বামেদের সেই সরকারেই অন্যতম পরিচিত মুখ ছিলেন ক্ষিতি গোস্বামী৷ বামেদের শরিক দল আরএসপি এবং ক্ষিতি গোস্বামী ছিলেন একরকম সমার্থক৷ আরএসপি বলতে তাঁকেই যেন চিনত এ রাজ্যের মানুষ৷ সেই আরএসপি-ই এবার বাংলায় রাজ্য দলেরও তকমা হারাল৷ সোমবার জাতীয় নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকেই এই ঘোষণা করা হয়েছে৷
আরও পড়ুন: কেন জাতীয় দলের তকমা হারাল তৃণমূল? ভোটের লড়াইয়ে কী কী সমস্যায় পড়তে হবে
advertisement
২০১১ সালে পরিবর্তনের পর থেকেই বড় শরিক সিপিএমের সঙ্গে তিন শরিক দলও কার্যত অস্তিত্ব সঙ্কটে ভুগতে শুরু করে৷ চিড় ধরে সংগঠনে, উদয়ন গুহর মতো শরিক দলের অনেক নেতা কর্মীও শাসক দলে নাম লেখান৷ ক্ষিতি গোস্বামী অবশ্য সেপথে হাঁটেননি৷ ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে কোনওক্রমে মুখরক্ষা করে বামেরা৷ ২০১৯-এ প্রয়াত হন ক্ষিতি গোস্বামী৷ ততদিনে অবশ্য আরএসপি-র নাম এ রাজ্যের রাজনীতিতে কার্যত অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গিয়েছে৷ ঠিক যেমন হয়েছে সিপিআই এবং ফরওয়ার্ড ব্লকের ক্ষেত্রেও৷ ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে বামেরা শূন্যে নেমে যাওয়ার পর তিন ছোট শরিক দল আরওই প্রাসঙ্গিকতা হারায়৷
আরও পড়ুন: জাতীয় দলের মর্যাদা পেল কেজরীওয়ালের আম আদমি পার্টি, তকমা হারাল সিপিআই-এনসিপি
এর পর ২০২২-এর কলকাতা পুরসভা নির্বাচনে তৃণমূলের হয়ে ভোটে দাঁড়ান প্রয়াত আরএসপি নেতা ক্ষিতি গোস্বামীর কন্যা বসুন্ধরা গোস্বামী৷ ভোটে দাঁড়িয়ে জয়ও পান তিনি৷ আজীবন বামপন্থী রাজনীতিতে ভরসা রাখা, একদা এ রাজ্যে আরএসপি-র মুখ ক্ষিতি কন্যার এই সিদ্ধান্তে সেদিন আঘাত পেয়েছিলেন বামেদের প্রবীণ নেতারা৷ চমকে উঠেছিলেন এ রাজ্যের মানুষও৷ কিন্তু সম্ভবত সময়ের দাবি বুঝতে পেরেছিলেন বসুন্ধরা৷ তৃণমূলের মধ্যেই প্রকৃত বামপন্থা খুঁজে পেয়েছিলেন তিনি৷ তার পর এ রাজ্যের রাজনীতি থেকে খাতায় কলমে আরএসপি-র বিলীন হয়ে যাওয়া হয়তো অবধারিতই ছিল৷ রাজ্যের কোনও নির্বাচনে আরএসপি, ফরওয়ার্ড ব্লক কত শতাংশ ভোট পেল, তা নিয়ে তাদের দলের নেতারা ছাড়া আর কেউই হয়তো মাথা ঘামান না৷
শুধু আরএসপি-র রাজ্য দলের তকমা হারানো নয়, সোমবার আর এক বাম দল সিপিআই-ও সর্বভারতীয় দলের তকমা হারিয়েছে৷ এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ক্রমশ শক্তিক্ষয়ের পর এ রাজ্যে প্রত্যাবর্তনের স্বপ্ন দেখছে বামেরা৷ ক্ষমতা ফিরে পাওয়া এখনও তাদের কাছে দূরের গ্রহের মতোই কল্পনা৷ ভোট শতাংশে বৃদ্ধি, বিজেপি-কে টপকে দু নম্বর স্থান দখলেই এখন তৃপ্ত হতে হয় এ রাজ্যের বাম নেতাদের৷ আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচন প্রত্যাবর্তনের স্বপ্ন দেখা বামেদের কাছে বড় পরীক্ষা৷ একই ভাবে বড় শরিক সিপিএমের হাতে ধরে তাদের তিন ছোট শরিকও পায়ের তলায় কিছুটা মাটি ফিরে পায়, নাকি আরও অস্তিত্ব বিলোপের দিকে এগোয়, সেদিকেও নজর থাকবে রাজনৈতিক মহলের৷