়েভে এসেছে করোনা ভাইরাসের নতুন প্রজাতি ওমিক্রন, যা অত্যন্ত বেশি ছোঁয়াচে! এখানে আগেই বলে নিই, করোনা ভাইরাস কিন্তু আগেও এদেশে ছিল। তখন এদের মধ্যে একজনের নাম ছিল 0C-43। এটিও ছিল সংক্রামক। হাসপাতালে তখন বহু রোগী পেয়েছি যারা 0C-43 ভাইরাসে আক্রান্ত। পরীক্ষা করতে ৭ দিন সময় লাগত, তার মধ্যে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ত অন্যদের শরীরে। এবার ২০১৯-এ এল করোনারই এক নতুন রূপ, তাই তাকে বলা হল নভেল করোনা ভাইরাস। ইউকে-তে প্রথম ভাইরাসের স্ট্রেন-এ পরিবর্তন হল, তার পর দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিলে ফের স্ট্রেন পরিবর্তন করল ভাইরাস। এর পর ভারতে স্ট্রেন পালটে হল ডেলটা। এবার দক্ষিণ আফ্রিকার যে-যে জায়গায় কোভিডের টিকা দেওয়ার হার কম ছিল, সেখানে জন্ম নিল করোনা ভাইরাসের আরেক নয়া প্রজাতি, নাম ওমিক্রন। জন্মদিন ২৪ নভেম্বর ২০২১।

advertisement

ওমিক্রন নিয়ে ভয় বেশি, কারণ ? ভাইরাসের চারপাশে থাকে স্পাইক প্রোটিন, ভাইরাস যখন এই প্রোটিন পাল্টায়, তখন ভাইরাসের স্ট্রেন বদল হয়! ইতিমধ্যেই ওমিক্রনে ৩০-এর বেশিবার স্পাইক প্রোটিন পরিবর্তন হয়েছে। বিষয়টা অনেকটা এরকম... ভাইরাস ভ্যাকসিনকে বলে, 'তুই আমায় মারবি? আমি আমার বর্ম পালটে ফেলছি, অন্য ছদ্মবেশে ঢুকব।' ওরা বহুরূপীর মতো, শুধু স্পাইক প্রোটিন বদলে ফেললেই নতুন রূপ। মানবদেহে কোভিডের ভ্যাকসিন নেওয়া আছে, ভ্যাকসিনটাও তৈরি হয়েছে ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিন বা এমআরএন-এ দিয়ে, কিন্তু এ বার যে ভাইরাসটা শরীরে ঢুকল, তার তো স্পাইক প্রোটিন বদলে গিয়েছে, ফলে ভ্যাকসিনের স্পাইক প্রোটিন তাকে আর চিনতে পারছে না! ফলে, ভ্যাকসিন নেওয়া থাকলেও এই তৃতীয় তরঙ্গে ওমিক্রন মোকাবিলা করা কতটা সম্ভব হচ্ছে, বিষয়টি এখনও প্রশ্নাতীত নয়!

advertisement

সৌভাগ্যবশত, দক্ষিণ আফ্রিকার বৈজ্ঞানিকরা খুব তাড়াতাড়ি এটা বুঝে ফেলেছিলেন, নতুন কিছু ঘটছে, কোভিড ফের স্ট্রেন পাল্টেছে এবং ২৪ নভেম্বর আবিষ্কার করে ফেলেন ওমিক্রন-কে।

ওমিক্রনের সংক্রমণ ক্ষমতা খুব বেশি। কিন্তু এখনও পযর্ন্ত পাওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, হয়তো আগের প্রজাতিগুলোর মত অতটা প্রাণঘাতী নয়, মৃত্যুর ঘটনাও খুব কম। এই ভাইরাসে একইসঙ্গে প্রচুর লোক সংক্রমিত হচ্ছেন ঠিকই, কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ-ও হয়ে উঠছেন। তবে, এই পুরোটাই বলছি কিন্তু প্রোবাবিলিটির ওপর দাঁড়িয়ে! ইটস টু আর্লি টু সে! হয়তো দেখা গেল, ৩ মাস পর আক্রান্তের অন্য কোনও উপসর্গ দেখা দিচ্ছে যার সুদূরপ্রসারী প্রভাব থাকলেও থাকতে পারে! ভাইরাসের চরিত্র আগে থেকে বলা যায় না!

