২০১৮ সালে পঞ্চায়েত ভোটে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অধিকাংশ জায়গায় শাসক দলের জয়ের অভিযোগ এনেছিল বিরোধীরা। পরিসংখ্যান বলছে, পাঁচ বছর আগে ৩৪ শতাংশ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছে তৃণমূল। রিগিং, সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলেছে বিরোধীরা। ভোটের বলি হয়েছিলেন কমপক্ষে ১৮ জন। শাসক-বিরোধী কেউই বাদ যাননি। জীবন্ত পুড়িয়ে মারার মতো ঘটনারও সাক্ষী থেকেছে বাংলা।
advertisement
কাছাড়িবাড়ির নানখানায় বুধখালি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ২১৩ নম্বর বুথের সিপিএম কর্মী দেবু দাসের বাড়িতে মধ্যরাতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ঘুমন্ত অবস্থায় অগ্নিগগ্ধ হয়ে মারা যান দেবু দাস ও তাঁর স্ত্রী ঊষা দাস। অভিযোগের আঙুল ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বেলডাঙায় খুন করা হয় বিজেপি কর্মী তপন মণ্ডলকে। নওদার পাটকেলবাড়ি এলাকায় খুন হন নির্দল প্রার্থী শহীদ শেখ।
২০২৩-এও তালিকায় রয়েছে বেলডাঙা, নওদা। মুর্শিদাবাদের নওদায় মৃত্যু হয়েছে এক কংগ্রেস কর্মীরও। অভিযোগ, শনিবার সকাল থেকেই ওই এলাকায় ব্যাপক বোমাবাজি করে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। তার মধ্যেই একটি বোমা এসে লাগে হাজী নিয়াকত আলি নামে ওই কংগ্রেস কর্মীর গায়ে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে প্রথমে প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাঁকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। সেখানেই চিকিৎসা চলাকালীন মৃত্যু হয় তাঁর। শুক্রবার রাতেই বেলডাঙায় তৃণমূলের কর্মী বাবর আলি খুন হন। শুধু বেলডাঙা বা নওদা নয়। শুক্রবার রাত থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত এই মুর্শিদাবাদ জেলাতেই পাঁচ জন খুন হয়েছেন। রেজিনগর থানার নাজিরপুরে মৃত্যু হয়েছে ইয়াসিন শেখ নামে এক শাসকদলের কর্মীর। খরগ্রামেও একটি ফাঁকা জমি থেকে তৃণমূল কর্মী সাবিরুদ্দিন শেখের দেহ উদ্ধার হয়। খুনের ঘটনা সামনে এসেছে লালগোলাতেও। উত্তাপ শুরু হয়েছিল মনোননয়নের দিন থেকেই। প্রসঙ্গত, শুক্রবারেই মুর্শিদাবাদে সফরে গিয়েছিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। ভোটের দিন কোচবিহারে নিহত হয়েছে দু’জন ও উত্তর ২৪ পরগনায় নিহত হয়েছেন একজন। এ ছাড়া পূর্ব বর্ধমানে মৃত্যু হয়েছে ১ জনের৷ এর পরেই মৃত্যুর খবর আসে নদিয়ার চাপড়া থেকে৷ চাপড়ায় মৃত্যু হয় একজনের৷
আবার ফিরে যাওয়া যাক ১৮-এ। শান্তিপুরে বুথ দখল করতে গিয়ে গণপিটুনিতে মৃত্যু হয় এক পড়ুয়ার। নন্দীগ্রামে দুই নির্দল সমর্থককে খুনের অভিযোগ ওঠে। ২৩-এ অবশ্য শান্তই ছিল নন্দীগ্রাম। বিক্ষিপ্ত অশান্তি বাদ দিলে বড় কোনও হিংসা বা হানাহানির খবর সামনে আসেনি। পাহাড়ের পরিস্থিতিও শান্ত ছিল। তবে উত্তরবঙ্গের সামগ্রিক চিত্রটা খুব সহজ ছিল না। কোচবিহারের দিনহাটা, তুফানগঞ্জ, মালদহের মানিকচক মিলিয়ে নিহত হয়েছেন তিনজন। ২০১৮-তেও উত্তাপের আঁচ পৌঁছেছিল উত্তরবঙ্গে। কুলতলির মেরিগঞ্জের বালিরচর এলাকায় ভোট দিতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছিল আরিফ গাজির। পরিবারের দাবি অনুযায়ী আরিফ ছিলেন তৃণমূল সমর্থক।
আরও পড়ুন- সকাল ৯টা পর্যন্ত ভোটের হার ১০.২৬ শতাংশ, হিংসার বলি ১০
আরও পড়ুন- ভোটের হিংসায় রক্তাক্ত বাংলা… আড়াই ঘণ্টায় আট খুন, উত্তপ্ত মুর্শিদাবাদ
তৃণমূল জমানায় প্রথম পঞ্চায়েত ভোট ২০১৩ সালে। ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের আগে এটাই শক্তি যাচাইয়ের সুযোগ, শাসক-বিরোধী দুই পক্ষের। ২০১৮ সালে সব ক’টি জেলা পরিষদই জিতেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। এবার কি তার পুনরাবৃত্তি হবে? নাকি খেলা ঘুরবে? ১১ তারিখেই মিলবে জবাব।