ব্রেস্ট ক্যানসার কী?
যখন নারী দেহে স্তনের কোষগুলি যখন অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পেতে শুরু করে, তখন প্রতিনিয়ত অনিয়মিত এবং অতিরিক্ত কোষ বিভাজনের কারণে স্তনে টিউমার জাতীয় পিণ্ডের সৃষ্টি হয়। এই কোষ বিভাজন যখন স্তন ছেড়ে শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পরে বা ছড়ানোর প্রবণতা দেখায়, তখন তাকে ব্রেস্ট ক্যানসার বলা। স্তন ক্যানসারের ফলে আক্রান্তের স্তন-সহ স্বাস্থ্যের অবনতি দেখা যায়। সময়মতো উপযুক্ত পদক্ষেপ না-করলে রোগীর প্রাণহানি পর্যন্ত ঘটতে পারে।
advertisement
ব্রেস্ট ক্যানসার রোগের কারণ কী?
বয়ঃসন্ধির (puberty) পর থেকে মহিলাদের স্তনের বিকাশ ঘটে। ফ্যাট, সংযোগকারী টিস্যু এবং লোবিউলের মাধ্যমে স্তনের আকার ও ধরনে পরিবর্তন আসে এবং তা ভবিষ্যতে সন্তানের জন্য বুকের দুধ প্রস্তুত করতে সক্ষম হয়। লোবিউল নামে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গ্রন্থিগুলিতেও দুধ তৈরি হয়, যা ডাক্ট বা নালীর মাধ্যমে স্তনবৃন্ত পৌঁছয়।
জেনেটিক মিউটেশন বা ডিএনএ (DNA) ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ফলে স্তন ক্যান্সারের সৃষ্টি হয়। যেমন– ইস্ট্রোজেনের সংস্পর্শে আসা, উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত জেনেটিক ত্রুটি বা উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত জিনে ক্যানসারের ইতিহাসের কারণে পরবর্তী প্রজন্ম এই রোগের আক্রান্ত হতে পারেন। এই রকম দুটি জিনের উদাহরণ হল BRCA1 এবং BRCA2।
আরও পড়ুন: কী করে বুঝবেন আপনি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত কিনা? এই সব লক্ষণ নেই তো শরীরে? জানুন
এক জন সুস্থ এবং স্বাভাবিক ব্যক্তির ক্ষেত্রে তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা অনাক্রমতা যে কোনও ধরনের অস্বাভাবিক ডিএনএ (DNA) বৃদ্ধিকে আক্রমণ করে। এর ফলে ওই ডিএনএ শরীরের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উপর কোনও প্রভাব ফেলতে পারে না। ক্যানসার আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে এমনটা হয় না। তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এই ডিএনএ-র বৃদ্ধিকে দমন করতে ব্যর্থ হয়, যার ফলে ক্যানসার ধীরে ধীরে একটি জায়গা থেকে অন্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে।
অনাক্রমতার ব্যর্থতার কারণে ব্রেস্ট ক্যানসারের ক্ষেত্রেও স্তনের কোষগুলি অনিয়ন্ত্রিত ভাবে নিজের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে থাকে। রোগীর শরীর এই কোষগুলিকে ধ্বংস করতে পারে না, ফলে স্বাভাবিক ভাবেই তারা আরও বেশি সংখ্যায় নিজেদের বিভাজিত করে বাড়তে থাকে। অত্যধিক মাত্রায় কোষ বৃদ্ধির ফলে স্তনে টিউমার বা পিণ্ডের সৃষ্টি হয়। এই পিণ্ড তার চারপাশের স্বাভাবিক কোষগুলিকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি এবং শক্তি থেকে বঞ্চিত করে।
আরও পড়ুন: শিশুদেরও হতে পারে হাই-প্রেশার! কেন হয় জানেন? কী করে বুঝবেন বাচ্চা আক্রান্ত কিনা? জানুন
ব্রেস্ট ক্যানসার স্তনের বিভিন্ন অংশ থেকে শুরু হতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ, এটি দুধ সরবরাহকারী নালী পথ বা দুধ প্রস্তুতকারী লোবিউল থেকে শুরু হতে পারে। এর পর রক্তনালীর মাধ্যমে রক্ত যখন স্তন থেকে শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ার মাধ্যমে ক্যানসারের বিস্তার ঘটে। লিম্ফ সিস্টেম হল মানবদেহের ইমিউন সিস্টেমের একটি অংশ। এই সিস্টেমে থাকা লিম্ফ ভেসেল স্তন থেকে রক্ত বহন করে শরীরে অন্যান্য অংশে নিয়ে যায়। ব্রেস্ট ক্যানসারের ক্ষেত্রে রক্তের মাধ্যমে ক্যানসার লিম্ফ নোড থেকে অন্যান্য অঙ্গেও বাসা বাঁধতে শুরু করে।
ব্রেস্ট ক্যানসারের স্টেজ:
ক্যানসারের ফলে সৃষ্ট টিউমার বা পিণ্ডের আকার দেখে নির্ধারণ করা যায় রোগ কতটা ছড়িয়েছে। চিকিৎসকদের মতে ব্রেস্ট ক্যানসারের স্টেজ নির্ধারণ করা ভিন্ন ভিন্ন উপায় রয়েছে, যা সকল রোগীর ক্ষেত্রে এক নাও হতে পারে। তবে মূলত ব্রেস্ট ক্যানসারকে মোট ৫টি স্টেজে ভাগ করা যায়। এই ৫টি স্টেজ ছাড়াও টিউমারের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী এই রোগকে সাবস্টেজে ভাগ করা হয় যেমন HER2 রিসেপ্টরের অবস্থা।
স্টেজ ০: ব্রেস্ট ক্যানসারের এই স্টেজকে ডাক্টাল কার্সিনোমা ইন-সিটু বলা হয়। এটিকে প্রাথমিক পর্যায় হিসেবে ধরা হয় এবং এই স্টেজে ক্যানসারের কোষগুলি ডাক্ট নালীগুলির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। ০ স্টেজে ক্যান্সারের কোষ অন্যান্য অংশে ছড়ায় না।
স্টেজ ১: ক্যানসারের এই পর্যায়ে টিউমারের দৈর্ঘ্য ২ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। এটি তখনও লিম্ফ নোডকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে না বা লিম্ফ নোডে কিছু সংখ্যক ক্যানসারের কোষের অস্তিত্ব পাওয়া যায়।
স্টেজ ২: টিউমারটি চারদিকে ২ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে এবং আশেপাশের নোডগুলিতে ক্ষতিগ্রস্ত করতে শুরু করেছে। আর একটি সম্ভাবনা হল টিউমার চারদিকে ২-৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে গিয়েছে, তবে তখনও কোনও লিম্ফ নোডকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে সক্ষম হয়নি।
স্টেজ ৩: টিউমারটি চারদিকে ৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে এবং লিম্ফ নোডকে আক্রান্ত করেছে বা চারিদিকে ৫ সেন্টিমিটারের বেশি ছড়িয়ে কিছু সংখ্যক লিম্ফ নোডকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
স্টেজ ৪: ক্যানসার শরীরে অন্যান্য অঙ্গে পুরোপুরি ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। যেমন– হাড়, লিভার, মস্তিষ্ক বা ফুসফুস।