অবশ্যই, ত্বকের যত্নেও ডিমের জুড়ি মেলা ভার, সেটা আমরা অনেকেই প্রায় জানি না। আসলে ডিম প্রোটিনে সমৃদ্ধ। আর সেই কারণেই এর মধ্যে রয়েছে চুল ও ত্বকের সৌন্দর্যবর্ধক উপাদানও।
আজ কথা বলব ডিমের কয়েকটি ফেস প্যাকের বিষয়ে। কিন্তু সবার আগে জেনে নেব, ডিম কেন ত্বকের জন্য উপকারী। আসলে ডিমের অগণিত উপকারিতা রয়েছে। কারণ ডিমে থাকে স্বাস্থ্যকর বা ভাল ফ্যাট। যা ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বা দীপ্তি বজায় রাখতে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে ত্বককে হাইড্রেটেড এবং নমনীয় রাখে ডিম। আর সবথেকে বড় কথা হল, ত্বকের যত্নের ক্ষেত্রে ডিমের সাদা অংশের তো জবাবই নেই। কারণ এতে রয়েছে অ্যান্টিএজিং উপাদান। ত্বকের ফাইন লাইন এবং বলিরেখা প্রতিরোধ করতে সক্ষম এটি। এমনকী ডিমের প্যাক ত্বকের সিবামের মাত্রায় আনে ভারসাম্য। এ-ছাড়া স্কিনের ময়লা, মৃত কোষ এবং অতিরিক্ত তেল দূর করতেও সহায়ক এই প্যাক। এখানেই শেষ নয়, ডিম দিয়ে তৈরি ফেস প্যাক মুখে রক্তের সঞ্চালনও সঠিক ভাবে বজায় রাখে। তা-হলে আলোচনা করে নেওয়া যাক, ত্বকের জন্য উপকারী ডিমের প্যাক তৈরির কৌশল এবং তার উপযোগিতার বিষয়ে।
advertisement
আরও পড়ুন - গোটা দেশ জুড়ে চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গি; বাড়ছে রোগীর সংখ্যাও! এই পানীয়তে হবে কামাল
ডিমের সাদা অংশ আর লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে তৈরি মাস্ক:
যাঁরা ব্রণ বা অ্যাকনের সমস্যায় জেরবার, তাঁদের জন্য অত্যন্ত উপকারী এই মাস্ক। আর লেবু হচ্ছে সবথেকে জনপ্রিয় এবং প্রাকৃতিক স্কিন লাইটেনিং উপাদান। এর মূল কারণ হল লেবুর মধ্যে থাকা ভিটামিন সি উপাদান। যা পিগমেন্টেশন কমাতে সাহায্য করে। স্কিন টোনও মসৃণ করে। তার সঙ্গে মধু ব্রণ কমায় এবং ত্বকে পুষ্টি জোগায়। এটা এক ধরনের অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ফেস মাস্ক।
কৌশল:
একটি ডিমের সাদা অংশ নিতে হবে।
আধ চা-চামচ মধু নিতে হবে।
১ চা-চামচ লেবুর রস নিতে হবে।
সব কিছু একসঙ্গে মিশিয়ে নিতে হবে।
এ-বার সেই মিশ্রণ মুখে লাগিয়ে রাখতে হবে।
১৫ মিনিট মতো রেখে তা ধুয়ে নিতে হবে।
সব শেষে ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে।
দুর্দান্ত ফল লাভ করতে সপ্তাহে অন্তত ২ বার এই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
ডিমের সাদা অংশ এবং কমলালেবুর মাস্ক:
