তদন্ত যত এগোচ্ছে, ততই দুই ভাইয়ের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে তদন্তকারীদের মনে৷ পুলিশকে দেওয়া বয়ানে দুই ভাই জানিয়েছেন, ব্যবসায় বিপুল আর্থিক ক্ষতির কারণে বাজারে প্রচুর দেনা হয়ে যায় তাঁদের৷ বার বার বাড়িতে আসছিলেন পাওনাদাররা৷ এর পরই সপরিবারে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা৷ এর আগেও নাকি একবার বাড়ির ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন দুই ভাই৷
advertisement
এ দিন ভোর সাড়ে তিনটে নাগাদ ই এম বাইপাসের অভিষিক্তা মোড়ের কাছে মেট্রো রেলের পিলারে সজোরে ধাক্কা মারে একটি গাড়ি৷ কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ আধিকারিক এবং পথচলতি মানুষ গাড়ি থেকে প্রণয় দে, তাঁর ভাই প্রসূন দে এবং প্রণয়বাবুর বছর ১৪-র ছেলেকে উদ্ধার করে বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে৷
আরও পড়ুন: পায়েসে ঘুমের ওষুধ, দুই মহিলার হাতের শিরা কাটা, গলায় আঘাত! ট্যাংরা কাণ্ডে অনেক প্রশ্ন
তখনই আহত অবস্থায় প্রণয় পুলিশকে জানান, ট্যাংরার বাড়িতে তাঁদের দুই ভাইয়ের স্ত্রী এবং ১৪ বছরের ভাইঝির দেহ পড়ে রয়েছে৷ সবাই আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করেছেন বলে দাবি করেন প্রণয়৷ তিনি আরও দাবি করেন, আত্মঘাতী হওয়ার লক্ষ্য নিয়েই গাড়ি নিয়ে সজোরে মেট্রোর পিলারে গিয়ে ধাক্কা মারেন তাঁরা৷ এই খবর পেয়েই ট্যাংরার অতুল গুহ রোডের বাড়ি থেকে প্রণয়ের স্ত্রী সুদেষ্ণা দে (৪৪), প্রসূনের স্ত্রী রোমি দে (৩৯) এবং তাঁদের ১৪ বছর বয়সি কন্যা প্রিয়ংবদার দেহ উদ্ধার করে পুলিশ৷ প্রণয় এবং প্রসূন আরও দাবি করেছেন, আত্মঘাতী হতেই পায়েসের মধ্যে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খেয়েছিলেন তাঁরা৷ সুদেষ্ণা এবং রোমির হাতের শিরা কাটা ছিল৷ একজনের গলাতেও আঘাতের চিহ্ন ছিল৷ আবার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন প্রণয়ের ছেলের হাতেও কাটা দাগের আঘাত রয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর৷
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গিয়েছে, মঙ্গলবার রাত ১২.৫০ থেকে ১২.৫১-র মধ্যে ট্যাংরার বাড়ি থেকে গাড়ি নিয়ে বেরোচ্ছেন প্রণয়, প্রসূন এবং তাঁর কিশোর ছেলে৷ কিন্তু ৫ কিলোমিটার দূরে ই এম বাইপাসে তাঁদের গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ভোর সাড়ে তিনটে নাগাদ৷ প্রশ্ন উঠছে, গভীর রাতে গাড়িতে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার যেতে তিন ঘণ্টা সময় কেন লাগল প্রণয় এবং প্রসূনের? তাহলে মাঝের সময়টুকু কোথায় ছিলেন তাঁরা?
পুলিশ সূত্রে আরও খবর, গাড়়ি চালাচ্ছিলেন প্রসূন৷ চালকের আসনের বাঁদিকে বসেছিল প্রণয়বাবুর ছেলে৷ পিছনের আসনে ছিলেন প্রণয়৷ দুর্ঘটনার অভিঘাতে গাড়ির এয়ার ব্যাগ খুলে গিয়েছিল৷ এর থেকেই তদন্তকারীদের ধারণা, গাড়ির সামনের আসনে বসে থাকা প্রসূন এবং তার ছেলে সিটবেল্ট পরেছিলেন৷ কারণ সিটবেল্ট না বাঁধা থাকলে এয়ার ব্যাগ খোলার কথা নয়৷ এখানেই তদন্তকারীদের প্রশ্ন, আত্মহত্যা করার পরিকল্পনা থাকলে কেন সিট বেল্ট বেঁধে গাড়িতে বসেছিলেন প্রসূন এবং তাঁর ছেলে?
কলকাতা পুলিশের নগরপাল মনোজ ভার্মা জানিয়েছেন, আপাতত দুই ভাইয়ের বয়ানের সত্যতা যাচাই করে দেখা হচ্ছে৷ তবে এই ঘটনা শুধুই আত্মহত্যা না কি অন্য রহস্য আছে তা এখনও বলার মতো সময় আসেননি বলে জানিয়েছেন নগরপাল৷ তবে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে তিনি জানিয়েছেন, তদন্তকারীদের হাতে আরও কিছু তথ্য উঠে এসেছে৷ যা তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াবে৷ পাশাপাশি ময়নাতদন্ত রিপোর্ট এলেও রহস্যের জট অনেকটা কাটবে৷ এর পাশাপাশি খতিয়ে দেখা হচ্ছে সিসিটিভি ফুটেজ৷ দুই ভাইকে জনকেই জিজ্ঞাসাবাদও চলছে৷ আহত ওই কিশোর অবশ্য ঘটনার অভিঘাতে এতটাই আতঙ্কিত যে তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হচ্ছে না৷ ওই বেসরকারি হাসপাতালের পক্ষ থেকে মনোবিদেরও সাহায্য নেওয়া হচ্ছে৷
ট্যাংরার বাড়ির ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছেন ফরেন্সিক এবং ফিঙ্গারপ্রিন্ট বিশেষজ্ঞরা৷ ময়নাতদন্ত রিপোর্টেরও অপেক্ষায় রয়েছেন তদন্তকারীরা৷ ট্যাংরার ওই বাড়ির ভিতরে থ্রি ডি ম্যাপিং করেছে পুলিশ৷ ই এম বাইপাসের দুর্ঘটনাস্থলে কলকাতা পুলিশের অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ টিমের বিশেষজ্ঞদেরও নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