advertisement

এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে এ'টুকুই বলা যায়, ওমিক্রন ভাইরাসের ইনফেকটিভিটি বা সংক্রমণ করার ক্ষমতা বেশি। এবার ইনফেকটিভিটি কী দিয়ে মাপা হয়? ইনকিউবেশন পিরিয়ড আর রিপরোডাক্টিভ নাম্বার কাউন্ট দিয়ে। একটা ভাইরাস শরীরে ঢোকা থেকে উপসর্গ দেখা দেওয়া পর্যন্ত যে সময়, তাকেই বলে ইনকিউবেশন পিরিয়ড। এই সময় শরীর আর ভাইরাসের লড়াই চলে! ভাইরাস জিতলে উপসর্গ দেখা দেবে, ভাইরাস হেরে গেলে উপসর্গ দেখা দেবে না। আর ম্যাচ যদি ড্র হয়, তবে শরীর একটু-আধটু খারাপ হয়ে আক্রান্ত তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবেন। এবার আগের ওয়েভে ইনকুইবেশন পিরিয়ড ছিল ২.২ থেকে ১১.৫ দিন, গড় ছিল ৫.১ দিন। সেই গড় দিনটা এই ওয়েভে কমে গিয়ে ১-২ দিন হয়ে গিয়েছে এবং রিপরোডাক্টিভ নাম্বার কাউন্ট ওমিক্রনের ক্ষেত্রে বেড়ে গিয়েছে। একটা ভাইরাস কত তাড়াতাড়ি নিজেকে মাল্টিপ্লাই বা বহুগুণ করতে পারে এবং একজন আক্রান্ত কতজনকে সংক্রমিত করতে পারে, তাকেই বলে রিপ্রোডাক্টিভ নম্বর কাউন্ট। আগের দুটো ওয়েভে রিপ্রোডাক্টিভ নম্বর কাউন্ট ছিল ২- ২.৫। অর্থাৎ একজন আক্রান্ত দুই থেকে আড়াই জনকে সংক্রমিত করছিল। এই ওয়েভে সেটা অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে।

advertisement

দাবানলের মতো ছড়াতে পারে ওমিক্রন ভাইরাস। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই এই তরঙ্গে শিশু ও বাচ্চাদের (সদ্যোজাত থেকে ১৪ বছর) সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই বেশি, বিশেষ করে যখন বাচ্চাদের সবসময় মাস্ক পরানো যায় না, অথবা স্যানিটাইজর ব্যবহারেও অনেকসময় সমস্যা থাকে! কিন্তু এখনও পর্যন্ত, বাচ্চাদের তেমন ভয়ানক কোনও উপসর্গ দেখা দিচ্ছে না। বড় জোর, ১-২ দিনের জ্বর, সর্দি-কাশি, পেটের গন্ডগোল... তাড়াতাড়ি সেরেও উঠছে! যদি পরিবারের সবার জ্বর-সর্দি-কাশি হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে আমরা বাচ্চাদের করোনা পরীক্ষা করতেও বলছি না। তবে, শিশুর যদি কো-মর্বিডিটি থাকে, যেমন এপিলেপসি বা সেরিব্রাল পলসি, ডায়াবিটিস, থাইরয়েড, কিডনি বা হার্টের সমস্যা, সেক্ষেত্রে করোনা ভয়াবহ আকার নিতে পারে! কিন্তু, শিশুর স্বাস্থ্য স্বাভাবিক থাকলে করোনায় মর্টালিটি এবং মর্বিডিটি প্রায় নেই-ই। আগের দুটো ওয়েভেও হয়নি, এবারও এখনও পর্যন্ত খুব বেশি কিছু হচ্ছে না। বাচ্চাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অপরিণত, তাই ভাইরাস শরীরে ঢুকলে সাইটোকাইন স্টর্ম খুব বেশি হচ্ছে না। ফলে, শরীর বেশি রি-অ্যাক্ট করছে না এবং বাচ্চা বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছে না।

কোনও সদ্যোজাতর মা যদি করোনা পজিটিভ হন, তখন হু-এর গাইডলাইন অনুযায়ী, ডবল মাস্ক, গ্লাভস পরে, হাত স্যানিটাইজ করে, স্তন ভাল করে পরিস্কার করে সরাসরি বাচ্চাকে ব্রেস্টফিড করাতে পারেন। দুধের মধ্যে দিয়ে ভাইরাস আসবে না এবং কোনও পরিস্থিতিতেই স্তন্যপান বন্ধ করা উচিৎ নয়।

