গত ২৩ জুলাই অত্যন্ত সঙ্কটজনক অবস্থায় সিএমআরআই-তে ভর্তি করা হয় পিনেডাকে। এর পরের দিন অর্থাৎ ২৪ জুলাই প্রবল গ্যাস্ট্রিক রক্তক্ষরণে জেরবার হন ওই রোগী। প্রায় ২.৫ লিটার রক্তপাত হয়েছিল। সঙ্গে সঙ্গে শকে চলে যান রোগী। তাঁকে ভেন্টিলেটরে দেওয়া হয়। রক্তচাপ কমে রীতিমতো কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের পরিস্থিতি তৈরি হয়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল বিশেষ দক্ষতায় ওষুধের মাধ্যমে রক্তচাপ বাড়িয়ে পরিস্থিতি স্থিতিশীল করার চেষ্টা করেন। এই ওষুধের তালিকায় ব্যবহার করা হয়েছিল বিভিন্ন ধরনের ব্লাড প্রোডাক্ট এবং নোভোসেভেন নামে অত্যন্ত দামি ও উচ্চমানের ওষুধ। সাম্প্রতিক কালে বিশেষ কিছু ক্ষেত্রেই এর প্রয়োগ হয়েছে।
advertisement
পিনেডা নামে ওই রোগীকে ভর্তি করা হয়েছিল ডা. অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায়, ডা. শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় এবং ডা. দেবকমল মুখোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে। চিকিৎসা কালে একটি এন্ডোস্কোপি করা হয়। তাতে চিকিৎসকেরা দেখেন, ওই রোগীর ডিওডিনামে বেশ বড়সড় একটা আলসার। ফলে রোগী সম্পূর্ণ রূপে হেমারেজিক শকে চলে গিয়েছিলেন। তবে অভিজ্ঞ ডাক্তাররা আশা ছাড়েননি। সম্ভাব্য সব রকম চিকিৎসা পরিষেবা তাঁকে দেওয়া হয়। ধীরে ধীরে রোগীর রক্তচাপ বাড়ানো হয়। তাতেও আশঙ্কা কাটেনি। কার্ডিয়াক সংক্রান্ত একটি জটিলতা রয়েই গিয়েছিল। ইজেকশন ফ্র্যাকশন ২৮ শতাংশ নেমে যায়। কিডনিতে ক্ষতর কারণে রোগীকে ডায়ালিসিস সাপোর্টে রাখা হয়েছিল। এর ফলে রোগীর দেহের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা স্থিতিশীল হয়। তার পরেই ডাক্তাররা তাঁকে ভেন্টিলেটর থেকে বার করার সিদ্ধান্ত নেন। অবস্থা আরও ভাল ভাবে বোঝার জন্য ধারাবাহিক কিছু এন্ডোস্কোপি করা হয় ওই রোগীর। চিকিৎসার ফলে আলসারের মাপ কমতে থাকে। এমনকী রক্তপাতের উপসর্গও আর দেখা যায়নি।
সিএমআরআই কলকাতার ডিপার্টমেন্ট অফ ক্রিটিক্যাল কেয়ারের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. অনির্বাণ চট্টোপাধ্য়ায়ের কথায়, “প্রাথমিক পর্যায়ে রোগীর অবস্থা সামাল দেওয়া বেশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠেছিল। এদিকে রোগীর ঘনিষ্ঠ আত্মীয়রাও উপস্থিত ছিলেন না। ফলে সম্পূর্ণ রোগের ইতিহাস পাওয়াও মুশকিল ছিল। ওই সময় রোগীর কিছু সহকর্মী আমাদের এই বিষয়ে সাহায্য করেছিলেন। নানা রকম বিশ্লেষণের পরে জানা যায় যে, ওই রোগী বিগত কয়েক বছর ধরে প্রবল গাঁটের ব্যথায় কাবু ছিলেন। এটা জানার পর জয়েন্টের বায়োপ্সি করা হয়। দেখা যায়, রোগীর দেহে ইউরিক অ্যাসিড এবং ক্রিস্টাল বর্তমান। প্রথমে আমরা এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে রোগীকে ছুটি দেওয়ার ব্যবস্থা করার কথা ভেবেছিলাম। তবে তিনি সুস্থ হয়ে উঠছেন। তাঁর শ্বেত রক্তকণিকাও ঠিক রয়েছে। তিনি যাতে দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন, সেই দিকেই তাকিয়ে রয়েছি আমরা।”