পঞ্চায়েত ভোটে হিংসার অভিযোগ তুলে রাজ্য বিধানসভায় মুলতবি প্রস্তাব এনেছিল বিজেপি৷ সেই প্রস্তাব গ্রহণও করেন স্পিকার৷ জানানো হয়, দুপুর ২টো থেকে এ বিষয়ে আলোচনা করা হবে৷ দুপুর ৩টে নাগাদ শুরু হয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তৃতা৷
advertisement
কিন্তু, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বলা শুরুর মিনিট তিনেকের মধ্যেই ‘সেম সেম মুখ্যমন্ত্রী’ শ্লোগান তুলে কালো পতাকা দেখিয়ে অধিবেশন কক্ষ থেকে বেরিয়ে যান বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সহ অন্য বিজেপি বিধায়কেরা৷ তবে তারপরেও অবশ্য নিজের বক্তৃতা চালিয়ে যান মুখ্যমন্ত্রী৷
এদিন মমতা বক্তব্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল ‘নন্দীগ্রাম’ প্রসঙ্গ৷ একুশের বিধানসভা নির্বাচনে নন্দীগ্রামের সেই দ্বৈরথ৷ সম্মুখ সমরে ছিলেন মমতা এবং শুভন্দু৷ ২ মে ভোট গণনা চলাকালীনও দিনভর ছিল টানটান উত্তেজনা৷ গণনার শেষের দিকে এক সময় শোনা যায়, এই হাই ভোল্টেজ লড়াইয়ে এগিয়ে রয়েছেন তৃণমূলনেত্রী৷
কিন্তু, তার কিছুক্ষণ পরেই আসে বদল৷ জানানো হয়, মমতা নন, ১৯৫৬ ভোটে নন্দীগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রে জয়ী হয়েছেন বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী৷ এর মাঝে প্রায় ২ ঘণ্টা গণনা কেন্দ্রে বিদ্যুৎ ছিল না বলে দাবি করে তৃণমূল৷ তারপরেই বিষয়টি নিয়ে শুরু হয় তুমুল বিতর্ক৷ ঘটনা গড়ায় আদালত পর্যন্ত৷ যার মীমাংসা এখনও হয়নি৷
আরও পড়ুন: অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি! নিয়োগের নয়া দুর্নীতিতে ‘মানিকের মানি ট্রেলে’র খোঁজে এবার ইডি
তৃণমূলের তরফে বার বার এ নিয়ে কথা বলা হলেও এদিন প্রথমবার তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে শোনা গেল সেই কথা৷ তা-ও আবার বিধানসভায় দাঁড়িয়ে, অধিবেশন কক্ষের মধ্যে৷ এদিন মমতা বলেন, ‘‘তৃণমূলকে খালি গালাগাল দিলেন। অথচ যারা পঞ্চায়েতকে কলুষিত করেছেন তাদের কথা বলেননি। আর যিনি শেষ বললেন, তিনি আগে এই দলে ছিলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন ভোটের সময় কটা মিটিং ডেকেছিলেন৷ চিরকুটে বদল হয়েছিল আধিকারিক৷ নন্দীগ্রামের ঘটনা ভুলে গেছেন। আলো বন্ধ করা হয়েছিল৷ দু-ঘণ্টা আলো বন্ধ হয়ে গেল কেন?’’
শুভেন্দুও অবশ্য এ বিষয়ে পাল্টা উত্তর দিতে পিছপা হননি৷ এদিন সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, ‘‘আমি জিতেছি তাই আপনি কমপার্টমেন্টাল চিফ মিনিস্টার৷ মামলা করলেন দুবছরের বেশি হয়েছে। কিন্তু তোলেন না। রিড সব কানে শোনা৷ অধ্যক্ষ আমাকে অভিনন্দন জানাতে দেননি কিছু না থাকা সত্ত্বেও৷ শুভেন্দুর জন্য সাব জুডিস হয়৷ মমতা বন্দোপাধ্যায়ের হয় না৷ প্রথম যদি লিডার অফ হাউস হয়, দ্বিতীয় লিডার অফ অপোজিশন৷’’
সাংবাদিক বৈঠকে কথা বলার সময় হিংসা প্রশ্নেও মমতার সরকারের তুলোধনা করেন বিরোধী দলনেতা৷ বলেন, ‘‘উনি পুলিশ মন্ত্রী হিসেবে ব্যর্থ৷ গত দুবছরে পুলিশ কোর্টে রোজ কানমলা খায়৷ এরকম চ্যালেঞ্জে আগে কোনও দিন পাননি। সিপিএম-কংগ্রেসকে ম্যানেজ করে রেখেছিলেন। ভগবান ওনাকে ক্ষমা করুন৷’’
ভোট লুট নিয়েও জোরাল অভিযোগ তোলেন শুভেন্দু৷ বলেন, ‘‘বিজেপির সংগঠন নাকি নেই যেখানে আমাদের এমপি, এমএলএ বিজেপির নেই৷ তাহলে লুট কেনও? ব্যালট খেয়েছেন কেনও? ডিএমরা ডবল ডবল ব্যালট ছাপিয়েছে কেন? আমি বলেছি কত ভোটাট কালি লাগাতে পারেনি৷ ১ কোটি ভোটারকে ভোট দিতে দেননি৷ গণনায় চার হাজার। আমরা জিতেছি হারাকে সাটিফিকেট দিয়েছে৷ আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে না বলে দিকভ্রান্ত৷’’
মমতা অবশ্য বক্তব্য, ‘‘লুট লুট বলছে, সব ঝুট ঝুট ঝুট৷ লুট হলে বাকিরা আসন পেল কী করে? মানুষ ভোট না দিলে আমি কি করতে পারি? আমরা ভোট পেয়েছি মানুষের কল্যাণকর কাজের জন্য। সামাজিক কাজের জন্য।’’