নাখদা মসজিদকে ঘিরে জাকারিয়া স্ট্রিটে রমজান মাসে রীতিমত উৎসবের আমেজ। গোধূলির আলো আস্তে আস্তে নিভে গিয়ে সবে তখন রোজা ভেঙেছে। গোটা জাকারিয়া স্ট্রিট জুড়ে সেই সময় ইফতারের ভিড়। তিলধারণের জায়গা থাকে না। এক দিকে বিক্রেতাদের হাঁক, দোকানের সামনে লাইন, অন্যদিকে জোর কদমে চলে রান্না। ধোঁয়া ওঠা কাবাব থেকে শুরু করে খেজুর, আপেল, তরমুজ কিছুই বাদ নেই। রাস্তা ধরে এগিয়ে গেলে দু’দিকে রুহ আফজা, সেমুইয়ের গন্ধ। বছরের অন্যান্য সময়ে জাকারিয়া স্ট্রিটে একটা ঘিঞ্জি ভাব, সারাদিনের ব্যস্ততা লেগে থাকে। কিন্তু এই সময়টায় শুধু স্থানীয় বাসিন্দারা নন শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষজন খেতে আসেন। সপ্তাহান্তে জাকারিয়া স্ট্রিটে গেলে সেরকমই ভিড় লক্ষ্য করা যায় গোটা রাস্তা জুড়ে। রাস্তা ধরে এগিয়ে গেলে দু’পাশে চোখে পড়বে সারি সারি কাবাব আর বিরিয়ানির হাঁড়ি। খাদ্যরসিক বাঙালির স্বর্গ বলতে যা বোঝায় রমজান মাসের জাকারিয়া স্ট্রিট একেবারেই সেরকম।
advertisement
শনিবার সন্ধ্যায় খদ্দের সামলাতে সামলাতে এক রেস্তোরাঁর মালিক জানালেন, ‘‘অনেক নতুন অফার রেখেছি। মুর্গ চাঙ্গেজি, মুর্গ তৈমুরির চাহিদা বেশি এবারে। মাছ আর চিকেনের আইটেম গুলো আরও সুস্বাদু করা হয়েছে।’’ জাকারিয়া স্ট্রিটে মাছের চাঁপ খেতেও আসেন প্রচুর মানুষ। মাহি আকবরী, চাঙ্গেজি রোস্টেড একবার খেলে তার প্রেমে পড়ে যাবেন বলে মত এক হোটেলের মালিকের। ক্যাশ কাউন্টারে বসে সন্ধ্যার দিকে দম ফেলার সময় নেই। ক্রমাগত সামলাতে হচ্ছে ক্রেতাদের। সেই মত নির্দেশ মেনে একভাবে কাজ করে যাচ্ছেন কর্মীরা। এক কর্মী বললেন, ‘‘এখনও তো কিছুই ভিড় হয়নি। ১০-১৫ দিন পর তো আপনার সঙ্গে কথা বলার সময় পাব না।’’
কাবাব, বিরিয়ানি, হালিমের দোকানে যেমন লম্বা লাইন পড়েছে সেরকমই ইফতারের সময়ে ভিড় লক্ষ্য করা গেল ফলের দোকানেও। সব থেকে বেশি চাহিদা খেজুরের। তারপর আপেল, পেয়ারা, তরমুজ অন্যান্য ফল তো রয়েছেই। বান পাউরুটি, ফালুদা, রংবেরংয়ের শরবত, ছোলা, মুড়ি, চপ দিয়েও রোজা ভাঙতে দেখা গেল অনেককে। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে হালিমের দোকানে লাইন দিয়েছেন সাধারণ মানুষ। প্রচণ্ড গরমে গলদঘর্ম হয়েও হাসিমুখে ক্রেতাদের আব্দার মেটাচ্ছেন দোকানের কর্মীরা। খাবার দোকান পেরিয়ে গেলেই শুরু জামা কাপড়। সেখানেও লম্বা লাইন। টুপি, পাঞ্জাবি থেকে শুরু করে শাড়ি, চুড়ির দোকানেও ভিড় জমিয়েছিলেন এলাকার মানুষ। সবে রমজান মাস পড়েছে। এরই মধ্যে আলোয় আলোয় সেজে উঠেছে জাকারিয়া স্ট্রিট। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে উৎসবে মেতে উঠেছেন এলাকার সাধারণ মানুষ।