প্রসঙ্গত, ময়নাতদন্ত রিপোর্ট থেকে এখনও সম্পূর্ণ স্পষ্ট নয় বাড়ির তিন মহিলার মৃত্যু খুন নাকি আত্মহত্যা। তদন্তকারী আধিকারিকরা দেখছেন, নিজের নলি কেটে, হাত কেটে আত্মঘাতি এইভাবে হতে পারে? নাকি খুন তার তদন্ত করছেন। তদন্ত অনুমান খুনই করা হয়েছে শিশুটিকে। কারন নাক দিয়ে ফ্লুইড বেরিয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হয়েছে একটি ছুরি। সেক্ষেত্রে পুলিশের সন্দেহ আত্মহত্যার চেষ্টায় একে অপরের হাতের নলিও কেটে থাকতে পারেন দুই প্রাপ্ত বয়স্কা মহিলা। তবে তদন্তেই স্পষ্ট হবে আসল কারণ।
advertisement
অন্যদিকে জীবিত তিন সদস্যের শারীরিক অবস্থা বর্তমানে স্থিতিশীল। নাবালকের বাম কাঁধে গতকাল রাতে অস্ত্রপচার সম্পূর্ণ হয়েছে। ডানদিকের হাতে কব্জির ওপরে যে ক্ষতচিহ্ন ছিল সেখানে রিকনস্ট্রাক্টিভ সার্জারি হয়েছে। ডান হাতের আঙুল ভেঙেছে। ধাতব তার দিয়ে ভাঙ্গা আঙুল জো লাগানো হয়েছে। ডান হাতের আঙুলে নন ইনভেসিভ অ্যানেসথেসিয়া প্রয়োগ করা হয়েছে, যাতে আঙুলের ব্যথা কমানো এবং আঙুল সঞ্চালন ভালভাবে করা যায়।
প্রণয় দের শারীরিক অবস্থাও এখন স্থিতিশীল। গতকাল সন্ধ্যা থেকে কোমরের ডান দিকে হাড় ভেঙে যাওয়া জায়গায় অপারেশন হয়। সেখানে ট্রাকশন লাগানো রয়েছে। পলিট্রমা বা শরীরের বিভিন্ন জায়গাতে আঘাত রয়েছে। তবে সেগুলো কোনওটাই খুব আশঙ্কার নয় বলেই জানা গিয়েছে হাসপাতাল সূত্রে। তিনজনের মধ্যে সবথেকে ভাল আছেন প্রণয় দের ছোটভাই প্রসূন দে। অবস্থা বর্তমানে স্থিতিশীল। পলিট্রমা বা শরীরের বিভিন্ন জায়গাতে আঘাত থাকলেও সেগুলোর কোনওটাই খুব ভয়ের কোনও কারণ নয় বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা।
আরও পড়ুন: মহাশিবরাত্রির ঠিক আগের দিনেই বুধের উদয়! হঠাত্ কপাল খুলে যাবে ৫ রাশির, দু’হাত ভরে আসবে টাকা
প্রসঙ্গত, এ দিন ভোর সাড়ে তিনটে নাগাদ ই এম বাইপাসের অভিষিক্তা মোড়ের কাছে মেট্রো রেলের পিলারে সজোরে ধাক্কা মারে একটি গাড়ি৷ কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ আধিকারিক এবং পথচলতি মানুষ গাড়ি থেকে প্রণয় দে, তাঁর ভাই প্রসূন দে এবং প্রণয়বাবুর বছর ১৪-র ছেলেকে উদ্ধার করে বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে৷
তখনই আহত অবস্থায় প্রণয় পুলিশকে জানান, ট্যাংরার বাড়িতে তাঁদের দুই ভাইয়ের স্ত্রী এবং ১৪ বছরের ভাইঝির দেহ পড়ে রয়েছে৷ সবাই আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করেছেন বলে দাবি করেন প্রণয়৷ তিনি আরও দাবি করেন, আত্মঘাতী হওয়ার লক্ষ্য নিয়েই গাড়ি নিয়ে সজোরে মেট্রোর পিলারে গিয়ে ধাক্কা মারেন তাঁরা৷
এই খবর পেয়েই ট্যাংরার অতুল গুহ রোডের বাড়ি থেকে প্রণয়ের স্ত্রী সুদেষ্ণা দে (৪৪), প্রসূনের স্ত্রী রোমি দে (৩৯) এবং তাঁদের ১৪ বছর বয়সি কন্যা প্রিয়ংবদার দেহ উদ্ধার করে পুলিশ৷ প্রণয় এবং প্রসূন আরও দাবি করেছেন, আত্মঘাতী হতেই পায়েসের মধ্যে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খেয়েছিলেন তাঁরা৷ সুদেষ্ণা এবং রোমির হাতের শিরা কাটা ছিল৷ একজনের গলাতেও আঘাতের চিহ্ন ছিল৷ আবার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন প্রণয়ের ছেলের হাতেও কাটা দাগের আঘাত রয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর৷
প্রণয় এবং প্রসূন দে এখনও পর্যন্ত পুলিশের কাছে দাবি করেছেন, দেনার দায়ে জর্জরিত হয়েই সপরিবারে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা৷ সেই উদ্দেশ্যেই পায়েসের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে প্রথমে খান বাড়ির সবাই৷ এর পর কাটা হয়ে হাতের শিরা এবং শরীরের অন্যান্য অংশ৷ যদিও প্রত্যেকেই নিজের নিজের শিরা কেটেছিলেন নাকি কেটে দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে ধন্দ রয়েছে৷ বাড়ির তিন মহিলা সদস্যের মৃত্যুর পর আত্মঘাতী হতেই গাড়ি নিয়ে দুর্ঘটনা ঘটিয়েছিলেন তাঁরা৷