চার বছর আগেও কলকাতা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনে কাজ করতেন পথিকৃত সাহা৷ জানান, "একদিন দমদমের কাছে রাস্তা পার হচ্ছিলাম৷ রোগাপাতলা, অপরিচ্ছন্ন এক কিশোর এসে হঠাৎই আমার পায়ে লুটিয়ে পড়ে৷ টাকার জন্য পাগলের মতো করতে থাকে৷ বুঝতে পারি, ও মাদকাসক্ত৷ আমি ওকে থামাতে চেষ্টা করি৷ না পেরে একসময় ওকে চড় মারি৷ তারপর নিজেই ভেঙে পড়ি৷ এখান থেকেই আমার গল্প শুরু৷"
advertisement
সেদিন থেকেই ওদের জীবন বদলে দেওয়ার চেষ্টা শুরু করেন পথিকৃত৷ সন্ধে হলেই ফুটপাথে শুরু হতো তার ফ্রি টিউশন ক্লাস৷ ১৭টি শিশুকে নিয়ে পড়ানো শুরু করেন তিনি৷ পড়ানোর পাশাপাশি পথিকৃত অনুভব করেছিলেন ওদের কিছু রোজগারেরও প্রয়োজন৷ রাস্তার পাশেই জুস ও জলের বোতলের দোকান খুলে দেন৷ তবে দিনের শেষে যে সবচেয়ে জরুরি জঠর জ্বালা মেটানো!
ওদের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার টানেই চাকরি ছেড়ে দেন পথিকৃত৷ "নিজের পরিবারটাকেও টানতে হবে তো৷ তিন মাস আগে তাই জোম্যাটোতে ডেলিভারি এক্সিকিউটিভ হিসেবে কাজ শুরু করি৷ দমদম এলাকার এক দয়ালু রেস্তোরাঁ মালিকের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয় আমার৷ তারপর থেকেই জোম্যাটোতে ওর রেস্তোরাঁ থেকে অর্ডার দেওয়া খাবার কেউ ক্যানসেল করলেই সেই খাবার তুলে দিই পথশিশুদের মুখে৷ ওর রেস্তোরাঁর বাড়তি খাবারও থাকে ওদের জন্যই৷ এতেই ওদের কখনও সন্ধেবেলার জলখাবার, কখনও রাতের খাবার হয়ে যায়৷"
অন্য রেস্তোরাঁ ও ডেলিভারি বয়দেরও এই কাজে এগিয়ে আসতে আহ্বান জানিয়েছেন পথিকৃত৷ তিনি জানান, "যখনই কোনও কাস্টমার ফুড ডেলিভারি অ্যাপে খাবারের অর্ডার ক্যানসেল করেন রেস্তোরাঁগুলো যদি খাবার তৈরি করে ফেলে তাহলে টাকা রিফান্ড পেয়ে যায়৷ তখন বেশিরভাগ সময়ই রেস্তোরাঁগুলো ডেলিভারি বয়দের হাতে খাবার তুলে দেয়৷ যদি ডেলিভার দেওয়ার পথে খাবারের অর্ডার ক্যানসেল হয় তখন জোমাটো কাস্টমার কেয়ার ডেলিভারি বয়দের সেই খাবার বাড়ি নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়৷ আমি সেই খাবারই ওদের মুখে তুলে দিই৷ যদি সব ডেলিভারি বয়ই এভাবে নিজেদের এলাকার ক্ষুধার্ত শিশুদের মুখে খাবার তুলে দিতে পারে তাহলে অনেক শিশুকেই পেটে কিল মেরে ঘুমোতে যেতে হবে না৷"