TRENDING:

ঘুমে জাগরণে চেতনায় আলো জ্বালিয়ে রাখে শঙ্খ ঘোষের কবিতা

Last Updated:

সেই পঞ্চাশ দশক থেকে অতি নীরবে রাজনীতির সঙ্গে, জনজীবনের সঙ্গে কবিতার সাঁকো বাঁধার কাজটা করেছিলেন তিনি। তাঁর কবিতা জীবন ছুঁয়ে থেকেছে কিন্তু কখনও স্লোগান হয়ে যায়নি।

impactshort
ইমপ্যাক্ট শর্টসলেটেস্ট খবরের জন্য
advertisement
শঙ্খ ঘোষের নাম শোনেনি এমন কেউ যদি তোমাকে প্রপোজ করে, কী করবে?
প্রয়াত কবি শঙ্খ ঘোষ।
প্রয়াত কবি শঙ্খ ঘোষ।
advertisement

-শ্রীজাত

লঘু চালে লেখা কবিতা। কিন্তু কখন একজন জীবিত মানুষকে নিয়ে মুখে মুখে ফেরা কবিতা লেখা হয়? সকলেই মেনে নেবেন, যখন সেই মানুষটি সাধারণত্বের মাপকাঠি পেরিয়ে অনেক ঊর্ধ্বে বিরাজ করেন। হ্যাঁ, শঙ্খ ঘোষের মৃত্যুতে বাঙালি সেই কাব্যবিগ্রহকেই হারাল আজ যা ছাত্রের হৃদয়ে, মধ্যবিত্তের বিবেকে, সমাজের নানা আলো আঁধারিতে থেকে থেকেই আশ্রয় হয়ে উঠত। সেই পঞ্চাশ দশক থেকে অতি নীরবে রাজনীতির সঙ্গে, জনজীবনের সঙ্গে কবিতার সাঁকো বাঁধার কাজটা করেছিলেন তিনি। তাঁর কবিতা জীবন ছুঁয়ে থেকেছে কিন্তু কখনও স্লোগান হয়ে যায়নি।

advertisement

চল্লিশ দশকের বাংলা কবিতায় স্পষ্টই দুটো ধারা লক্ষ্য করা যাচ্ছিল। একদিকে ছিল নিও রোমান্টিক কবি অরুণকুমার সরকার, নরেশ গুহরা। অন্য দিকে কবিতায় দিনবদলের স্বপ্ন নিয়ে আসতে শুরু করেন সুভাষ মুখোপাধ্যায়, বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়রা। পঞ্চাশদের দশকের কবিরা মানে শক্তি চট্টোপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়,শরৎ মুখোপাধ্যায়, তুষার রায়-রা এই দুই ধারাকেই উড়িয়ে লিখতে এলেন আত্মা খুঁড়ে। স্বাধীনতা, দেশভাগের শূন্যতা,  ব্যক্তিগত বিপন্নতাবোধ তাঁদের নৈরাজ্যের দিকে নিয়ে গেল। শঙ্খ ঘোষের লিখতে আসা এই সময়েই, কিন্তু তিনি প্রথমেই সরে দাঁড়ালেন. স্পর্ধার বাণী-আত্মার নিশিরাতের বিচরণের থেকে দূরত্বে থেকে তিনি নিচু স্বরে লিখতে এলেন তরুণ মনের দোলাচল। যেখানে সময়ের আলতা অথবা রক্তমাখা পা ছায়া-ছায়া ছাপ ফেলে যাবে। এভাবেই লেখা প্রথম কাব্যগ্রন্থ "দিনগুলি রাতগুলি"।

advertisement

পথে পথে স্লোগান তোলা আর কবিতা এক নয়। কিন্তু কবিতা যে সময়কে ছিন্ন করে অন্য মেরুতে যেতে পারে না, তা শঙ্খবাবুই বুঝিয়ে দিলেন আপাতত শান্তিকল্যাণ কাব্যগ্রন্থে। ১৯৭৭-এর ঝোড়ো দিনে কলমে বেদনা ঝরতে থাকে অবিরল। কমিটেড পোয়েট্রি নয়, প্রিয় ছাত্র‌ তিমিরবরণ সিংহের মৃত্যুতে শঙ্খবাবু লেখেন-‘ময়দান ভারী হয়ে নামে কুয়াশায়/ দিগন্তের দিকে মিলিয়ে যায় রুটমার্চ/ তার মাঝখানে পথে পড়ে আছে ও কি কৃষ্ণচূড়া?/ নিচু হয়ে বসে হাতে তুলে নিই/ তোমার ছিন্নশির, তিমির।’

advertisement

৯০-এর দশকে পাঠকের হাতে এলো তাঁর কাব্যগ্রন্থ 'লাইনেই ছিলাম বাবা'। একই সময়ে শিমলায় বসে লিখেছেন লিখেছেন গান্ধর্ব কবিতাগুচ্ছ। একটি রাজনৈতিক প্রতিস্পর্ধা অন্যটি একান্ত ব্যক্তিগত উচ্চারণ। দুটো বই পাশাপাশি রেখে পড়লে জয় গোস্বামীর শব্দবন্ধ ধরেই বলতে হয়, তাঁর কবি মনের গতি অতলান্ত অন্তরে।

মধ্যরাতের কলকাতা কখনও শাসন করেননি, করতে চাননি হয়তো। তবে তাঁর মন হাঁটা লাগিয়েছে রাজপথ ছেড়ে অলিগলি ধরে। তাই জন্ম হয় এমন কবিতার যার নাম- 'হেঁটে দেখতে শিখুন'। লেখা হয় -

advertisement

‘হেঁটে দেখতে শিখুন ঝরছে কী খুন দিনের রাতের মাথায়

আরেকটা কলকাতায় সাহেব, আরেকটা কলকাতায়

সাহেব বাবুমশাই |’

শঙ্খ ঘোষ নৈঃশব্দের পূজারী হয়ে থেকেছেন, তাঁর নিহিত, স্বল্প উচ্চারণই বজ্রভেদী হয়েছে নন্দীগ্রমে, কামদুনিতে। কখনও কেউ তাঁর কণ্ঠরুদ্ধ করতে পারেনি। মধ্যবিত্ত বাঙালির কাছে এটাই বোধ হয় পরম পাওয়া তাঁর কাছ থেকে।

সেরা ভিডিও

আরও দেখুন
লালগোলাতে রাজরাজেশ্বরী রূপে পূজিতা হন মা কালী! দেওয়া হয় ইলিশের ভোগ
আরও দেখুন

আজ শেষবেলায় তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে গানস্যালুটের ভঙ্গিমা যে তাঁর পরিবার ফিরিয়ে দেবে তা তো স্বাভাবিকই, এমন মগ্ন-মৈনাকের মৃত্যতে আড়ম্বর-আয়োজন বড় কবিতাবিমুখ দেখায়। কেবল দাঁড়ের শব্দ টের পাওয়া যাবে বহু মানুষের পাঁজরে পাঁজরে চিরকাল।

বাংলা খবর/ খবর/কলকাতা/
ঘুমে জাগরণে চেতনায় আলো জ্বালিয়ে রাখে শঙ্খ ঘোষের কবিতা
Open in App
হোম
খবর
ফটো
লোকাল