রোগা ছিপছিপে সৌভিকের চেহারা, শরীরী ভাষায় স্পষ্ট তাঁর আত্মবিশ্বাস ও প্রত্যয় ৷ চিকন কণ্ঠেও ঝরে পড়ছে সেই দৃঢ়তা ৷ জানালেন, ‘‘রেজাল্ট জানার জন্য কোথাও যাইনি ৷ চোখ রেখেছিলাম টিভিতেই ৷’ টিভি থেকেই জানতে পারেন ৫০০-র মধ্যে ৪৯১ পেয়ে তিনি উচ্চ মাধ্যমিকে অষ্টম স্থান পেয়েছেন ৷ এ বার মোট ৫৫ জন পড়ুয়া স্থান পেয়েছেন মেধাতালিকার আট নম্বর জায়গায় ৷
advertisement
বাণিজ্য শাখার ছাত্র শৌভিক পরবর্তীতে উচ্চশিক্ষা করতে চান এই ধারাতেই ৷ তবে তার পর স্বপ্ন একটু অন্যরকম ৷ মেধাবীদের চিরাচরিত স্বপ্ন থেকে কয়েক যোজন দূরে তিনি পা রাখবেন প্রতিরক্ষামূলক কোনও পেশায় ৷ তাঁর কথায়, ‘‘আমি ডিফেন্সেই যোগ দিতে চাই ৷’’ কেন এই স্বপ্ন? একমাথা ছোট ছোট চুল নিয়ে কিশোর জানালেন, তিনি জানেন না এই স্বপ্নের নেপথ্যকারণ ৷ তবে তিনি অনেক দিন ধরে লালন করছেন এই ইচ্ছে ৷ পড়াশোনার পাশাপাশি নিয়মিত চলে সবুজ মাঠে দৌড়নো ৷ মেধাবী ছাত্রের পাশাপাশি তিনি একজন দক্ষ অ্যাথলিটও ৷
আরও পড়ুন : রবীন্দ্র সরোবরে ফের রোয়িং শুরু কি সম্ভব? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?
উচ্চ মাধ্যমিকে অষ্টম হওয়ার পর সবার আগে সৌভিকের মনে পড়েছে তাঁর বাবা মায়ের কথা ৷ মনে হয়েছে স্কুলের শিক্ষক এবং গৃহশিক্ষকদের অবদান ৷ যাঁদের সাহায্য তিনি সব সময় পেয়েছেন যে কোনও সমস্যায় ৷ শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ঝরে পড়ল সৌভিকের মায়ের কণ্ঠেও ৷ মেধাবী ছেলের ভাল ফলের খবর পেয়ে তত ক্ষণে বাড়িতে চলে এসেছেন ৷ কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তারক্ষীর ইউনিফর্ম তখনও তাঁর পরনে ৷ আনন্দঘন এই মুহূর্তে তিনি ভুলতে পারছেন না প্রতিবেশীদের কথাও ৷ পাড়ার কাকিমা, মাসিমারাই দেখে রাখেন সৌভিককে ৷ কারণ তাঁর বাবা মাকে ডিউটির জন্য দিনের বেশিরভাগ সময়েই বাইরে থাকতে হয় ৷ এখন যেখানে পরিবার ভেঙে গিয়েছে অণু পরমাণুতে, দাস পরিবারের বৃহত্তর ছায়া প্রলম্বিত পাড়ার প্রতিবেশীদের মধ্যে৷
আরও পড়ুন : ফের উদ্বোধন করা হবে কামারকুণ্ডু রেল ওভারব্রিজ
তবে দাস পরিবার বেশিদিন চেতলায় এ পাড়ার বাসিন্দা নন ৷ আগে যে বাড়িতে তাঁরা থাকতেন, সেখানে পড়াশোনার পরিবেশ ছিল না ৷ শুধুমাত্র ছেলের পড়াশোনার জন্য পরিবর্তন করেছেন ঠিকানা ৷ মাথা গোঁজার জন্য ঘরের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ৷ তাঁর প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে সৌভিকের পরিবার ৷
দীর্ঘ বন্ধুর পথ পাড়ি দেওয়া দাস পরিবার এখন ভেসে যাচ্ছে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছার স্রোতে ৷ তবে সৌভিক স্রোতে গা ভাসাতে রাজি নন ৷ বরং উজান স্রোতে পাড়ি দেওয়া এই মেধাবী কিশোরের পাখির চোখ প্রতিরক্ষা বিভাগ ৷