মার্চ মাসের মাঝামাঝি থেকে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের জন্য রাজ্যজুড়ে স্কুল বন্ধ হয়ে যায়। তারপর থেকে অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার পদ্ধতি শুরু হলেও সরকারি এবং সরকারি নিয়ন্ত্রিত স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা যাতে পিছিয়ে না পড়ে, তার জন্য একাধিক পদক্ষেপ নেয় রাজ্য স্কুল শিক্ষা দফতর। প্রথমত বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল মারফত ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাস নেওয়া হয়। দ্বিতীয়ত, মিড ডে মিল-এর মাধ্যমে অ্যাক্টিভিটি টাস্ক প্রথম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রীদেরকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অর্থাৎ এই অ্যাক্টিভিটি টাস্ক-এর মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের মূল্যায়ন করছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। মূলত এই অ্যাক্টিভিটি টাস্কের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের কাছে বিভিন্ন সাবজেক্ট বা চ্যাপ্টার ধরে ধরে প্রশ্নমালা দেওয়া হচ্ছে এবং সেগুলিকে নির্দিষ্ট দিন অন্তর অন্তর মূল্যায়ন করছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। এছাড়াও রাজ্য স্কুল শিক্ষা দফতরের উদ্যোগে সম্প্রতি নবম দশম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের জন্য শুরু হয়েছে টেলিফোনের মাধ্যমে ক্লাস নেওয়ার প্রক্রিয়া। অর্থাৎ কোনও ছাত্র বা ছাত্রী কোনও সাবজেক্ট বা চ্যাপ্টার নিয়ে বিভ্রান্ত হলে, একটি হেল্পলাইন নম্বর মারফত ফোন করলেই সেই বিষয়ের শিক্ষক বা শিক্ষিকা সহজেই উত্তর দিয়ে দিচ্ছেন। ইতিমধ্যেই এই টেলিফোন মারফত ক্লাস রাজ্য জুড়ে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
advertisement
তবে শুধু নবম-দশম শ্রেণি নয়, টেলিফোনের মাধ্যমে ক্লাস নেওয়ার পরিকল্পনা এবার নেওয়া হচ্ছে ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের জন্যও। কিন্তু তার মধ্যেই অনলাইনে ক্লাস নেওয়া নিয়ে কলকাতা তথা শহরতলি এবং বিভিন্ন জেলার শহরতলি কেন্দ্রিক এলাকাগুলিতে সমস্যা না-হলেও গ্রামাঞ্চলগুলিতে অনলাইন ক্লাসের ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। বিশেষত অনেক ক্ষেত্রে অভিযোগ আসছে, স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারা হোয়াটসঅ্যাপ মারফত প্রশ্নপত্র পাঠিয়ে দিচ্ছেন কিন্তু অনেকের কাছেই স্মার্টফোন না থাকার কারণে সেই সব ছাত্র-ছাত্রীরা পিছিয়ে পড়ছে অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রীদের তুলনায়। আর সেই সব ছাত্র-ছাত্রীদের কথা মাথায় রেখেই এবার নয়া উদ্যোগ হিসেবে রেডিওতে ক্লাস নেওয়ার চিন্তাভাবনা শুরু করেছে রাজ্য স্কুল শিক্ষা দফতর।
রেডিওতে ক্লাস নেওয়ার উদ্যোগকে অবশ্য স্বাগত জানাচ্ছেন শিক্ষাবিদরা। এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার বলেন, "অনলাইনে ক্লাসের ক্ষেত্রে যে সমস্যার মধ্যে পড়ছে ছাত্রছাত্রীরা, রেডিওতে ক্লাস নিলে সব সমস্যার সমাধান হওয়া সম্ভব। এর কারণ গ্রামাঞ্চলের ছাত্র-ছাত্রীদের বাড়িতেও একটি করে রেডিও থাকে। রেডিওর মাধ্যমে ক্লাস নিলে সহজেই গ্রামাঞ্চলের ছাত্র-ছাত্রীরাও রেডিও থেকে শুনেই তাদের পড়াশোনাটা করে নিতে পারবেন। তাই সরকারের এই পরিকল্পনাকে আমি স্বাগত জানাচ্ছি।"
স্কুল শিক্ষা দফতর সূত্রে খবর, এ মাসের শেষে বা সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকে এই প্রসঙ্গ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হতে পারে। যদিও এই বিষয় নিয়ে সিলেবাস কমিটির চেয়ারম্যান অভীক মজুমদার কোন মন্তব্য করতে চাননি।
SOMRAJ BANDOPADHYAY