'২৪ এর লোকসভা ভোটের কথা মাথায় রেখে বিজেপিতে সাংগঠনিক নির্বাচন স্থগিত রাখা হল। হিসেব মতো, বর্তমান রাজ্য কমিটির মেয়াদ শেষ হবে ২০২৪- এ। সাংগঠনিক নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে নতুন রাজ্য সভাপতি নির্বাচন করতে হলে, ২০২৩- এর শুরু থেকে সদস্যপদ সংগ্রহ দিয়ে শুরু করে এক বছর ধরে চলত এই নির্বাচন প্রক্রিয়া। কিন্তু, অন্যান্য বারের মতো ২৪- এর লোকসভা ভোটের আগেও সাংগঠনিক নির্বাচনের ঝুঁকি নিতে চায় নি কেন্দ্রীয় বিজেপি।
advertisement
আরও পড়ুন: লক্ষ্য় গারো পাহাড়ের সব আসনে জয়, আজ মেঘালয়ে সভা মমতা- অভিষেকের
দলের এক রাজ্য নেতার মতে, 'একে দলের সাংগঠনিক অবস্থা বেহাল। তার সঙ্গে রয়ছে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব৷ ২১- এর বিধানসভা ভোটের ফল প্রকাশের পরেই আচমকা দিলীপ ঘোষকে রাজ্য সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে সুকান্তকে দায়িত্ব দেওয়া, দলে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ক্ষমতা বৃদ্ধির জেরে দলের একাংশ 'নিষ্ক্রিয়' হয়ে বসে গিয়েছে৷ এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সভাপতি বদল হলে লোকসভা ভোটের আগে দলকে নির্বাচনমুখী করাই অসম্ভব হয়ে যেত। তাই পরিবর্তনের রাস্তায় হাঁটা সম্ভব ছিল না।"
জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে এই সিদ্ধান্তের পর, লোকসভা ভোটের আগে সাংগঠনিক নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে রাজ্য সভাপতি নির্বাচনের আর কোনও সম্ভবনা রইল না বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। তবে, কেন্দ্র মনে করলে 'অ্য়াডহক' হিসাবে যে কোনও সময়ে পরিবর্তন করতেই পারে। কিন্তু, বর্তমান পরিস্থিতিতে সে সম্ভবনা খুবই কম।
আরও পড়ুন: ২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় অন্তত ২৫ টি আসন পাবে বিজেপি, দাবি সুকান্তর
যদিও, অতীতে সুকান্তের মতো মেয়াদ বৃদ্ধির সুযোগ পেয়েছিলেন দিলীপ ঘোষ বা রাহুল সিনহরাও। সেদিক থেকে রাজ্য বিজেপিতে এটা নতুন কিছু নয়। বিজেপিতে সভাপতি পদের মেয়াদ ৩ বছর। দলের সংবিধান অনুসারে এক ব্যক্তি সর্বাধিক একাদিক্রমে ২ বার পদে থাকতে পারেন। কিন্তু, দল ক্ষমতা কেন্দ্রিক রাজনীতিতে যত অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে, দলের নেতৃত্বের পদ আ়ঁকড়ে থাকার চেষ্টাও তত বাড়ছে বলে মনে করছে দলেরই একাংশ। তার জেরেই এই রদবদল মেনে নিতে না পেরে শুরু হয়ে যায় দলের অন্দরে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব।
নিন্দুকরা বলেন, রাজ্য বিজেপিতে এখন নাকি তিনটে গোষ্ঠী। গত প্রায় দেড় বছর ধরে দলের মধ্যে নেতৃত্বের এই টানাপোড়েনের প্রভাব পড়েছে প্রতিদিন দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে। রাজ্য সভাপতির বিশ্বস্ত রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তীর অপসারণের দাবিতে পোস্টার পড়েছে কলকাতা সহ দক্ষ্মিণবঙ্গ জুড়ে। অমিতাভ - সুকান্ত জুটির অপসারণের দাবিতে দিল্লিতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে গুচ্ছ গুচ্ছ অভিযোগ নিয়ে দরবার করেছে বিক্ষুব্ধ রাজ্য নেতারা। ক্ষোভ,বিক্ষোভ সরিয়ে রেখে ঐক্যবদ্ধ ভাবে সবাইকে কাজ করার জন্য কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বারবার নির্দেশ দিলেও, কাজের কাজ কিছু হয়নি।
এই পরিস্থিতিতে বিক্ষুব্ধদের বার্তা দিয়ে মালদহে এক সাংগঠনিক বৈঠকে কেন্দ্রীয় মুখ্য পর্যবেক্ষক সুনীল বনশাল স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন, পঞ্চায়েত ভোটের আগে সংগঠনে কোনও রদবদল হবে না। তার পরেও লোকসভা ভোটকে মাথায় রেখে রাজ্যে রদবদলের আশায় বুক বেঁধেছিলেন দলের একাংশ। কিন্তু গতকাল, দিল্লিতে কর্মসমিতির বৈঠকে বঙ্গ বিজেপিকে প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসার পরেই বিক্ষুব্ধরা বুঝে যান রাজ্যের সংগঠনে আপাতত পরিবর্তনের সম্ভবনা নেই। আর,তার ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই কেন্দ্রের এই ঘোষণা। রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের উপরেই আস্থার কথা স্পষ্ট করে দিলেন শাহ, নাড্ডারা।
যদিও, সূত্রের মতে, কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের পরেও হাল ছাড়তে নারাজ বঙ্গ বিজেপি-র বিক্ষুব্ধ অংশ। আজ, যখন দক্ষ্মিণ ২৪ পরগনার বাসন্তীতে মিঠুনকে নিয়ে প্রতিবাদ মিছিল ও সভা করবেন সুকান্ত, তখন বসিরহাটের টাকিতে পিকনিকের আড্ডাকে সামনে রেখে নাকি অন্য কোনও আলোচনায় ব্যস্ত থাকবে রাজ্য় বিজেপি-রই অন্য় একটি অংশ! ্