যদিও শুধুমাত্র ২০২৪-এর দিকে তাকিয়ে যে ধোন্ডের মতো নেতাকে বাংলায় পাঠানো হচ্ছে, তা নয়৷ যেভাবে রাজ্যে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বপ্রাপ্ত অমিতাভ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ উঠছিল এবং রাজ্যে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের অন্তর্কলহ দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মাথাব্যথা বাড়াচ্ছিল, তাতে ইতি টানতেই ধন্ডের বাংলায় আগমন বলে মনে করা হচ্ছে৷ অমিতাভ চক্রবর্তীর সঙ্গেই সাধারণ সম্পাদক সংগঠনের যুগ্ম দায়িত্ব সামলাবেন তিনি৷
advertisement
রাজ্যে দলের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সংগঠনের দায়িত্বে থাকা অমিতাভ চক্রবর্তীকে নিয়ে দলের অন্দরেই অভিযোগ নতুন কিছু নয়৷ ২০১৮ সালে আরএসএস-এর এই সংগঠক নেতাকে রাজ্যে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয় সংঘ৷ তদানীন্তন, সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চ্যাটার্জীর সঙ্গে তাঁকে ও কিশোর বর্মনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। গত ২০২১ -এর ভোটের আগে আচমকা সুব্রতকে সরিয়ে রাজ্যের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব একক ভাবে অমিতাভ চক্রবর্তীকে দেওয়া হয়। কিশোর বর্মনকে স্বাধীন দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয় ত্রিপুরায়। তখনই ভেঙে যায় তৎকালীন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ ও সুব্রতচ চট্টোপাধ্যায়ের জুটি৷
আরও পড়ুন: ২০২৪-এ বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না, একুশের সভা থেকে চ্যালেঞ্জ মমতার
বিজেপি-র অন্দরের অভিযোগ, এর পর থেকেই রাজ্যে দলের সংগঠনে অমিতাভ চক্রবর্তীর একাধিপত্য শুরু হয়৷ বিধানসভা নির্বাচনের পরই দিলীপ ঘোষকে সরিয়ে সুকান্ত মজুমদারকে রাজ্য সভাপতি করা হয়৷ শোনা যায়, সুকান্তকে রাজ্য সভাপতি করার পিছনে অমিতাভর ভূমিকা ছিল।রাজ্য বিজেপিতে সুকান্ত - অমিতাভ জুটির নতুন অধ্যায়ের শুরু হয়।
অমিতাভর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ, ক্ষমতা পেয়েই সংগঠন থেকে দিলীপ ঘোষ, রাহুল সিনহা পন্থীদের ছেঁটে ফেলতে শুরু করেন তিনি৷ নিজের অনুগামীদের বিভিন্ন পদে বসানো, ক্ষমতা কুক্ষিগত করার অভিযোগে অমিতাভর বিরুদ্ধে জেলায়, জেলায় ক্ষোভ- বিক্ষোভ শুরু হয়৷ এমন কি, অনেক জায়গায় অমিতাভর নাম করে পোস্টারও পড়ে৷
অমিতাভ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে দিল্লিতে শীর্ষ নেতৃত্বের কাছেও পরের পর অভিযোগ জমা পড়তে থাকে৷ এমন কি, দিল্লিতে ডেকে সংঘের শীর্ষ নেতৃত্ব অমিতাভর কৈফিয়তও তলব করে৷ রাজ্য সফরে এলে সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা, সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) বি এল সন্তোষদের কােছও অমিতাভর বিরুদ্ধে নালিশ জমা পড়ে৷ এত কাণ্ডের পর অমিতাভকে সাধারণ সম্পাদক রেখে তাঁর সঙ্গে সতীশ ধোন্ডকে যুগ্ম দায়িত্ব আনাকে ইতিবাচক বলেই দেখছেন অমিতাভর বিরোধী গোষ্ঠীর নেতারা৷ তাঁদের মতে, এই পদক্ষেপের মধ্যে দিয়ে আসলে অমিতাভকেই সমঝে চলার বার্তা দিল বিজেপি এবং সংঘের শীর্ষ নেতৃত্ব৷
আরও পড়ুন: উপরাষ্ট্রপতি পদের নির্বাচন প্রক্রিয়ায় ভোটদান থেকে বিরত থাকবে তৃণমূল, জানালেন অভিষেক
যদিও অমিতাভ চক্রবর্তীর শিবিরের নেতারা এর মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু দেখছেন না৷ দিলীপ ঘোষ- সুব্রত চট্টোপাধ্যায়দের সময়ের উদাহরণ দিয়ে তাঁরা বলছেন, অতীতেও সাধারণ সম্পাদক সংগঠন পদে একাধিক ব্যক্তিকে দায়িত্ব েদওয়া হয়েছে৷ ২০২৪-এর আগে সময় থাকতেই ধোন্ডের মতো নেতাকে রাজ্যে নিয়ে এসে সংগঠনকে তৈরি করাই এই সিদ্ধান্তের লক্ষ্য বলে দাবি করছেন অমিতাভ অনুগামী নেতারা৷
গোয়ায় বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই ধন্ডকেই সেই রাজ্যের দায়িত্ব দিয়েছিল বিজেপি৷ কঠিন লড়াইয়ে কুড়িটি আসনে দলকে জিতিয়ে এনে শীর্ষ নেতৃত্বের প্রত্যাশা পূরণ করেন ধোন্ড৷ গোয়ার পর তাঁকে ওড়িশারও দায়িত্ব দেওয়া হয়৷ এবার সেখান থেকেই পাঠানো হল বাংলায়৷ বিতর্ক এড়াতে ট্যুইট করে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সংগঠন পদে সতীশ ধন্ডকে স্বাগত জানিয়েছেন অমিতাভ চক্রবর্তী৷