#কলকাতা: শহরে কতটা নিরাপদ প্রবীণ নাগরিকরা? আদৌ কি নিরাপদ? শহরে একাকীত্ব জীবন কাটছে প্রবীণ নাগরিকদের। গড়িয়াহাটে বৃদ্ধা খুনের ঘটনার পর আতঙ্কে প্রবীণ নাগরিক সমাজ। পুলিশের ভূমিকায় ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে পুলিশের কাছে নিরাপত্তার আর্জি জানান প্রবীণ নাগরিকরা।
গড়িয়াহাটে বৃদ্ধা ঊর্মিলাদেবীকে নৃশংসভাবে খুনের ঘটনায় এলাকার প্রবীণ নাগরিকদের মধ্যে তীব্র আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি পুলিশের ভূমিকা নিয়েও ক্ষোভে ফুঁসছে গড়চা। প্রাক্তন অধ্যাপক শশবিন্দু সরকার বললেন "ছেলে বিদেশে থাকে। আমি আর আমার স্ত্রী একাই থাকি। বাড়িতে থাকতে ভয় লাগছে"। রাতে দু’চোখের পাতা এক করতে পারছেন না তাঁর স্ত্রীও। দিপালী সরকার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকার কথায়, ‘‘আমাদের এলাকায় কোনও পুলিশের টহলদারি নেই ৷ এলাকায় একটি মদের দোকানকে কেন্দ্র করে অসামাজিক লোকজন জড়ো হয় এখানে। পুলিশকে বলা হলেও তারা কার্যত হাত গুটিয়েই বসে রয়েছে।’’
advertisement
ওই এলাকারই আরও এক প্রবীণ নাগরিক সন্ধ্যা সরকার বলেন, ‘‘এই বয়সে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আমরা ঘরে একাই থাকি। পুলিশি টহলদারি কিংবা নিরাপত্তা যদি না পাই তাহলে তো কোনদিন আমাদের ওপরও হামলা হতে পারে।’’ এলাকার একটি মদের দোকান থাকায় সমাজবিরোধীরা আজ এখানে রামরাজত্ব চালাচ্ছে। এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, কোথাও কোনও সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে নজরদারির ব্যবস্থা নেই। অভিযোগ, গড়িয়াহাট থানার পুলিশকে বারবার বলা সত্ত্বেও কেউ তাতে কর্ণপাত করেনি। রাতের বেলা তো বটেই, দিনের বেলাতেও বাড়ির সমস্ত দরজা বন্ধ করে রাখতে তাই বাধ্য হচ্ছেন প্রবীণ নাগরিকরা। কার্যত ঘরবন্দি হয়ে দিন কাটছে এই এলাকার প্রবীণ নাগরিকদের।
কলকাতা পুলিশের "প্রণাম" প্রকল্পের মাধ্যমে শহরের প্রবীণ নাগরিকদের পাশে থাকার বার্তা দিলেও এলাকার অধিকাংশ প্রবীণ নাগরিকরা জানেনই না যে এই ধরনের কোনও প্রকল্প রয়েছে। তাঁদের কথায়, আমরা সেই প্রকল্পের আওতায় আসতে চাই। গড়িয়াহাটের ঘটনার পর থেকে ঘন ঘন ফোনে বাবা-মায়ের খোঁজ নিচ্ছেন কর্মসূত্রে বাইরে থাকা সন্তানরা। পরামর্শ দিচ্ছেন সাবধানে থাকার। প্রসঙ্গত পঞ্চাশ বছর গড়চার ফার্স্ট লেনের বাড়িতেই ভাড়া থাকত ঝুন্ড পরিবার। তিন ছেলের মধ্যে বড় ছেলে আগেই মারা গিয়েছেন। এক ছেলে থাকেন শিলিগুড়িতে। মা ঊর্মিলার কাছেই থাকত ছোট ছেলে। বুধবার আত্মীয়ের বিয়েতে গিয়েছিলেন তিনি। প্রতিবেশীদের দাবি, রাত সাড়ে দশটা নাগাদ বৃদ্ধার জন্য খাবার এসেছিল বড় ছেলের বাড়ি থেকে।
প্রথম থেকেই পুলিশের সন্দেহ ছিল কোনও নিকট আত্মীয় এই ঘটনায় যুক্ত রয়েছে। ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খোদ পুলিশ কমিশনার ঘটনার কিনারা করার ট্যুইট করেন। তবে যেভাবে একের পর এক শহরে প্রবীণ নাগরিকদের টার্গেট করছে দুষ্কৃতীরা, তাতে রীতিমতো চিন্তিত তাঁরা। এলাকায় পুলিশি টহল, সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে নজরদারির পাশাপাশি কার্যত 'অসহায়' হয়ে থাকা প্রবীণদের সুরক্ষায় পুলিশকে পাশে চান উদ্বিগ্ন বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা।