পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র, পিঠে স্কুল ব্যাগ, তাতে কিছু বই খাতা। আত্মীয়দের হাত ধরে স্কুল পোশাকেই দেখতে এসেছে তার ‘অনিশ্চয়তা’-র ঠিকানা। মাঝে সময়ের ব্যবধান আড়াই বছর। ফের স্কুলের ব্যাগ, বইপত্র নিয়ে গিয়ে উঠতে হয়েছে হোটেলে। আবারও এক ভয়, বাড়ি ফেরা হবে তো!
advertisement
বুধবার বিকেল থেকে দুর্গা পিতুরি লেনে ফের কমপক্ষে ১৪টি বাড়িতে ছোট বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। এবারও তাদের কাঠগড়ায় মেট্রো। ওই রাতেই একাধিক বাড়ি খালি করে দেওয়া হয়েছে। অংশুমান ও তাদের বাড়ির অপর বাসিন্দা কৃষ্ণপ্রসাদ গোস্বামীরা বৃহস্পতিবার সকালে ছেড়েছেন বাড়ি। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এখন ঠিকানা মধ্য কলকাতার এক হোটেলে ।মাথায় রয়েছে ঋণের বোঝা। পরিবারের পাঁচ সদস্য। উপার্জন বলতে দুর্গা পিতুরি লেনের একদম শুরুতে একটি তেলে ভাজার দোকান। উপরে বাড়ি। সেই বাড়ি ও দোকানেও ফাটলের দাগ স্পষ্ট।
পেটের টানেই বিপর্যয়ের দ্বিতীয় দিন সকালে দোকান খুলেছেন গুরুপদ দাস। মেট্রো কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ উগরে দিলেন তিনি। ২০১৯-র অগস্টে যে বিপর্যয় নেমে এসেছিল, তাতে আড়াই মাস ছিলেন এলাকা ছাড়া। হোটেলে থাকলেও বন্ধ ছিল ব্যবসা। কিন্তু ফাটল যেন তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে উঠেছে। তাই আতঙ্কের মধ্যেও পেট চালানোর জন্য খুলতে হয়েছে দোকান, জানালেন গুরুপদ। এই ঠিকানা যেন হয়ে উঠেছে অনিশ্চয়তার এক ঠিকানা।
আরও পড়ুন Duare Councilor| Bowbazar Metro|| পাতাল আতঙ্কে ঘরছাড়া শতাধিক! ভরসা দিতে বউবাজারে 'দুয়ারে কাউন্সিলর'
৯ নম্বর দুর্গা পিতুরি লেনের মন্টু সেন। ২০১৯ এর ঘটনার পর বাড়িতে ফিরেছেন গত বছর আগস্টে। আবারও ফাটল আতঙ্ক। এলাকার কমপক্ষে ১৪০ জন বাসিন্দাদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাই তাঁর ভয়, ফের ছাড়তে হবে না তো পৈতৃক ভিটে? ওই পাড়ার আরও এক বাসিন্দা অশোক দত্ত। দিদিকে নিয়ে থাকেন ৬,এ- দুর্গা পিতুরি লেনে। কখনও হোটেল, কখনও আত্মীয় বাড়িতে কাটিয়েছেন। ফ্ল্যাট বাড়িতেও ভাড়া ছিলেন। গত বছর ফেরার পর আবারও তাদের মনে নেমে এসেছে ২০১৯ এর আতঙ্ক। এবার এখনও বাড়ি ছাড়তে হয়নি। কিন্তু অনিশ্চয়তার মধ্যে কাটছে দিন। কখন ফাটল বড় আকার নেয়, সেই চিন্তা সবসময়৷
৯৩/১এ বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিট এলাকায় ঘোষ বাড়ি হিসেবে পরিচিত ২০১৯-এ এই বাড়ির বিভিন্ন অংশে বিশেষ করে দোতলার বারান্দা-সিড়িতে বড় বড় ফাটল তৈরি হয়। বাড়ি ছেড়ে হোটেলে উঠে যেতে বাধ্য হন সদস্যরা। সাড়ে তিন মাস পর বাড়ির মালিকদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয় ফিট সার্টিফিকেট। চলে আসেন বাড়িতেও। কিন্তু তারপর থেকে ফাটল যেন চিরসঙ্গী। এত বড় বাড়ি কোথায় কখন ফাটল হচ্ছে হদিস পাচ্ছেন না তারা। মেট্রো কর্তৃপক্ষ চিহ্নিত করে যায়, মেরামতি হয়। কিন্তু আবার ফাটল হয়। তাহলে কেন এই অনিশ্চয়তার মুখে ফেলা হল তাদের, প্রশ্ন তুলছেন ঘোষ বাড়ির গৃহবধূ মৌমিতা ঘোষ। শুক্রবার সকাল থেকেই এলাকায় পুলিস মোতায়েন রয়েছে। এসেছিলেন কাউন্সিলর বিশ্বরূপ দে। তবে বাসিন্দাদের প্রশ্ন, স্থায়ী সমাধান কবে হবে?
Amit Sarkar