স্কটল্যান্ডের ডেনি অ্যান্ড কোম্পানির তৈরি ১৯৪৫ সালের এই স্টিমারটি বহু বছর ধরে খিদিরপুর ডকে অচল অবস্থায় পড়ে ছিল। শুধু পোর্ট ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা এই স্টিমারে প্রশিক্ষণ নিতে আসতেন। কিন্তু এখন বন্দর কর্তৃপক্ষ এই অচল স্টিমারকে সচল করতে চাইছে। পর্যটনের স্বার্থে সেই কাজ শুরু হতে চলেছে। কলকাতা বন্দরের চেয়ারম্যান বিনীত কুমার কিছু মাস আগে সরকারি কাজে বাংলাদেশে গিয়ে জানতে পারেন, সেখানে একই ধরনের প্যাডেল স্টিমার পর্যটকদের নিয়ে পদ্মা-সহ বিভিন্ন নদীতে যাতায়াত করছে। সেগুলির বয়স কলকাতা বন্দরে রাখা ‘পি এস ভূপাল’-এর কাছাকাছি।
advertisement
এরপর কলকাতা বন্দরের ড্রাই ডকে এই স্টিমার সংস্কারের প্রাথমিক কাজ শুরু হয়। আপাতত কাজ প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছে। প্যাডেল স্টিমার চালিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছে। বন্দর চেয়ারম্যান বিনীত কুমার জানিয়েছেন, প্যাডেল স্টিমারের ব্যাপারে বেসরকারি সংস্থাদের কাছ থেকে আগ্রহপত্র চাওয়া হয়েছিল। এতে সাড়া মিলেছে। একটি সংস্থা আগ্রহ দেখিয়েছে।
আরও পড়ুন: রাজ্যজুড়ে দুর্নীতির পাহাড়, তদন্তে গতি আনার দাবিতে সিজিও কমপ্লেক্স অভিযান করবে বামেরা
সূত্রের খবর, পিপিপি মডেলে এই স্টিমার পর্যটনের কাজে ব্যবহার হবে। স্টিমারটিকে সেই সংস্থা সাজিয়ে নেবে। এতে খরচ হতে পারে এক কোটির কিছু বেশি টাকা। কলকাতা বন্দর রয়্যালটি বাবদ তাদের কাছ থেকে প্রতি মাসে কিছু টাকা পাবে। তাছাড়া মাসে কয়েকদিন স্টিমারটি ব্যবহার করবে বন্দর কর্তৃপক্ষ। পোর্ট হেরিটেজের প্রোগ্রাম হিসাবে এটি ব্যবহার করা যাবে।
স্বাধীনতার আগে অবিভক্ত বাংলা ও অসমে স্টিমার পরিষেবা চালাত মূলত দুটি সংস্থা। ইন্ডিয়া জেনারেল নেভিগেশন অ্যান্ড রেলওয়ে কোম্পানির জন্য ‘পি এস ভূপাল’ স্টিমারটি তৈরি হয়েছিল। গঙ্গা, পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র প্রভৃতি নদীপথে তাদের স্টিমার চলত। যাত্রী ও পণ্য পরিবহণ করত লঞ্চগুলি। কয়লা পুড়িয়ে উৎপাদিত বাষ্প দিয়ে ইঞ্জিন চালানো হত।
আরও পড়ুন: হাম এবং রুবেলা ভাইরাসের টিকাকরণে উদ্যোগী রাজ্য, ২১-২৪ ডিসেম্বর রাজ্যজুড়ে কর্মসূচি
এই লঞ্চের বিশেষত্ব হল, দু’দিকে চাকার মতো দেখতে প্যাডেল আছে, যা জল কেটে লঞ্চটিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। এখন অবশ্য ডিজেলে চলবে লঞ্চ। লঞ্চের পুরনো ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য দু’দিকেই প্যাডেল থাকবে। অন্যান্য পুরনো ঐতিহ্যও বহাল রাখা হয়েছে সংস্কারের পরেও। কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রায় বছর দুয়েক হল কলকাতার গঙ্গায় হেরিটেজ ট্যুর শুরু করেছে। দেশি ও বিদেশি পর্যটকদের কাছে তা খুবই আকর্ষণীয়। ‘পি এস ভূপাল’ সংস্কার করা হলে সেখানে প্রায় একশো যাত্রী নেওয়া যাবে।পুজোর সময়ে প্যাডেল স্টিমারটি চালু করা হতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।