বিধানসভার বিগত অধিবেশনে রাজ্যের নদী ভাঙনের মত সমস্যার সমাধানে কেন্দ্রীয় সহায়তা পেতে প্রধান বিরোধী দল বিজেপির সাহায্য চান মুখ্যমন্ত্রী। নীতিগত ভাবে সেই প্রস্তাবে রাজিও হয় বিজেপি। বিজেপির থেকে প্রাথমিক সম্মতি পাওয়ার পরেই বিষয়টি নিয়ে বিধানসভায় সরকারিভাবে প্রস্তাব আনা হয়। সেই প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নেয় বিজেপি। আলোচনায় স্থির হয়,কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে এ বিষয়ে দরবার করতে বিধানসভা থেকে সর্বদলীয় প্রতিনিধিদল পাঠানো হবে দিল্লিতে। সেই প্রতিনিধি দলে বিজেপিকে সামিল হতে আর্জি জানায় শাসক দল।
advertisement
সরকারি প্রস্তাবে নীতিগত ভাবে রাজি হলেও বিধানসভার বাইরে বিজেপির মুখ্য সচেতক মনোজ টিগ্গা বলেন, সভায় বিরোধীদল নেতা উপস্থিত ছিলেন না। সে কারণে সরকারের এই প্রস্তাবের বিষয়টি তিনি বিরোধী দলনেতাকে জানাবেন। বিজেপি পরিষদীয় দলের নেতা হিসাবে তিনিই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
আরও পড়ুন: বিরোধী দলনেতার সভা দেখে তৃণমূলের ভয়! শুভেন্দুর দাবিতে তুমুল শোরগোল
টিগ্গার এই মন্তব্যে সিঁদুরে মেঘ দেখে তৃণমূল। পরের দিনেই বিষয়টি নিয়ে অধিবেশন কক্ষের মধ্যেই মনোজ টিগ্গার সঙ্গে আলোচনা করেন পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। শোভনদেবকে বিরোধী দলনেতার সঙ্গে সরসরি কথা বলে জট খোলার পরামর্শ দেন টিগ্গা। টিগ্গার পরামর্শ মতোই শোভনদেব বিরোধী দলনেতার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন। পরে শোভনদেব জানান, তার সঙ্গে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর কথা হয়েছে। বিরোধী দলনেতা তাকে বলেছেন, দিল্লিতে সরকারিভাবে যে প্রস্তাবটি পাঠানো হবে তার বয়ান পাঠালে, তা নিয়ে বিধায়কদের সঙ্গে ও দলে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানাবেন।
আরও পড়ুন: হঠাৎ শিরোনামে নন্দীগ্রাম, সমবায় ভোট ঘিরে রণক্ষেত্র পরিস্থিতি! কী হল, জানেন?
এরপর, গত ১২ ডিসেম্বর তিনি সরকারি প্রস্তাবটি বিরোধী দলনেতার দফতরে পাঠিয়ে দেন। সাত দিন কেটে গেলেও কোনও উত্তর না পেয়ে তিনি আবার যোগাযোগের চেষ্টা করেন শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে। কিন্তু, একাধিকবার ফোন করলেও, শুভেন্দু তার ফোন ধরেননি।
আজ বিধানসভায় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় জানান, 'বিজেপি প্রতিনিধি দলে যোগ না দিলে জানুয়ারিতে তৃণমূল একাই রাজ্যের স্বার্থে দিল্লি গিয়ে দরবার করবে।'
এদিকে, শোভনদেবের এই মন্তব্যের পরেই মুখ খুলেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বিধানসভার বাইরে শুভেন্দু বলেন, তারা তৃণমূলের সঙ্গে দিল্লি যাবেন না। শোভনদেবের ফোনও ধরবেন না। যদিও, তার জন্য তৃণমূলকেই কাঠগড়ায় তুলে সর্বদলীয় প্রস্তাব নিয়ে রাজনীতি করার অভিযোগ তুলেছেন শুভেন্দু। এই প্রশ্নে শুভেন্দুর পাশেই দাঁড়িয়েছে দল। বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ''শুভেন্দু অধিকারী ঠিক কাজই করেছেন। অবস্থান থেকে সরে দাঁড়ানোর বিষয় নয়, তৃণমূল কোনও রকম আলোচনা ছাড়াই একতরফা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।"
রাজনৈতিক মহলের মতে, সর্বদলীয় প্রতিনিধি দলে বিজেপিকে সামিল করার মধ্যে তৃণমূলের রাজনৈতিক কৌশল অবশ্যই ছিল। নদী ভাঙনের মতো রাজ্যের সমস্যায় কেন্দ্রের কাছে দরবার করতে বিজেপির সাহায্য চেয়ে তৃণমূল বোঝাতে চেয়েছিল, রাজ্যের স্বার্থে, রাজনৈতিক মত পার্থক্য ভুলে, প্রতিপক্ষের সঙ্গেও একসাথে চলতে পারে তৃণমূল। সর্বদলীয় প্রতিনিধিদলে যুক্ত না হওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণায়, তারা যে সাফাই দিক না কেন, বিজেপির গায়ে রাজ্যের স্বার্থ বিরোধী তকমা সেঁটে দিতে রাজনৈতিক ভাবে সফল হবেন মমতা।