১৯১৮ সালে কলেজ স্ট্রিট অঞ্চলের বঙ্কিম চ্যাটার্জি স্ট্রিটে এই প্যারামাউন্ট শরবতের দোকানটি খোলেন স্বর্গীয় নীহাররঞ্জন মজুমদার৷ বাংলাদেশের বরিশালের বাসিন্দা নীহাররঞ্জনবাবু দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন৷ অনুশীলন সমিতির সদস্য ছিলেন তিনি৷ খাদ্যরসিক নীহাররঞ্জনবাবুর কাছে শরবতের অর্থ ছিল ‘আতিথেয়তা’৷ নিজের শখকে পূরণ করতেই কলকাতায় এসে এই দোকানটি খোলেন তিনি৷ বিজ্ঞানী আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় ছিলেন নীহারবাবুর অত্যন্ত কাছের মানুষ৷ তিনিই এসে নীহারবাবুকে প্রথম বলেন, ‘নীহার এমন একটা শরবত বানাও, যা খেয়ে তৃষ্ণাও মিটবে, আবার পেটও ভরবে৷’ ডাবের জল, শাঁস এবং সিরাপ দিয়ে তৈরি সেই ডাবের শরবত আজও সারা ভারতবর্ষে বিখ্যাত৷
advertisement
স্বাধীনতার বহু আগে থেকেই এই প্যারামাউন্টের শরবত খেতে আসতেন বহু বিখ্যাত মানুষ৷ নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, মেঘনাথ সাহা, জগদীশচন্দ্র বসু থেকে শুরু করে পরবর্তীকালে সত্যজিৎ রায়, রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়, সুচিত্রা সেন, মনোহর আইচ, শঙ্খ ঘোষ- কে নেই সেই তালিকায়৷ রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় প্রায়ই আসতেন প্যারামাউন্টের শরবত খেতে৷ মৃত্যুর কিছুদিন আগেও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে এই প্যারামাউন্ট থেকে অর্ডার দিয়ে আনিয়েছিলেন তাঁর অলটাইম ফেভারিট ‘ম্যাঙ্গো শরবত’৷ ছ’য়ের দশক পর্যন্ত খসখস, চন্দন, ম্যাগনোলিয়ার মতো বিখ্যাত শরবত পাওয়া গেলেও বর্তমানে এগুলি আর পাওয়া যায় না দোকানে৷
পার্থপ্রতিমবাবু আরও জানান, ‘ ডাবের শরবতের পাশাপাশি সম্পূর্ন রাবড়ি দিয়ে তৈরি ‘প্যাশন ফ্রুটস’, ‘কোকো মালাই’ এবং সিরাপের মধ্যে ‘ট্যামারিন্ড সিরাপ’-এর চাহিদা সবচেয়ে বেশি৷ নিজের মনের মতো শরবত না পেলে মনঃক্ষুন্ন হন প্রত্যেকেই৷ তাই সারা বছরই প্যারামাউন্টপ্রেমীদের সেরা শরবতটাই দিতে আমরা বরাবর চেষ্টা করে থাকি৷’