অবাক হচ্ছেন? খাস তিলোত্তমায় উত্তর কলকাতার এক থানায় হঠাৎ এসে উপস্থিত একটি ঘোড়া। শনিবারের সন্ধ্যা। থানায় প্রায় সব অফিসারই উপস্থিত। থানার করিডোরে ঘুরছে একটি কালো রঙের ঘোড়া। ছিপছিপে চেহারা, গলায় বেশ কয়েকটি ঘণ্টা বাঁধা। এক ঝলকে দেখে মনে হচ্ছিল অনেকটা পথ ছুটে এসেছে। মায়ায় পড়ে থানার বাইরে আসা ঘোড়াকে জল খাইয়ে দিলেন পুলিশ কর্মীরা । তখনও জানেন না এই ঘোড়া তাঁদের একেবারে ‘ঘোড়দৌড়’ করিয়ে ছাড়বে।
advertisement
আস্তে আস্তে থানার বাইরে এই ‘অতিথি’-কে দেখতে ভিড় জমিয়েছিলেন গিরিশ পার্ক এলাকার মানুষ। কিন্তু এই ঘোড়া এল কোথা থেকে? গিরিশ পার্ক থানার পুলিশ ততক্ষণে খোঁজ শুরু করেছেন এই ঘোড়ার মালিককে। সময় বাড়ছে। সন্ধ্যা থেকে রাত হচ্ছে।
থানায় এসে উপস্থিত কিছু পশুপ্রেমী। তাঁরা থানার কাছে দাবি করছে এই ভাবে ঘোড়া ছেড়ে দেওয়া যাবে না। যথাযথ পশু হাসপাতালে পাঠাতে হবে। এরই মাঝে ঘোড়ার খোঁজে বেরিয়ে এদিক ওদিক ঘুরতে ঘুরতে মালিক মহম্মদ সাদ্দাম এসে হাজির গিরিশ পার্ক থানায়।
থানায় সাদ্দাম দেখে মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছে ঘোড়া। মান অভিমান। তা নজরে পড়ে পশুপ্রেমীদেরও। তাঁরা বেঁকে বসেছেন এই মালিকের হাতে ঘোড়া ছাড়া যাবে না। এই ঘোড়ার মালিক যে তাঁকে দিতে হবে সব কাগজ।
রাজা বাজার এলাকার বাসিন্দা সাদ্দাম ততক্ষণে থানার অফিসারদের বলেছেন এই ঘোড়া পালিয়ে গিয়েছে। তারই ঘোড়া। কিন্তু নথি দেখাতে পারেননি। ঘোড়া নিয়ে কার্যত বিপাকে পড়েছেন পুলিশ। রাত বাড়ছে । প্রায় রাত ২টো, ঠিক হল ঘোড়াকে পাঠানো হবে পশু হাসপাতালে। এল ম্যাটাডোর। ঘোড়াকে তোলা হল গাড়িতে। সেই গাড়ি ছুটল ভাঙড়ের চন্দ্রনেশ্বর। ভোর ভোর ছায়া পশু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল ঘোড়াটিকে।
সোমবার ঘোড়ার মালিকানা দাবি করে ব্যাঙ্কশাল আদালতে হাজির সাদ্দাম। আদালতে তিনি দাবি করেন, শনিবার বিকেলে তাঁদের বাড়ি থেকে ছুটে পালিয়ে যায় এই ঘোড়া। আদালতে জানান, এই ঘোড়াটি বিহারের মোতিহার থেকে কিনেছেন তাঁরা।
সব শুনে আদালত নির্দেশ দিয়েছে, গিরিশ পার্ক থানাকে সাদ্দামের সঙ্গে যোগাযোগ করে ঘোড়া কেনার সমস্ত নথি সংগ্রহ করে আগামী বুধবার আদালতে জমা দিতে হবে। অর্থাৎ সাদ্দামই যে ঘোড়ার মালিক, তা অনুসন্ধান করতে হবে পুলিশকে। আর তাতেই গিরিশ পার্ক থানার পুলিশ অফিসারেরা মনে করছেন এ যেন একটা ঘোড়দৌড়!
