কারা এই মতুয়া সম্প্রদায়? ওড়াকান্দি কীভাবে তাদের তীর্থস্থান হল?
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের নিম্ন বর্ণ হিসেবে বিবেচিত নমঃশূদ্র গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত সম্প্রদায়কেই মতুয়া সম্প্রদায় বলা হয়। সনাতন হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি বিশেষ সম্প্রদায় এই মতুয়ারা, যারা হরিচাঁদ ঠাকুরকে তাঁদের দেবতা বলা গণ্য করেন।গোপালগঞ্জের ওড়াকান্দিতে প্রায় ২১০ বছর আগে জন্ম হয় হরিচাঁদ ঠাকুরের, যিনি এই মতুয়া সম্প্রদায়ের সূচনা করেন। পরে তাঁর ছেলে গুরুচাঁদ ঠাকুরের মাধ্যমে বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পরে মতুয়া মতবাদ। ওড়াকান্দিতে হরিচাঁদ ঠাকুর ও গুরুচাঁদ ঠাকুরের বাসস্থান ও আশেপাশের এলাকা মতুয়াদের কাছে পবিত্র স্থান হিসেবে গণ্য হয়ে থাকে। মতুয়াদের প্রধান মন্দিরও এখানেই। সে সময় অবহেলিত, পিছিয়ে পড়া মানুষের অধিকার আদায় ও উন্নয়নের জন্য হরিচাঁদ ঠাকুর ও গুরুচাঁদ ঠাকুর প্রভূত আন্দোলন করেন বলেই জানা যায়।
advertisement
ভারত সহ আশেপাশের দেশে মতুয়া যোগ :
মতুয়া আন্দোলন মূলত ওড়াকান্দি কেন্দ্রিক হলেও ভারত স্বাধীন হওয়ার পরে এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পর বিভিন্ন সময়ে মতুয়াদের একটা বড় অংশ ভারতে চলে আসে। উত্তর চব্বিশ পরগণার ঠাকুরনগরে নিজেদের ধর্মীয় কেন্দ্র গড়ে তোলেন তাঁরা। বাংলাদেশে মতুয়াদের উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সুব্রত ঠাকুর বলেন তাঁর বাবার এক ভাই ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হওয়ার পর পশ্চিমবঙ্গে চলে যান, তাঁরই উত্তরসূরিরা বর্তমানে মতুয়া সম্প্রদায়ের নেতা হিসেবে রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন পশ্চিমবঙ্গে।
পশ্চিমবঙ্গ নির্বাচনে মতুয়া ভোট, পরিসংখ্যান যা বলছে :
রাজনৈতিক পশ্চিমবঙ্গে ৮ দফা বিধানসভা নির্বাচনের মতুয়ারাই বিজেপির কাছে গুরুত্বপূর্ণ নির্ধারক। মোট ২৯৪টি বিধানসভা কেন্দ্রের ৮৪টিতে মতুয়া ভোটারের সংখ্যা ১৭ লক্ষের বেশি। পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোটে বড় সংখ্যার আসন দখলের যে দাবি বিজেপি করছে, তার অনেকটাই নির্ভর করবে এই মতুয়াদের উপর। বিশেষ করে নদিয়া এবং উত্তর ২৪ পরগণা মিলিয়ে মোট ৫০টি বিধানসভা কেন্দ্রের ৩২-৩৩টি আসনে প্রভাব ফেলবে এই মতুয়াদেরই ভোট। পশ্চিমবঙ্গে ভোট শুরুর ঠিক ২৪ ঘণ্টা আগে সেই মতুয়াদের প্রতিষ্ঠাতা হরিচাঁদ ঠাকুরের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে মোদি সুকৌশলে পশ্চিমবঙ্গের ভোটের প্রচার করছেন বলেও মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।
ভারতের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মতুয়া সম্প্রদায় এবং তাদের ধর্মগুরুরা স্বাধীনতার পর থেকেই রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। পশ্চিমবঙ্গে একটা সময় এই মতুয়াদের অধিকাংশ ভোট বামফ্রন্ট বা তৃণমূল কংগ্রেসের মত মূলত বাম ঘরানার দলগুলোর কাছে ছিল। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে মতুয়া মহাসংঘ বিভক্ত হয়ে যায়। এরপরেই সমীকরণটা বদলে যায়। সেসময় মতুয়া মহাসংঘের একটি অংশ তৃণমূল কংগ্রেসের পাশে চলে আসে। তবে এঁদেরই আরেকটি অংশের প্রধান শান্তনু ঠাকুর বিজেপি'র টিকিটে জিতে সংসদ সদস্য হন।বিজেপি'র দেয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন চালু না হওয়ায় মতুয়াদের বড় একটি অংশ হতাশ হয়েছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাই তাদের মতে, ভোটের আগে মতুয়া ভোটারদের মন জয় করা বিজেপি'র জন্য বিশেষ প্রয়োজন।