পিগমেন্টেশন অথবা অমসৃণ স্কিন টোনের সমস্যায় ভুগলে এটাই আদর্শ মাস্ক। কমলালেবুও ভিটামিন সি-এর মতো উপাদানে ভরপুর। এটা পিগমেন্টেশন এবং ডার্ক স্পট কমাতে সাহায্য করে। দাগ-ছোপহীন মসৃণ, জেল্লাদার এবং পেলব ত্বক পেতে ব্যবহার করা উচিত এই ধরনের মাস্ক। এর সঙ্গে ডিমের সাদা অংশ এবং হলুদ ব্যবহার করলে তা দাগযুক্ত নিষ্প্রাণ ত্বকের জন্য আশীর্বাদ। হলুদে রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান আর সেখানে ডিমের সাদা অংশে অ্যান্টি-এজিং উপাদান রয়েছে। ভিটিলিগো, ফটো এজিং প্রভৃতির মতো ত্বকের সমস্যাও রোধ করে এই মাস্ক।
কৌশল:
একটা ডিমের সাদা অংশ নিতে হবে।
এর পাশাপাশি নিতে হবে আধ চা-চামচ হলুদ গুঁড়ো।
১ চা-চামচ কমলালেবুর রস নিতে হবে।
সব কিছু একসঙ্গে নিয়ে মেশাতে হবে।
মুখ এবং ঘাড়ের আশপাশের অংশে ওই মিশ্রণ লাগিয়ে ফেলতে হবে।
মিশ্রণটি শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
শুকনো হলেই ধুয়ে নিয়ে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিতে হবে।
ভাল ফল পেতে সপ্তাহে দু’দিন এই মাস্ক ব্যবহার করা উচিত।
ডিমের সাদা অংশ দিয়ে তৈরি মাস্ক:
সবথেকে সাধারণ এই মাস্ক। যা সহজেই মুখে লাগিয়ে নেওয়া যায়। যাঁরা ব্ল্যাকহেডস-এর সমস্যায় জেরবার, তাঁদের জন্য এই মাস্ক খুবই উপযোগী। শুধু তা-ই নয়, মুখ থেকে সমস্ত নোংরা-ময়লা দূর করতেও খুবই কার্যকর ডিমের সাদা অংশ দিয়ে তৈরি এই মাস্ক। আসলে প্রতিদিন দূষণ এবং নানা কারণে মুখে ময়লা জমতে থাকে। সেই সবের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ত্বক।
কৌশল:
একটা ডিমের সাদা অংশ নিতে হবে।
সঙ্গে টিস্যুও নিতে হবে।
ডিমটা ভাল করে ফেটিয়ে নিতে হবে। যত ক্ষণ না ফেনা হচ্ছে, তত ক্ষণ ফেটিয়ে যেতে হবে।
এ-বার একটা ব্রাশ দিয়ে এই ফেটানো ডিমের সাদা অংশ মুখে লাগিয়ে নিতে হবে।
এর পর তার উপর টিস্যুগুলি আটকে দিতে হবে।
তার উপর আরও এক বার ডিমের সাদা অংশের মিশ্রণটা লাগাতে হবে।
এ-ভাবে ১০ মিনিট রাখার পরে দেখতে হবে ডিমের সাদা অংশটা শুকিয়েছে কি না।
শুকিয়ে গেলে টিস্যু আস্তে করে টেনে তুলে নিতে হবে। বিষয়টা অনেকটা পিল অফ মাস্কের মতো।
সব শেষে ভাল করে মুখ ধুয়ে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিতে হবে।
ভাল ফল পেতে সপ্তাহে এক বার এই মাস্ক ব্যবহার করা যেতে পারে।
ডিম, মধু ও শসার মাস্ক
সেনসিটিভ স্কিনের জন্য এই মাস্ক অত্যন্ত উপকারী। এই মাস্কের প্রত্যেকটি উপাদান ত্বকের জন্য খুবই ভাল। এমনকী এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও নেই। মধু হাইড্রেটিং উপাদান। আর ডিমের সাদা অংশে রয়েছে এজিং প্রতিরোধকারী উপাদান। আর শসা ত্বককে ঠান্ডা করে। এতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। স্পা-এর মতো অভিজ্ঞতা চাইলে এই মাস্ক আদর্শ।
কৌশল:
১টা ডিমের সাদা অংশ নিতে হবে।
সেই সঙ্গে নিতে হবে ১ চা-চামচ টক দই।
১ চা-চামচ মধু নিতে হবে।
১ চা-চামচ শসার রস নিতে হবে।