তবে, এখানেই বলে রাখি, উপসর্গ ভয়াবহ হচ্ছে না মানে কিন্তু এই নয়, উপসর্গ এড়িয়ে যাবেন! বাচ্চার হালকা জ্বর বা সর্দি-কাশি, পেটের সমস্যা হলেও সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। মাথায় রাখবেন, করোনা ভাইরাস নিয়ে এখনও পর্যন্ত ফুলপ্রুফ কোনও তথ্য কিন্তু নেই! আজ শিশুদের উপসর্গ মৃদু হচ্ছে বলে যে কাল-ও তা হবে, এমনটা নয়! কাজেই, বাচ্চাদের ক্ষেত্রে নিজে নিজে ডাক্তারি করবেন না, আগেভাগেই সতর্ক হন, চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন।

এ বার ধরুন, একটা বাড়িতে বাবা, মা, পরিবারের অন্য সদস্যরা কোভিড পজিটিভ। হয়তো করোনায় তেমন মারাত্মক অসুস্থ কেউ হলেন না, কিন্তু সেকেন্ডারি ইনফেকশনে ব্যাকটেরিয়াল নিমুনিয়া হতেই পারে এবং সেটা বাচ্চার মধ্যে সংক্রমিত হবে! তাই বড়-রা আগে প্রোটেকশন নিন! তাঁরা ঠিক থাকলে তবেই বাচ্চা ঠিক থাকবে! হাইজিন বজায় রাখা খুব জরুরি। বাচ্চাদের স্নান করান, পরিষ্কার রাখুন। ব্যালান্সড ডায়েট অত্যাবশ্যক। ওষুধের অতিরিক্ত ব্যবহার করবেন না। রাতে নাক বন্ধ হয়ে গেলে স্যালাইন ড্রপ ব্যবহার করুন। বেশি লুজ মোশন হলে ওআরএস খাওয়ান। করোনার ক্ষেত্রে বাচ্চাদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার হার খুবই কম, তবুও বারবার বলছি, কোনও উপসর্গই যেন এড়িয়ে না যাওয়া হয়। কারণ, অনেক সময় কোভিডের সিম্পটম ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড, ডেঙ্গি, স্ক্রাবটাইফাস বা অন্য ভাইরাস সংক্রমণের উপসর্গের সঙ্গে ওভারল্যাপ করছে। এই ওয়েভে অনেক ক্ষেত্রে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসছে, লোকে ভাবছে করোনা, পরীক্ষা করে দেখা যাচ্ছে ম্যালেরিয়া বা ডেঙ্গি। বাচ্চাদের অনেকেরই করোনার প্রথম উপসর্গ হিসেবে দেখা দিচ্ছে পা-ব্যথা, লুজ মোশন, চোখে ব্যথা। কাজেই, শুধু করোনা নয়, ডেঙ্গি ও ম্যালেরিয়ার পরীক্ষাও করান। করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ আসার পরও সতর্ক থাকুন, খেয়াল রাখুন ২-৩ সপ্তাহ পর উপসর্গ ফিরে আসছে কিনা!

সেরা ভিডিও

আরও দেখুন
লালগোলাতে রাজরাজেশ্বরী রূপে পূজিতা হন মা কালী! দেওয়া হয় ইলিশের ভোগ
আরও দেখুন

সবশেষে এটাই বলব, করোনার নতুন প্রজাতি ওমিক্রন বোধহয় আশীর্বাদ-ই! ব্লেসিং ইন ডিসগাইজ! হয়তো এটাই সেই ভাইরাস যে সবাইকে সংক্রমিত করে মানবজাতিকে করোনার বিরুদ্ধে হার্ড ইম্যিউনিটি দিয়ে চলে যাবে! হয়তো এটাই রক্ষাকবচ, হয়তো এখানেই শেষ হবে করোনার ধ্বংসলীলা! আবার এমনটাও হতে পারে, রূপ পালটে নতুন কোনও আকারে ফের থাবা বসাবে মারণ ভাইরাস... ভাইরাস বড়-ই আনপ্রেডিকটেবল... কী করবে কিছুই বলা যায় না...

বাংলা খবর/ খবর/লাইফস্টাইল/
Covid Third Wave: করোনার নতুন প্রজাতি ওমিক্রন কি আসলে ছদ্মবেশি আশীর্বাদ?: ডঃ তমাল লাহা
Open in App
হোম
খবর
ফটো
লোকাল