রবিবার ব্রিগেডের মঞ্চ থেকে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে তৃণমূল৷ শুধু তাই নয়, ৪২ কেন্দ্রের ৪২ প্রার্থীকে সঙ্গে নিয়ে র্যাম্পেও হাঁটেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ এদিন অবশ্য নাম ঘোষণার ব্যাটন অভিষেকের হাতেই তুলে দেন তৃণমূলনেত্রী৷ শুধুমাত্র নিজের কেন্দ্র বাদে বাকি ৪১টি কেন্দ্রের নামই ঘোষণা করেন তিনি৷
কিন্তু, এবারের তালিকায় যেমন প্রথম বারের মতো যুক্ত হয়েছে রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়, সায়নী ঘোষ, দেবাংশু ভট্টাচার্যের মতো নতুন নাম যুক্ত হয়েছে, তেমনই বাদ গিয়েছে বহু পরিচিত পুরনো নামও৷ আসুন এক ঝলকে দেখে নেওয়া যাক সেই তালিকা৷
advertisement
যাদবপুর কেন্দ্র উনিশের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলপ্রার্থী ছিলেন অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তী৷ তবে সম্প্রতি নিজের সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে রাজনীতি ছাড়ার ইচ্ছেপ্রকাশ করেছিলেন মিমি৷ যদিও তেমন জল্পনা তৈরি হয়েছিল দেবকে নিয়েও৷ কিন্তু, দেবের সঙ্গে কথা বলে মিটমাট করে নিয়েও মিমির ক্ষেত্রে তেমনটা কিছু ঘটতে দেখা যায়নি৷ ঘাটাল কেন্দ্র থেকে দেব ওরফে দীপক অধিকারীর নাম ঘোষণা করলেও যাদবপুর কেন্দ্র থেকে বাদ পড়েছে মিমি চক্রবর্তীর নাম৷ বদলে এসেছে তৃণমূল যুবনেত্রী তথা অভিনেত্রী সায়নী ঘোষের নাম৷
ফ্ল্যাট বিতর্কে ইডির তলব থেকে শুরু করে সন্দেশখালি কাণ্ডে অনুপস্থিতি৷ সব মিলেই হয়ত বসিরহাট কেন্দ্র থেকে বাদ পড়েছে নুসরত জাহানের নাম৷
উত্তর ২৪ পরগণার মথুরাপুর কেন্দ্র থেকে বাদ পড়েছে চৌধুরী মোহন জাটুয়ার নাম৷ গত ডিসেম্বরেই নেতার নামে নিখোঁজ পোস্টার পড়েছিল তাঁর সংসদীয় এলাকায়৷ এলাকার মানুষের কাছে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছিল৷
বিধানসভা ভোটের মুখে সাংসদ থাকাকালীনই তৃণমূল ছেড়ে গিয়েছিলেন বিজেপিতে। কয়েক মাস বাদেই হাঁটা দেন ফিরতি পথে। বেশ কিছুটা সময় সুনীল মণ্ডল যে কোন দিকে, তা নিয়েই ধোঁয়াশা ছিল। তারপরে আবার শাসক দলের একটা, দুটো বৈঠক, কর্মসূচিতে মঞ্চে দেখা যায় তাঁকে। লোকসভা ভোটের মুখে প্রশ্ন উঠেছিল বর্ধমান পূর্বের এই সাংসদ আবার টিকিট পাবেন কি না। তবে পাশাপাশি, স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের বক্তব্য ছিল, যেহেতু একবার বিশ্বাসভঙ্গের কাজ করেছেন তাই, তাঁর টিকিট পাওয়া এবার একটু কঠিন ছিল৷ কার্যক্ষেত্রে হলও তাই৷ তফশিলি জাতি সংরক্ষিত বর্ধমান পূর্ব লোকসভা কেন্দ্র থেকে তৃণমূল এবারে প্রার্থী করেছে ডঃ শর্মিলা সরকারকে৷ বাদ গিয়েছে সুনীল মণ্ডলের নাম৷
নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে তাঁর বিরুদ্ধে হাইকোর্টে গিয়েছিলেন বিজেপি নেতা তথা আইনজীবী তরুণজ্যোতি তিওয়ারি৷ তার উপরে স্থানীয় সংগঠনেও ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে পড়ছিলেন অপরূপা পোদ্দার৷ জল্পনা চলছিল, এবার হয়ত আরামবাগ কেন্দ্রে অন্য কোনও মুখের খোঁজ করছে তৃণমূল৷ রবিবার ঘোষিত প্রার্থী তালিকায় আরামবাগ কেন্দ্র থেকে অপরূপা পোদ্দার নয়, মিতালি বাগের নাম ঘোষণা করেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব৷
তবে, বাদের তালিকায় সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য নাম বোধহয় অর্জুন সিং৷ ২০০১ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত তৃণমূলের বিধায়ক থাকার পরে ২০১৯ এ শিবির বদল করেছিলেন অর্জুন সিং৷ যদিও ২০২২ সালের ২২ মে ফের তৃণমূলে ঘর ওয়াপসি হয় তাঁর৷ তবে, এবার যে ব্যারাকপুরের টিকিট তিনি পাচ্ছেন না, ক’দিন আগের একটি ঘটনাতেই তাঁর ইঙ্গিত মিলেছিল৷ এ সপ্তাহের গোড়ার দিকেই নবান্নে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেছিলেন অর্জুন৷ হলও তা-ই৷ চব্বিশের নির্বাচনে ব্যারাকপুর থেকে তৃণমূলের প্রার্থী হচ্ছেন রাজনৈতিক মহলে অর্জুন বিরোধী হিসাবে পরিচিত নৈহাটির তৃণমূল বিধায়ক পার্থ ভৌমিক৷
অর্জুন সিং খাতায়কলমে বিজেপির সাংসদ। তাঁকে তৃণমূলে আনার ব্যাপারে মূল উদ্যোগ ছিল দলের এক রাজ্যসভার সাংসদের। কিন্তু তাতে গোড়া থেকে আপত্তি করছিলেন নৈহাটির বিধায়ক পার্থ ভৌমিক। শুধু একা বিদ্রোহ করা নয়, সূত্রের মতে পার্থ জগদ্দলের বিধায়ক সোমনাথ শাম, নোয়াপাড়ার বিধায়ক মঞ্জু বসু, বীজপুরের সুবোধ অধিকারী এবং আমডাঙার বিধায়ক রফিকুর রহমানকে নিয়ে দল পাকিয়েছিলেন। সোমনাথ শাম দুদিন আগে পর্যন্ত বলেছেন, অর্জুনকে যাতে ব্যারাকপুরে প্রার্থী করা না হয়, সেজন্য তিনি এলাকায় গণসাক্ষর সংগ্রহ করছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে এ ব্যাপারে স্মারকলিপি পাঠাবেন বলে জানিয়েছিলেন তিনি।
সূত্রের খবর, এই অবস্থায় সেদিন অর্জুনকে ডেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, হাওড়া বা হুগলি থেকে প্রার্থী হয়ে যেতে। কিন্তু অর্জুন ব্যারাকপুর ছাড়তে রাজি হননি৷ সূত্রের খবর, রবিবারই নাকি দিল্লি যাওয়ার তোড়জোড় করে দিয়েছেন তিনি৷