কিছু মানুষ নারকেলের জল বেশ পছন্দ করেন এবং এটি স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো। এতে থাকা ভিটামিন সি, ই, ক্যালসিয়াম এবং পটাশিয়াম স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। তবে কিছু মানুষের জন্য নারকেলের জল ক্ষতির কারণও হতে পারে। এতে থাকা পটাশিয়াম কিছু মানুষের জন্য সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। আসুন জেনে নিই কাদের জন্য নারকেলের জল পান করা ক্ষতিকারক হতে পারে এবং কতটা নারকেলের জল পান করা ঠিক।
advertisement
আরও পড়ুন: জলে এক চিমটি নুন মিশিয়ে পান করুন, তারপর দেখুন কামাল! উপকারিতা জানলে রোজ খেতে শুরু করবেন…
১. কিডনি সংক্রান্ত রোগ: যাদের কিডনি সংক্রান্ত কোনো রোগ আছে, তাদের নারকেলের জল পান করা উচিত নয়। নারকেলের জলে থাকা পটাশিয়াম কিডনি ফিল্টার করতে পারে না। কিডনি রোগের কারণে রোগীদের শরীরে এমনিতেই পটাশিয়াম এবং সোডিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকে। এমন অবস্থায় নারকেলের জল পান করলে হাইপারক্যালেমিয়া হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এর ফলে হার্ট রেট বেড়ে যাওয়া এবং বুক ধড়ফড় করার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
২. ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগী: যাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা আছে, তাদেরও নারকেলের জল পান করা উচিত নয়। নারকেলের জলে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স এবং কার্বোহাইড্রেট বেশি থাকে, যার ফলে সুগার লেভেল বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
আরও পড়ুন: দেশে দ্রুত বাড়ছে ফ্যাটি লিভারে ভোগা রোগীর সংখ্যা! কীভাবে ফ্যাটি লিভারের সমস্যা থেকে বাঁচবেন জানুন…
৩. বয়স্ক ব্যক্তি: বেশি বয়সের মানুষদের প্রতিদিন নারকেলের জল পান করা থেকে বিরত থাকা উচিত। এতে পটাশিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকে, যার ফলে খুব বেশি পান করলে শরীরে পটাশিয়ামের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে, যা হার্টের কার্যক্ষমতার উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
৪. অ্যালার্জির সমস্যা: যাদের অ্যালার্জির সমস্যা আছে, তাদেরও নারকেলের জল পান করা থেকে বিরত থাকা উচিত। এর ফলে ত্বকে চুলকানি, জ্বালাপোড়া বা লালচে ভাব শুরু হতে পারে।
৫. উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা: যাদের উচ্চ রক্তচাপের (হাই বিপি) সমস্যা আছে এবং যারা এর জন্য ওষুধ গ্রহণ করেন, তাদেরও নারকেলের জল পান করা উচিত নয়। এর ফলে রক্তচাপের সমস্যা বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।
৬. পরিমাণের দিকেও খেয়াল রাখা জরুরি: বেশিরভাগ মানুষ গরমকালে প্রতিদিন নারকেলের জল পান করেন, কিন্তু উপরে উল্লিখিত ব্যক্তিদের এটি প্রতিদিনের ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করা থেকে বিরত থাকা উচিত। যদি আপনি রোদে বাইরে থাকেন বা আপনার খুব বেশি ঘাম হয়, তাহলে আধা গ্লাস নারকেলের জল পান করা যেতে পারে।
৭. শরীরে পটাশিয়াম বৃদ্ধির প্রভাব: উচ্চ পটাশিয়াম স্তরকে চিকিৎসার ভাষায় হাইপারক্যালেমিয়া বলা হয়। এই অবস্থা হার্টের কার্যক্ষমতায় বাধা দিতে পারে। এর ফলে হার্টবিট অস্বাভাবিক হতে পারে বা কিছু নির্দিষ্ট শারীরিক পরিস্থিতিতে গুরুতর জটিলতাও দেখা দিতে পারে।
নারকেলের জলের উপকারিতা:
নারকেলের জল শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে সহায়ক।
এটি অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করতে কাজ করে।
নারকেলের জল ডাইজেশন সিস্টেমকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
এটি ওজন কমাতে সাহায্য করে।
নারকেলের জল ত্বককে সুস্থ রাখতে সহায়ক।
এটি চুলকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
নারকেলের জল শরীরকে ডিটক্স করতে সাহায্য করে।
দিল্লির প্রখ্যাত ডায়েটিশিয়ান ও নিউট্রিশনিস্ট, ডাঃ রঞ্জনা সিং (প্রতিষ্ঠাতা, নিউট্রি-ডায়েট ক্লিনিক, দিল্লি) এই বিষয়ে বলেছেন, “নারকেলের জল নিঃসন্দেহে একটি চমৎকার প্রাকৃতিক পানীয় এবং এতে অনেক স্বাস্থ্যকর উপাদান রয়েছে। তবে, এর উচ্চ পটাশিয়াম উপাদান কিছু নির্দিষ্ট শারীরিক অবস্থার মানুষের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে কিডনি রোগীদের জন্য, যাদের শরীর থেকে অতিরিক্ত পটাশিয়াম বের করে দেওয়ার ক্ষমতা সীমিত, নারকেলের জল হাইপারক্যালেমিয়া ঘটাতে পারে, যা হৃদপিণ্ডের জন্য বিপজ্জনক। একইভাবে, ডায়াবেটিস রোগীদের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স এবং কার্বোহাইড্রেটের কারণে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।”
Disclaimer: এই খবরের মধ্যে দেওয়া ওষুধ/স্বাস্থ্য সম্পর্কিত পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রাপ্ত। এটি সাধারণ তথ্য এবং ব্যক্তিগত পরামর্শ নয়। তাই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনও কিছু ব্যবহার না করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। নিউজ18 বাংলা কোনও ব্যবহারে ক্ষতির জন্য দায়ী থাকবে না।