TRENDING:

নিজের ভালবাসা লুকিয়ে কমলা বাঈ বলল, ‘এই নিঃশ্বাসে বিষ আছে, আমার কাছে এসো না বাবু’

Last Updated:

যে গলিতে গেলে আহ্বানের কলরব পড়ে যেত, তাঁরা আজ আর কেউ নেই। বিল্ডিংয়ের তলাতে বিহারী ঠেলাওয়ালা আর কিছু দালাল বসে তাস খেলছে। এদিক ওদিক তাকালে আর কেউ নেই। সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই ওঁরা হকচকিয়ে গেল।

impactshort
ইমপ্যাক্ট শর্টসলেটেস্ট খবরের জন্য
advertisement
SHANKU SANTRA
advertisement

#কলকাতা: 'বাবু কাছে এসো না। আমার নিঃশ্বাসে বিষ আছে।' এই কথা শুনে কমলা বাঈকে বুকের কাছে টেনে নিয়ে বাবু বলেছিল, 'আমি ওই বিষেই মরতে চাই।' এটি একটি বিখ্যাত নাটকের সংলাপ ছিল। নর্তকী আর পতিতালয়ের ভালবাসার গল্প বহু রয়েছে। একবার না গেলে ওখানে, জীবনের ইতিহাসে স্মৃতিটা যেন রোমন্থনের রস হারিয়ে ফেলে। কমলা বাঈ আর নেই। সবই পুরানো মড়মড়ে পৃষ্ঠার আড়ালে লুকিয়ে পড়েছে।

advertisement

বেলা তখন সাড়ে চারটে। দাঁড়িয়ে সোনাগাছির গঙ্গা-যমুনা বিল্ডিংয়ের সামনে। রাস্তা থেকে বাড়ি গুলির সামনে একটা রুক্ষ আস্তরণ পড়ে গিয়েছে। যে গলিতে গেলে আহ্বানের কলরব পড়ে যেত, তাঁরা আজ আর কেউ নেই। বিল্ডিংয়ের তলাতে বিহারী ঠেলাওয়ালা আর কিছু দালাল বসে তাস খেলছে। এদিক ওদিক তাকালে আর কেউ নেই। সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই ওঁরা হকচকিয়ে গেল। এখন আর কাউকে পাওয়া যাবে না, বলে জানিয়ে দিলেন ওঁরা। কেন? উত্তর, বাবু কী একটা ভাইরাস এসেছে, স্পর্শ করলেও, নিঃশ্বাস গায়ে লাগলেও নাকি রোগ হচ্ছে। ওই রোগ হলে মারা যাচ্ছে মানুষ। ভয়ে সব মেয়েরা পালিয়েছে। যাঁরা আছে, তাঁরা আর এখন নেবে না। এখান থেকে চলে যান। পুলিশ খুব মারছে ।

advertisement

গলিটা একেবারে ফাঁকা। শ্মশানপূরী হয়ে গিয়েছে। এই যৌনপল্লীতে পঞ্জীকৃত ২৮ হাজার যৌনকর্মী থাকত। সব যেন কর্পূরের মত উবে গেছে।গলি থেকে বেরোতে গিয়ে, বিল্ডিং ম্যানেজার মহেশের সঙ্গে দেখা। ওঁকে জিজ্ঞাসা করলাম সব বন্ধ? ও বলল, হ্যাঁ দাদা। এখন নিঃশ্বাসকে আর বিশ্বাস নেই। এক মিটার দূরে থাকতে বলছে সবাইকে। মনে পড়ে গেল সেই নাটকের সংলাপটা। আবেগের নিঃশ্বাসে, নিঃশ্বাস মিললে ক্ষতি নেই।এখনকার নিশ্বাসকে মানুষ আর বিশ্বাস করছেন না। তাই ভালোবাসাও উড়ে গিয়েছে। শহরে হাঁটলে বোঝা যায়, প্রতিটি মানুষের চোখে যেন আতঙ্কের ছায়া। শত্রুকে কেউ দেখতে পায় না। তবুও ভয়ে কম্পমান এই মানব জাতি। যতই বিজ্ঞান এগিয়ে থাক, সারা পৃথিবী আবার অতিপ্রাকৃতের প্রার্থনা করছে।

advertisement

কত ক্ষণিকের ভালোবাসা, চলমান ভালোবাসা, এই দর্জি পাড়ার গলিতে রয়েছে। কত মেয়ে নিশুতি রাতে, এই সব দালানে, বিয়োগ আর কষ্ট যন্ত্রণাতে মুখে কাপড় গুঁজে, গুমরে গুমরে কেঁদেছে। কেউ কেউ আবার যতদিন না ধাতস্ত হয়েছে, ততদিন তাঁদের কুটিরের মধ্যে আটকে রেখেছিল পাষাণরা। কত বাবুর, কত টাকা দিয়ে কেনা ভালোবাসা অনিচ্ছা সত্ত্বেও সম্মতি দিতে হয়েছে এই মেয়েদের। মদ্যপের অত্যাচার আজ আর নেই।কেউ জ্ঞানে বা অজ্ঞানে জড়িয়ে ধরে না। মুখের কাছে মুখ এনে প্রতিশ্রুতি দিতে সাহস পায় না। রোজগার নেই। পশুর মত জোয়াল টানার কষ্ট নেই।আর্থিক অনটন জড়িয়ে ধরছে। তবুও পরিষ্কার আকাশের নীচে দূষণমুক্ত পৃথিবীটা যেন প্রতি সকালেই ফিকে হচ্ছে ওঁদের কাছে।

advertisement

সেরা ভিডিও

আরও দেখুন
লালগোলাতে রাজরাজেশ্বরী রূপে পূজিতা হন মা কালী! দেওয়া হয় ইলিশের ভোগ
আরও দেখুন

তবে আশা, আবার একটা নতুন পৃথিবী নতুন দেশ দেখার। যাঁদের শপথের মূল্য থাকবে। প্রকৃতির অসুর হবে না এই মানুষরা। তবে এই করোনা বুঝিয়ে দিয়েছে নিঃশ্বাসে সত্যিই বিষ আছে।

বাংলা খবর/ খবর/কলকাতা/
নিজের ভালবাসা লুকিয়ে কমলা বাঈ বলল, ‘এই নিঃশ্বাসে বিষ আছে, আমার কাছে এসো না বাবু’
Open in App
হোম
খবর
ফটো
লোকাল