সিনেমাকেও হার মানাবে শুভব্রতর কাহিনি ৷ প্রায় তিন বছর ধরে বাড়িতে মায়ের মৃতদেহ আগলে ধরে রেখেছিল সে ৷ বাড়িতে একটি ফ্রিজারে মায়ের দেহ রেখে দিয়েছিল ৷ কিন্তু কেন সে এমনটা করেছিল ? মায়ের প্রতি ভালবাসা থেকেই ? নাকি এর পিছনে ছিল অন্য কোনও কারণ ? পুলিশের অনুমান, পেনশন তুলতেই মৃত মায়ের টিপ সই নিত শুভব্রত ৷ মৃত্যুর পরেও যাতে নিয়মিত মায়ের পেনশন পাওয়া যায়, তার জন্যই দেহ সংরক্ষণ করে ফ্রিজারে ঢুকিয়ে রেখেছিল সে ৷ এদিন মরা মাকে বাঁচাতে দেহ সংরক্ষণ নিয়ে গবেষণা করতে চেয়েছিলেন ছেলে শুভব্রত মজুমদার। জেমস লং সরণির ঘটনায় প্রাথমিক তদন্তে এমনটাই সন্দেহ পুলিশের।
advertisement
এদিন দফায় দফায় জেরা করা হয় শুভব্রতকে। উত্তরে একাধিক অসঙ্গতি। অবশেষে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সাহায্য। বেহালার জেমস লং সরণির ঘটনায় গ্রেফতার শুভব্রত মজুমদার বারবার পুলিশের কাছে দাবি করেন, দেহ সংরক্ষণ গবেষণায় তাঁর মা বেঁচে উঠবেন। সে কাজই তিনি করছিলেন। স্কিৎজোফ্রেনিয়ার মতো রোগে আক্রান্ত শুভব্রত, প্রাথমিক পরীক্ষার পর এটাই ইনস্টিটিউট অফ সাইকিয়াট্রিকের বিভাগীয় প্রধান প্রদীপ সাহার দাবি ।
মায়ের মৃতদেহ কীভাবে এতদিন বাড়িতে সংরক্ষণ করেছিল শুভব্রত ? সামনে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য
কেন মায়ের দেহ সংরক্ষণ করেছিলেন ? কী ভাবে মায়ের টিপসই দিয়ে ব্যাঙ্কে টাকা তুলতেন ? কোনও ব্যাঙ্ককর্মী কি আপনাকে এই টাকা তুলতে সাহায্য করতেন ? আপনি কী সত্যিই লাইফ সার্টিফিকেট জমা দিতেন ? বেহালার ঘটনায় গ্রেফতার শুভব্রতকে শুক্রবার জেরা করতে গিয়ে এসব প্রশ্নই করেছে পুলিশ। জবাবে একাধিক অসঙ্গতির মধ্যেও পুলিশের দাবি বারবার মাকে বাঁচিয়ে তোলার কথাই বলেছেন শুভব্রত। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে আদালতে পেশের আগেই ইনস্টিটিউট অফ সাইকিয়াট্রিতে পাঠানো হয় তাঁকে।
মা বীণা মজুমদার মারা যাওয়ার পরেই লেদার টেকনোলজির ছাত্র শুভব্রত দেহ সংরক্ষণ নিয়ে পড়াশুনা শুরু করেন। রুশ-সহ পাঁচটি বিদেশি ভাষা জানার সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে চিন-জাপান থেকে মেডিক্যাল জার্নাল আনাতেন। ইন্টারনেটেও দীর্ঘ সময় কাটাতেন। বাবা গোপাল মজুমদারকেও বুঝিয়েছিলেন তাঁর গবেষণার সূত্রেই মা ফিরে আসবেন। এ সংক্রান্ত প্রচুর জার্নাল তাঁর বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে। শুভব্রত যে দেহ সংরক্ষণ গবেষণা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল তা এদিন টের পেয়েছেন চিকিৎসকরা। প্রায় তিন ঘণ্টার কথায় চিকিৎসকদের তিনি জানিয়েছেন, মা ফিরে আসবেন। তবে সঙ্গে আসবে প্রলয়। হয়তো আরও একটা বিশ্বযুদ্ধ। মায়ের সঙ্গে পৃথিবীকে বাঁচানোও তাঁর কাজ।
ইনস্টিটিউট অফ সাইকিয়াট্রির বিভাগীয় প্রধান প্রদীপ সাহার দাবি খুব ঠান্ডা মাথায় তাঁদের এই কথা জানিয়েছেন শুভব্রত। জেমস লং সরণির এই বাসিন্দা দাবি করেছেন, রাশিয়ান ইনক্রিপশন আর জার্মান কাউন্সিলরের রিপোর্টের জন্য তিনি অপেক্ষা করছেন। সঙ্গে এমন দু’টি শব্দ শুভব্রত ব্যবহার করেছেন, যা বেশ নতুন ঠেকেছে চিকিৎসকদের কাছে। জেমস লং সরণির ঘটনায় নতুন তথ্য পেতে এদিন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় বীণা মজুমদারের স্বামী গোপাল মজুমদারকেও। সব মিলিয়ে এখনও রহস্যে জমজমাট জেমস লং সরণির মৃতদেহ সংরক্ষণ কাণ্ড ৷