রাজ্যের রাজ্যপাল হয়ে আসার পরে বিধানসভায় সি ভি আনন্দ বোসের এটাই প্রথম ভাষণ। সাধারণত, বিধানসভায় নতুন বছরে প্রথম অধিবেশন শুরু হয় বাজেট অধিবেশনের মাধ্যমে। প্রথাগত ভাবে, বিধানসভার সেই অধিবেশনের শুরু হয় রাজ্যপালের ভাষণ দিয়ে। আর, রাজ্য সরকারের বক্তব্যই ভাষণ আকারে পাঠ করেন রাজ্যপাল। সঙ্গত কারণেই, এদিন বিধানসভায় যে ভাষণ রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস পাঠ করেছিলেন, তার ছত্রে ছত্রে ছিল রাজ্য সরকারের কাজের প্রশস্তি।
advertisement
আরও পড়ুন: বিধানসভায় বেনজির কাণ্ড! রাজ্যপালের প্রথম ভাষণের মাঝেই ওয়াক আউট বিজেপির
রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস তাঁর লিখিত ভাষণে বলেছেন, ''আমার সরকার রাজ্য পরিচালনার ক্ষেত্রে যে সমস্ত অত্যন্ত জনপ্রিয় ও জনমুখী নীতি অবলম্বন করেছে তার ফলে এই রাজ্য সাধারণ মানুষের প্রাথমিক চাহিদাগুলি মেটানোর নিরিখে দেশের মধ্যে অগ্রণী রাজ্যগুলির অন্যতম হয়ে উঠেছে। তবে, যে তিনটি ক্ষেত্রে এ বছর আমরা বিশেষ সাফল্য অর্জন করতে পারিনি সেগুলি হল -- এম জি এন আর ইজিএ, গ্রামীণ আবাসন ও গ্রামীণ সড়ক। ২০২১ - ২২ সাল পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ এই ক্ষেত্রগুলিতে প্রথম স্থানে ছিল। কিন্তু, এ বছর রাজ্য এখনও পর্যন্ত কেন্দ্রের কাছ থেকে তার প্রাপ্য টাকা পায়নি। ১১ হাজার ৮০০ কোটি টাকারও বেশি পাওনা বকেয়া হয়ে রয়েছে।"
রাজ্যপালের মুদ্রিত ভাষণের ৩৯ ও ৪০ অনুচ্ছেদে কেন্দ্রীয় প্রকল্পে রাজ্যকে অর্থ বরাদ্দ না করার এই অভিযোগ নতুন কিছু নয়। কিন্তু, সেই অভিযোগ খোদ রাজ্যপালের মুখে? এরই তীব্র সমালোচনা করেছে বিজেপি। বিজেপি বিধায়ক ও বিশিষ্ঠ অর্থনীতিবিদ ডক্টর অশোক লাহিড়ী বলেন, "আমরা জানি এই ভাষণ গোটাটাই রাজ্য সরকারের তৈরি। রাজ্যপাল পাঠ করেন মাত্র। কিন্তু, তাই বলে তো রাজ্যের যা খুশি দাবি বা অভিযোগকে রাজ্যপাল মেনে নিতে পারেন না। রাজ্যপাল কাঠপুতুল নন। সেক্ষেত্রে, রাজ্যপালও তার দায় এড়াতে পারেন না।"
আরও পড়ুন: ফের মিলল কোটি টাকা, কয়লা কাণ্ডে কলকাতায় বিরাট অভিযান ইডির! মিলবে আরও টাকা
রাজ্যপাল আনন্দ বোসের এই ভাষণের পর অনেকেই আজকের দিনের ছবির সঙ্গে বিগত বছর বাজেট অধিবেশনের ছবিটা মেলাতে চেয়েছেন। পর্যবেক্ষকদের চোখে সেদিন রাজ্যপালের এই ভাষণ নিয়ে নবান্ন ও রাজভবনের মধ্যে টানাপোড়েন চরমে উঠেছিল। অধিবেশনের আগে রাজ্যের তৈরি ভাষণের কপি ২ দফায় নবান্নের কাছে চেয়ে পাঠিয়েছিলেন তদানীন্তন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। রাজ্যের তৈরি সেই ভাষণের বেশ কিছু জায়গায় সংশোধন না করলে তাঁর পক্ষে ভাষণ পাঠ করা সম্ভব হবে না বলেও রাজ্যকে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন ধনকড়। কিন্তু, রাজ্য পরিবর্তনে রাজি হয়নি। শেষপর্যন্ত, বাজেটের মতো বিষয়ে সাংবিধানিক সংকট এড়াতে ভাষণের একটি বাক্য পাঠ করেই 'নিয়মরক্ষার ভাষণ' শেষ করেছিলেন তিনি।
আর, এবার ছবিটা একেবারে বিপরীত। এবার, বিজেপি সহ সমস্ত বিরোধীরা যখন আগাম আশঙ্কাপ্রকাশ করে দাবি করেছিল, শিক্ষা থেকে স্বাস্থ্য - নানা কেন্দ্রীয় প্রকল্পে রাজ্যের বিরুদ্ধে সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগকে ঢাকতে কৌশলে রাজ্যপালের ভাষণে রাজ্যপালকে দিয়ে সরকারের গুনগান করানো হবে, তখন বর্তমান রাজ্যপাল আনন্দ বোস আগেই জানিয়ে ছিলেন তিনি তাঁর সরকারের 'পূর্ণাঙ্গ ভাষণ' পাঠ করতে চান।
বিধানসভায় বাজেট অধিবেশনের শুরুর দিনেই বেনজির ঘটনার থাকে সাক্ষী রাজ্য। রাজ্যপালের ভাষণের মাঝখানেই হই হট্টগোল শুরু করে দেন বিজেপি বিধায়কেরা। তাঁর বক্তৃতার মাঝেই জয় শ্রীরাম স্লোগান তোলে বিজেপি। রাজ্যপালের বক্তৃতার মাঝেই ওয়াকআউট। গোটা ঘটনার তীব্র নিন্দায় সরব তৃণমূলও।
বুধবার রাজ্যপাল বক্তৃতা পাঠ করা শুরুর পর পরই বিধানসভায় হট্টগোল শুরু করে দেন বিজেপি বিধায়কেরা। যার জেরে কার্যত রাজ্যপালের বক্তৃতার কোনও শব্দই স্পষ্ট ভাবে শোনা যায়নি এদিন। শুধু তাই নয়, রাজ্যপালের বক্তৃতার মঝেই বিধানসভা কক্ষ থেকে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে ওয়াক আউট করেন বিজেপি বিধায়কেরা। অভিযোগ, এই সময় রাজ্যপালের দিকে আঙুল উঁচিয়ে শুভেন্দু অধিকারীকে 'শেম শেম' বলতেও শোনা যায়।