ফুসফুস, কিডনি, লিভারে মাত্রাতিরিক্ত সংক্রমণ। রাতে অবস্থার আরও অবনতি হয়। শেষমেশ মাল্টি অরগ্যান ফেলিওর। কাকভোরে মেডিক্যাল বোর্ডের সব চেষ্টা ব্যর্থ। থেমে গেল ঋষভের লড়াই।
১৪ ফেব্রুয়ারি পোলবায় পুলকার দুর্ঘটনা গুরুতর আহত হয় ঋষভ ও দিব্যাংশু ৷ গ্রিন করিডর করে SSKM-এ আনা হয় তাদের ৷ ভেন্টিলেশনে রাখা হয় দুই ছাত্রকে ৷ ঋষভের অবস্থার অবনতি হয় ৷ কৃত্রিম উপায়ে শ্বাস নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয় ৷ ECMO-র সাহায্যে নেওয়া হয় ৷ ফুসফুস, কিডনি, লিভারে সংক্রমণবাড়তে থাকায় অবস্থার অবনতি হয় ৷ শুক্রবার রাতে মাল্টি অরগ্যান ফেলিওর হয় ৷ শনিবার ভোর ৫টায় মৃত্যু হয় তার ৷
advertisement
হুগলির পোলবায় গত শুক্রবার,১৪ ফেব্রুয়ারি ভোরবেলা মর্মান্তিক গাড়ি দুর্ঘটনায় ৩ স্কুল ছাত্র,গাড়িচালক গুরুতর আহত হয়।জানা যায়,লিলুয়ার টেকনো ইন্ডিয়া স্কুলে যাওয়ার জন্য এই গাড়িটি পুলকার হিসাবে ব্যবহার হত। গাড়িটিতে ১৫ জন স্কুলের ছোট ছোট ছেলমেয়ে ছিল,এক অভিভাবক ছিলেন।অত্যধিক গতিতে থাকার জন্য গাড়িটি রাস্তার ধারের নিচু জমি বা নয়ান জুলিতে পড়ে যায়।বাকি বাচ্চাদের উদ্ধার করা হলেও দুই খুদেকে উদ্ধার করা হয় বেশ কিছুটা পরে।প্রথমে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় সবাইকে। সেখানে অবস্থার অবনতি ঘটলে দ্বিতীয় শ্রেণীর ঋষভ সিং ও দিব্যাংশু ভকতকে কলকাতার এস এস কে এম হাসপাতালে গ্রীন করিডোর করে রাস্তা ফাঁকা করে নিয়ে আসা হয়।
ঋষভ ও দিব্যংশুর শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত খারাপ ছিল।এস এস কে এম হাসপাতালের ট্রমা কেয়ার সেন্টার এ ভেন্টিলেশনে রাখা হয় দুজনকেই।দুই ছাত্রই স্টেজ ওয়ান কোমায় ছিল বলে জানান চিকিৎসকরা।এর মধ্যে ঋষভের শারীরিক পরিস্থিতি খুবই খারাপ ছিল। ভর্তি করার পরই রাতে তাকে কার্ডিও থরাসিক ভাসকুলার সার্জারি বিভাগে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানে বিশেষ একমো যন্ত্রের সাহায্যে ঋষভকে কৃত্রিম ফুসফুসের মাধ্যমে শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়ানো এবং দূষিত কার্বন ডাই অক্সাইড বার করা হয়।অত্যন্ত দুর্মূল্য এই যন্ত্র সরকারি কোনও হাসপাতালে প্রথম ব্যবহার করা হয়। অল্প হলেও অবস্থার উন্নতি হচ্ছিল ঋষভের । তবে প্রচুর কাদা, জল ফুসফুসে ঢুকে যাওয়ায় চিকিৎসকদের কাজ কঠিন থেকে কঠিনতর হচ্ছিল।এক মুহূর্তের জন্য জ্ঞান ফেরেনি তার।বাইরে দিন,রাত এক করে ঋষভের বাবা শ্রীরামপুর পুরসভার কাউন্সিলর সন্তোষ সিং পড়ে থাকতেন। সঙ্গে আত্মীয় পরিজন,দলীয় সতীর্থরা।
চিকিৎসকরা প্রাণপণ লড়াই চালাচ্ছিলেন।কিন্তু গত বুধবার থেকে ঋষভের শারীরিক অবস্থার চূড়ান্ত অবনতি হতে থাকে। তার শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা ওঠানামা করতে থাকে। ফুসফুসে সংক্রমণের মাত্রা অনেকটাই বেড়ে যায়। শুক্রবার সকাল থেকে পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে থাকে।হাসপাতালের ৭ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ডের চিকিৎসকরা তবু লড়াই চালাতে থাকেন।কিন্তু একে একে কিডনি,লিভার, হার্ট, লাংস কাজ করা বন্ধ করে দিতে থাকে। মাল্টি অর্গান ফেল হতে শুরু করে।শেষমেশ শনিবার ভোর ৫ টা নাগাদ ঋষভের শরীর জবাব দিয়ে দেয়। চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে মৃত্যু হল ফুটফুটে ঋষভের ।যদিও আশার কথা তারই বন্ধু গুরুতর অসুস্থ,ভেন্টিলেশনে থাকা দীব্যাংশুর শারীরিক অবস্থার অনেকটাই উন্নতি হয়েছে।তাকে ভেন্টিলেশনে এর থেকে বড় করা হয়েছে।যদিও ঋষভের মৃত্যু ভেঙে দিয়েছে তাদের পরিবারকেও।ঋষভের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে শ্রীরামপুর জুড়ে।