সব উপকরণ একসঙ্গে মেশাতে হবে।
এই মিশ্রণ মুখে লাগিয়ে রাখতে হবে।
১৫ মিনিট রাখার পর তা ভাল করে ধুয়ে নিতে হবে।
তার পর ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিতে হবে।
ভাল ফল পাওয়ার জন্য সপ্তাহে অন্তত ১ বার এই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
ডিম ও লেবুর মাস্ক:
ব্রণর সমস্যার জন্য এই মাস্ক দুর্দান্ত। তৈলাক্ত ত্বকের সমস্যায় যাঁরা ভুগছেন, তাঁদের জন্যও এটা উপকারী। ত্বকের পিএইচ মাত্রা এবং সিবাম-এর মাত্রার ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে এই মাস্ক।
কৌশল:
১টা ডিমের সাদা অংশ নিতে হবে।
অর্ধেক লেবুর রস বার করে নিতে হবে।
এই দুই মিশ্রণ নিয়ে ভাল করে মিশিয়ে ফেটিয়ে নিতে হবে।
এ-বার মুখ এবং ঘাড়ের আশপাশের অংশে লাগিয়ে নিতে হবে।
১৫ মিনিট মতো রাখার পরে উষ্ণ গরম জলে মুখ ধুয়ে ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে।
ভাল ফলের জন্য সপ্তাহে দু’বার এই মাস্ক ব্যবহার করা উচিত।
ডিম, ক্যাস্টর অয়েল এবং অ্যালো ভেরা মাস্ক
ডিমের গুণাগুণ তো সকলেরই জানা। স্কিন থেকে হারিয়ে যাওয়া ময়েশ্চার ফের জোগাতে সাহায্য করে অ্যালো ভেরা। এমনকী কোলাজেন উৎপাদনেও সহায়ক অ্যালো ভেরা। স্কিনের নমনীয়তা বাড়ায়। আর ক্যাস্টর অয়েল মুখের ত্বককে নরম ও জেল্লাদার করে।
কৌশল:
১টা ডিমের সাদা অংশ নিতে হবে।
তার সঙ্গে নিতে হবে ১ চা-চামচ ক্যাস্টর অয়েল।
১ চা-চামচ অ্যালো ভেরা জেল অথবা জ্যুস নিতে হবে।
সব একসঙ্গে মিশিয়ে একটা পেস্ট বানিয়ে ফেলতে হবে।
মুখ ও ঘাড়ের আশপাশে এই মাস্ক লাগিয়ে রাখতে হবে।
২০ মিনিট পরে তা ধুয়ে ফেলতে হবে।
এর পর ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে।
সপ্তাহে দু’দিন এটা ব্যবহার করা উচিত।
ডিমের মাস্ক লাগানোর সঠিক পদ্ধতি:
শুধু মাস্কের রেসিপি সঠিক ভাবে অনুসরণ করলেই হবে না, এর পাশাপাশি ডিমের এই সব মাস্ক মুখে লাগানোর সঠিক উপায়ও রয়েছে। রইল সেই সংক্রান্ত কিছু টিপস।
বেশিক্ষণ ধরে মুখে ফেস প্যাক লাগিয়ে রাখা উচিত নয়। শুকিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা ধুয়ে ফেলতে হবে।
মুখ পরিষ্কার করে তবেই এই ফেস প্যাক লাগানো উচিত।
মাস্ক লাগানোর সময় চুলে হেড ব্যান্ড লাগিয়ে নিতে হবে। যাতে তা চুলে না-লেগে যায়।
পুরনো টি-শার্ট পরেই ফেস প্যাক লাগানো উচিত।
অ্যালার্জি প্রতিরোধ করার জন্য ফেস প্যাক লাগানোর আগে একটা প্যাচ টেস্ট করে নিতে হবে।
মাস্ক বা ফেস প্যাক লাগানোর জন্য মেক-আপ ব্রাশ ব্যবহার করা উচিত।
(Disclaimer: এই প্রতিবেদনটি কেবলমাত্র সাধারণ তথ্যের জন্য, তাই বিস্তারিত জানতে হলে সর্বদা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।)