প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা নিয়ে সোমবারই জেলার কয়েকটি জায়গায় বিক্ষিপ্ত বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে। তালিকা নিয়ে বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে কয়েকটি জায়গায়। মনে করা হচ্ছে মঙ্গলবারের এই বৈঠক থেকে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ দিতে পারেন মুখ্যসচিব। পাশাপাশি এই বৈঠক থেকে সমীক্ষা করতে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়লে কী ধরনের পদক্ষেপ করা হতে পারে, তা নিয়েও কিছু নির্দেশ দিতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও গত সপ্তাহেই তিনি বৈঠক করে নির্দেশ দিয়েছিলেন সমীক্ষায় কেউ বাধা দিলে চূড়ান্ত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তবে সোমবার কয়েকটি জায়গায় বিক্ষোভ এবং তালিকা নিয়ে গ্রামবাসীদের তরফে একাধিক অভিযোগের ঘটনা সামনে আসায় মঙ্গলবারে বৈঠককে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
advertisement
আরও পড়ুন: তৃণমূল ঘনিষ্ঠদের বাড়ির কাছেই পরীক্ষাকেন্দ্র, টেট মিটতেই বিস্ফোরক অভিযোগ শুভেন্দুর
আরও পড়ুন: আজ সেই ১২ ডিসেম্বর, মিলবে শুভেন্দুর ভবিষ্য়দ্বাণী? বঙ্গ রাজনীতিতে জল্পনা তুঙ্গে
অন্য দিকে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার উপভোক্তাদের চূড়ান্ত তালিকা ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যেই শেষ করতে হবে বলে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তা না হলে রাজ্যের ‘কোটা’ বা বরাদ্দ হাতছাড়া হতে পারে। কেন্দ্রীয় গ্রামান্নোয়ন মন্ত্রক চিঠি দিয়ে রাজ্যকে জানিয়ে দিয়েছে। শুক্রবারই এই চিঠি পঞ্চায়েত দফতরে এসে পৌঁছেছে। যা হাতে পেয়েই জেলাশাকদের কেন্দ্রীয় সরকারের চিঠির কথা জানিয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। আশা ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের অনীহায় আবাস তথ্য ভাণ্ডার থেকে উপভোক্তাদের নাম নিয়ে যাচাই সমীক্ষার কাজের গতি কিছুটা হলেও শ্লথ হয়েছে। তার মধ্যেই কেন্দ্রীয় গ্রামান্নোয়ন মন্ত্রকের চিঠি উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে রাজ্য প্রশাসনের। মুখ্যসচিব গোটা বিষয়টি জেলাশাসকদের জানিয়ে বার্তায় বলেছেন, উপভোক্তাদের বাড়ি বাড়ি তথ্য যাচাইয়ের সমীক্ষার কাজ শুরু হয়েছে। ফলে শীঘ্রই প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতের কোটা নির্দিষ্ট হয়ে যাবে। কেন্দ্রের স্থির করে দেওয়া ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যেই একশো শতাংশ কাজ শেষ না হওয়াটাই অপ্রত্যাশিত। তাই অপনারা উদ্যোগী হন যাতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই একশো শতাংশ কাজ শেষ করে ফেলা যায়।
মুখ্যসচিবের পাশাপাশি রাজ্য পঞ্চায়েত দফতরের অতিরিক্ত সচিবও আলাদাভাবে কেন্দ্রীয় গ্রামান্নোয় মন্ত্রকের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল গয়া প্রসাদের চিঠিও জেলাশাসকদের পাঠিয়ে দিয়েছে।
কেন্দ্রীয় গ্রামান্নোয়ন মন্ত্রকের চিঠিতে বলা হয়েছে, গ্রামীণ গরিব মানুষের আবাসন সমস্যার সমাধানে ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ২০২৪ সালের মার্চের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা। সারা দেশে এই প্রকল্পের মাধ্যমে ২ কোটি ৯৫ লক্ষ বাড়ি নির্মাণের কথা। ইতিমধ্যেই ২ কোটি ১০ লক্ষ বাড়ি তৈরি হয়ে গিয়েছে। ৩৮ লক্ষ বাড়ি তৈরির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্র চাইছে রাজ্যগুলি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দ্রুত প্রকল্পগুলি রূপায়ণ করুক। সে জন্য উপভোক্তাদের তালিকা তৈরির লক্ষ্যমাত্র ৩১ ডিসেম্বর করা হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে রাজ্য তাদের তালিকায় লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না করতে পারলে যে অংশটা বাকি থাকবে তা অন্য রাজ্যকে বরাদ্দ করা হবে।
কেন্দ্রীয় সরকার ২৪ নভেম্বর রাজ্যকে ১১ লক্ষ ৩৬ হাজার ৪৪৮ বাড়ি তৈরির অনুমোদন দিয়েছে। আবাস তথ্য ভাণ্ডার থেকে ১১ লক্ষ ৩৬ হাজার ৪৪৮ টি বাড়ির অনুমোদন পেয়েছে। আবাস তথ্য ভাণ্ডার থেকে উপভোক্তাদের চিহ্নিত করতে হবে।
এই তথ্য ভাণ্ডারে ৪৯ লক্ষ ২২ হাজার উপভোক্তার নাম রয়েছে। প্রত্যেক গ্রাম পঞ্চায়েতের কোটা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে কত জন উপভোক্তা এই প্রকল্পের সুবিধা পাবে। যেজন্যই গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে বাড়ি বাড়ি গিয়ে যাচাই সমীক্ষার কাজ শুরু করে দিয়েছে। আশা ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ছাড়াও এই সমীক্ষক দলে গ্রামীণ পুলিশ, পঞ্চায়েতের কর্মীরা রয়েছেন। গত ৩ ডিসেম্বর এজন্য সমীক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। পরের দিন থেকেই সমীক্ষার কাজ শুরুর কথা। রাজ্য সরকার উপভোক্তাদের চূড়ান্ত তালিকা তৈরির কাজে বেনোজল ঠেকাতে ত্রিস্তরীয় চেকিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাজ্য সরকার ২৫ ডিসেম্বরের মধ্যে তালিকা তৈরির কাজ শেষ করতে টাইমলাইনও তৈরি করে দিয়েছে।
সোমরাজ বন্দ্যোপাধ্যায়