স্বভাবতই গোটা দেশের মতো এ রাজ্যের মানুষের মনেও গুলেইন বারি নিয়ে একই সঙ্গে আতঙ্ক এবং কৌতূহলের সৃষ্টি হয়েছে৷ কারণ বড়দের মতো ছোটরাও এই রোগে আক্রান্ত হয়৷ পুণেতে ভয় ধরানো এই রোগ নিয়ে কী বলছেন শহরের বিশিষ্ট চিকিৎসকরা?
শিশুদের জন্য গুলেইন বারি সিন্ড্রোম কতটা ভয়ের, কী বলছেন শহরের চিকিৎসকরা?
advertisement
পার্ক সার্কাসের ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথ- এর অধ্যক্ষ এবং বিশিষ্ট শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জয়দেব রায় জানান, ‘মহারাষ্ট্রে এই রোগের প্রভাবের কথা শুনলেও আমাদের রাজ্যে এখনও পর্যন্ত এই রোগ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়া তো দূর অস্ত, বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ারও কিছু নেই। খুব কম মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হন। এই মুহূর্তে আমাদের হাসপাতালে একজন এই জিবি সিনড্রোমে আক্রান্ত শিশু ভর্তি রয়েছে। শিশুটিকে ভেন্টিলেশনে রাখা হলেও অনেকটাই শারীরিক উন্নতি হয়েছে৷ দ্রুত তাকে ভেন্টিলেশন সাপোর্ট থেকে বার করা হবে। আর একজন শিশু জিবি সিনড্রোম সন্দেহে ভর্তি আছে। বছরের প্রত্যেক সময়ই এই গুলেন বেরি সিন্ড্রোম নামক রোগে আক্রান্ত শিশুরা আমাদের হাসপাতালে ভর্তি হয়। এর মধ্যে কোনও নতুনত্ব কিছু নেই।’
আরও পড়ুন: বিরল রোগ হয়েও পুণেতে ভয় ধরাচ্ছে গুলেইন বারি! কী থেকে সংক্রমণ, খুঁজে পেল স্বাস্থ্য দফতর?
চিকিৎসক প্রভাসপ্রসূন গিরি জানান, ‘এই জিবি সিনড্রোম নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার ন্যূনতম কারণ নেই। দীর্ঘকাল ধরেই এই রোগ আমাদের এখানে রয়েছে। তবে কখনযওই তা ব্যাপক আকার বা অনেকে আক্রান্ত হয়েছে, এমনটি দেখা যায়নি। গত বছর অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বরং এই জিবি সিনড্রমে আক্রান্ত শিশু বেশ কয়েকজন চিকিৎসাধীন ছিল। তবে প্রত্যেকেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে।’
গুলেইন বেরি সিন্ড্রোমের উপসর্গ কী কী?
হাত-পা ঝিনঝিন করছে, চলতে পারছেন না, এমন উপসর্গ নিয়ে রোগী আসেন। হাত দিয়ে কোনও কিছু ধরতে পারছেন না, হতে পারে এমনও। কারও ক্ষেত্রে আবার চোখের পাতা বন্ধ হচ্ছে না, এমনও হতে পারে। তিন থেকে চার দিনের মধ্যে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন রোগী, কারও সাহায্য ছাড়া চলাফেরা করা সম্ভব হয় না।
প্রথমে পা ব্যথা দিয়ে শুরু হয়, আস্তে আস্তে যন্ত্রণা যায় হাত পর্যন্ত। ধীরে ধীরে শুরু হয় পক্ষাঘাত। ফেসিয়াল প্যারালাইসিস বা মুখের অংশেও পক্ষাঘাত হতে পারে। একে বলা হয় অ্যাসেন্ডিং প্যারালিসিস। যদিও এখন মুখ থেকে শুরু করে পা পর্যন্ত অচল হয়ে যাওয়া, কিংবা হাত ও পা পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়া, এমন উপসর্গও দেখা যায়। ১৪ থেকে ১৭ দিনের মধ্যে এই উপসর্গ প্রকট হয়ে ওঠে। ১৫ থেকে ২০ শতাংশ আক্রান্তের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয় শ্বাসনালির পেশী, সেই কারণে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়।
মেডিসিনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাসের কথায়,শরীরের এই অবস্থাকে বলা হয়, অ্যাকিউট ইনফ্ল্যামেটরি পলির্যাডিকিউলো নিউরোপ্যাথি। একগুচ্ছ নার্ভের উপরে এই রোগ হামলা করে বলেই এই নাম। অরিন্দম বিশ্বাস বলেন, ‘এর ফলে নিউরনের মায়েলিন নষ্ট হয়ে যায়। তাই শরীরে স্নায়ুপ্রবাহ চলাচল করতে পারে না। সে কারণেই পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েন রোগী।’
চিকিৎসা পদ্ধতি
প্রবীণ চিকিৎসক সুকুমার মুখোপাধ্যায় জানান,’ইমিউনোগ্লোবিউলিন জাতীয় ওষুধ বা ইঞ্জেকশন স্যালাইনের মাধ্যমে রোগীকে এই রোগের চিকিৎসা করা হয়। এ ছাড়াও প্লাজমা এক্সচেঞ্জ নামক পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় চিকিৎসায়। এটি অনেকটাই ডায়ালিসিসের মতো।’
রাজ্য সরকারের বিবৃতি
এ দিন রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকেও গুলেইন বারি সিন্ড্রোম নিয়ে আশ্বস্ত করে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়েছে৷ সেই বিবৃতিতে রাজ্যের স্বাস্থ্য সচিব দাবি করেছেন, ‘এটা কোনও নতুন বা বিরল রোগ নয়৷ এটা বিক্ষিপ্তভাবে আমাদের রাজ্যে হয়৷ গত ডিসেম্বর মাসের পর থেকে কোনওরকম ভাবেই এই রোগের বাড়বাড়ন্ত হয়নি রাজ্যে৷’