ঋতব্রতর কথায়, গত ৫ বছরে দেশে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে ১২ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ মকুব করা হয়েছে। তাঁর আরও দাবি, মোট প্রদত্ত ঋণের খাতে সরকারের ঘরে ফেরত এসেছে মাত্র এক লক্ষ ২৬ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ ধার্য মোট ঋণের মাত্র দশ শতাংশ ফেরত পেয়েছে সরকার। এই প্রসঙ্গে সংসদে মোদি সরকার কেন কোনও সুস্পষ্ট উত্তর দিচ্ছে না তা সোজাসুজি জানতে চান তৃণমূল সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়।
advertisement
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের বেসরকারিকরণ কতটা যুক্তিসম্মত? ভারতে ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রের অভিজ্ঞতাই বা কি? ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের রিপোর্ট অন কারেন্সি অ্যান্ড ফাইনান্স (বিশেষ সংখ্যা, চতুর্থ খণ্ড, ২০০৬-০৮) থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, স্বাধীনতার সময় ভারতে কোনও সরকারি ব্যাঙ্ক ছিল না; ছিল ৬৩৮টি প্রাইভেট ব্যাঙ্ক আর ৩৯৫টি সমবায় ব্যাঙ্ক। স্বাধীনতার পর প্রথম আট বছরে সব মিলিয়ে ৩৬১টি ব্যাঙ্ক ফেল করে, যার ফলে বহু আমানতকারী সর্বস্বান্ত হন। এর পর ১৯৫৫ সালে সর্ববৃহৎ ‘ইম্পিরিয়াল ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া’-র জাতীয়করণ করে তৈরি হয় ‘ভারতীয় স্টেট ব্যাঙ্ক’।
বড় পুঁজিপতিদের মালিকানায় বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলি সম্পদ কুক্ষিগত করে রেখে ব্যাঙ্ক চালাত নিজেদের সঙ্কীর্ণ স্বার্থে। গ্রামাঞ্চলের কৃষক, শহরের ছোট ব্যবসায়ী বা মধ্যবিত্তদের ঋণ দেওয়ায় এই ব্যাঙ্কগুলির ছিল প্রবল অনীহা। ১৯৫২ থেকে ১৯৬৯, এই ১৭ বছরে সারা দেশে ব্যাঙ্কের শাখার সংখ্যা চার হাজার থেকে বেড়ে হয় মাত্র আট হাজার। এর পর ১৯৬৯ সালে ১৪টি বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ককে রাষ্ট্রায়ত্ত করা হয়। ১৯৭৫-এর মধ্যে দশ হাজারের বেশি নতুন ব্যাঙ্কের ব্রাঞ্চ খোলা হয়, যার বড় অংশই ছিল গ্রামীণ শাখা। ১৯৮০-তে আরও ৬টি ব্যাঙ্ক রাষ্ট্রায়ত্ত হওয়ার ফলে ১৯৯০ সালের মধ্যে সারা দেশে ব্যাঙ্কের শাখার সংখ্যা পৌঁছে যায় ৫৯ হাজারের বেশি, যার মধ্যে ৩৪ হাজারের বেশি গ্রামীণ শাখা। সবুজ বিপ্লব, খাদ্যশস্য উৎপাদনে আত্মনির্ভরতা অর্জন বা শিল্প-পরিকাঠামো নির্মাণ, দেশে আমজনতার স্বার্থে যতটুকু উন্নয়ন হয়েছে, তার অনেকটাই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের হাত ধরেই এসেছে।