তিনি আলো দেখিয়েছিলেন। শিক্ষার আলো। তিনি চেয়েছিলেন ঘরে ঘরে সেই আলো পৌঁছে দিতে। যাতে কেউ নিরক্ষর না থাকেন। অথচ, তাঁর জন্মের দুশো বছরেও, তাঁর গ্রামেই এখনও অনেকে নিরক্ষরতার অন্ধকারে। ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালের বীরসিংহ মৌজায় জনসংখ্যা ৩ হাজার ২৬ এর মধ্যে সাক্ষরের সংখ্যা ২ হাজার ৩৪৩ ৷ নিরক্ষর ৬৮৩ জন অর্থাৎ প্রায় সাড়ে বাইশ শতাংশ।
advertisement
এই বীরসিংহ গ্রামের তিনি ছিলেন সিংহ পুরুষ। তাঁকে ঘিরে হাজারো গল্প। ঈশ্বরচন্দ্র তখন সাত-আট। বাবার সঙ্গে হাঁটতে হাঁটতে কলকাতায় যাচ্ছিলেন। পথের ধারের মাইলস্টোন দেখেই শিখে ফেলেছিলেন ইংরেজি সংখ্যা। কলকাতায় এসে রাস্তার আলোয় তাঁর পড়াশোনার কাহিনি আজও অনেককে লড়াইয়ের শক্তি জোগায়।
১৮৫৫ সালের মে মাসে বিদ্যাসাগরকে সহকারী স্কুল পরিদর্শকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তখন তিনি নদিয়া, বর্ধমান, হুগলি ও মেদিনীপুর জেলায় ২ বছরের মধ্যে ২০টি স্কুল তৈরি করেন। নিজের বীরসিংহ গ্রামেও নিজে খরচে স্কুল তৈরি করেন বিদ্যাসাগর ৷ ১৮৫৭ সালের নভেম্বর মাস থেকে ১৮৫৮ সালের মে মাস পর্যন্ত, দক্ষিণবঙ্গে মেয়েদের জন্য মোট ৩৫টি স্কুল তৈরি করেছিলেন বিদ্যাসাগর।
সেই বিদ্যাসাগরের গ্রামেই এখনও সকলে সাক্ষর নন। তিনি সবসময়েই মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষার পক্ষপাতী ছিলেন। এ জন্য বাংলা বর্ণমালাকে সংস্কৃত ব্যাকরণের নিয়মজাল থেকে মুক্ত করে নির্মেদ ও আধুনিক করে তোলার চেষ্টা করেছিলেন। তাঁর লেখা বর্ণপরিচয় আজও বাঙালিকে বাংলা শেখায়। তাঁর কীর্তিকে মাথায় রেখেই, রাজ্য জুড়ে সাক্ষরতা অভিযানের লক্ষ্যে, বাম আমলে শুরু হয়েছিলে বিদ্যাসাগর মেলা। তাতে সাক্ষরতার হার বেড়েছে। কিন্তু, নিরক্ষরতার অন্ধকার পুরোপুরি মোছা যায়নি। বিদ্যাসাগরের গ্রামেও সেই অন্ধকার আজও রয়েই গিয়েছে।