বাড়ছে কাজের চাপ। মিলছে না প্রাপ্য সুবিধা। রেলের সুরক্ষা খাতে একেবারেই নজর নেই মন্ত্রকের ৷ এই অভিযোগে এবার দেশজুড়ে এক দিনের ছুটিতে যাচ্ছিলেন রেলের স্টেশন মাস্টাররা। গত ৩১ মে এক দিনের জন্য দেশজুড়ে ছুটিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছিল অল ইন্ডিয়া স্টেশন মাস্টার অ্যাসোসিয়েশন ৷ স্টেশন মাস্টারের অন্যতম এই বৃহৎ সংগঠনের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই এই বিষয়ে চিঠি বা নোটিস দেওয়া হয়েছিল ভারতীয় রেল বোর্ডকে। দেশের প্রায় ৬০০০-এর বেশি স্টেশন মাস্টারের পদ ফাঁকা। বারবার আবেদন করেও মিলছে না কেন্দ্রের সাড়া ৷
advertisement
এই অভিযোগে দেশের ৩৫ হাজার স্টেশন মাস্টার এই ছুটিতে শামিল হতে চলেছিলেন ৷ যার ফলে গোটা দেশের রেলওয়ে পরিচালন ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে এই ধরণের আন্দোলনের নজির কোথাও নেই। কোভিড পরিস্থিতিতে ভারতীয় রেলে যাত্রীবাহী ট্রেন পরিষেবা বন্ধ থাকলেও চালু ছিল পণ্যবাহী ট্রেন পরিষেবা। কোভিড পর্বে চালানো হয় স্পেশ্যাল ট্রেন।
শ্রমিক স্পেশ্যাল ট্রেনের পাশাপাশি চলেছে স্পেশ্যাল যাত্রীবাহী ট্রেন। ধীরে ধীরে রেলওয়ে পরিষেবা স্বাভাবিক হয়েছে ৷ বেড়েছে পণ্যবাহী রেল চলাচলের সংখ্যা ৷ কিন্তু রেলের সংখ্যা বাড়লেও শূন্য পদে লোক নিয়োগ না হওয়ার অভিযোগ রেল কর্মীদের। বিশেষ করে অতি গুরুত্বপূর্ণ সেফটি পদে লোক নেওয়া হয়নি ৷ যার ফলে ওই পদে চাকরিরত ব্যক্তিদের ওপরে ক্রমশ বাড়ছে চাপ। একেক জনকে আট ঘণ্টার বদলে ডিউটি করতে হচ্ছে প্রায় ১২ ঘণ্টা করে ৷ আর স্টেশন মাস্টারের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ পদে কোনও ব্যক্তির দীর্ঘ সময় ধরে ওভারটাইম চলতে থাকায় বিপাকে পড়তে হচ্ছে তাদের।
আরও পড়ুন- ভবানীপুরের খুনে ব্যবহার হয়েছে 7mm পিস্তল! সঙ্গে ছিল ধারালো বস্তু
পশ্চিমবাংলার উদাহরণ হিসাবে দেখা যাক, এই রাজ্যের সীমানার মধ্যে মোট ৫৬৩ টা স্টেশন আছে। পূর্ব রেলের মতো গুরুত্বপূর্ণ জোনে হাওড়া ডিভিশনে স্টেশন আছে ১৭৬ টি। শিয়ালদহ ডিভিশনে স্টেশন আছে ২০৪ টি। আসানসোল ডিভিশনে স্টেশন আছে ৮২ টি। মালদহ ডিভিশনে স্টেশন আছে ১০০ টি। এ ছাড়া খড়গপুর, আদ্রা, আলিপুরদুয়ার ডিভিশন রয়েছে এই রাজ্যে ভারতীয় রেলের৷ অল ইন্ডিয়া স্টেশন মাস্টার অ্যাসোসিয়েশনের তরফে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী প্রায় ১৫০০ পদ বাকি আছে এই রাজ্যেই।
শিয়ালদহ ডিভিশনের সাংগঠনিক সভাপতি সৌমিত্র বোস জানিয়েছেন, ‘‘আমরা কেউই চাই না ধর্মঘটে যেতে। অমূলক ধর্মঘটে গেলে আমাদের জন্য বৃহৎ অংশের যাত্রীদের ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হবে। কিন্তু রেল বোর্ড বা মন্ত্রক কেউই আমাদের কথা শুনছে না। এই যে এত সেফটি পদ ফাঁকা পড়ে আছে সেটা সঠিক সিদ্ধান্ত নয়।’’
প্রসঙ্গত দমদমের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনের দায়িত্ব সামলান সৌমিত্রবাবু। যেখানে কার্যত প্রতি মিনিটে ট্রেন রিসিভ করতে হয়। সেখানেও পর্যাপ্ত স্টেশন মাস্টার নেই। শিয়ালদহ ডিভিশনের সম্পাদক বিকাশ কুমার দত্ত জানিয়েছেন, স্টেশন মাস্টারদের রাতের ডিউটি করতে হয়। কিন্তু নাইট অ্যালাওয়েন্স পাচ্ছেন না তারা। যাদের মাসিক বেতন ৪৩,৯০০ টাকার উপরে তাদের এই বিশেষ রাত্রিকালীন ভাতা বন্ধ হয়ে আছে। যদিও রাতের বেলা ট্রেন পরিচালনা একই রকম দায়িত্ব নিয়ে তাদের করতে হয়। এর পাশাপাশি মিলছে না ছুটি। প্রতিদিনই ওভারটাইম করে যেতে হচ্ছে। তাই কার্যত বাধ্য হয়েই এই সিদ্ধান্ত তাদের নিতে হয়েছে।
বিকাশবাবু জানিয়েছেন, ‘‘এখন লোক না থাকায় এমন অবস্থা আমাদের হয়েছে যার ফলে আমরা কেউ শৌচালয়ে অবধি যেতে পারিনা।’’ দীর্ঘ দিন ধরেই রেল ইউনিয়নগুলির অভিযোগ সেফটি পদে নিয়োগ হচ্ছে না। স্টেশন মাস্টারদের দাবিও সেই একই ৷